ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অনলাইনে কেনাকাটা কতটা নিরাপদ?

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ১২ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
অনলাইনে কেনাকাটা কতটা নিরাপদ?

করোনাভাইরাসের কারণে এবার রাজধানীসহ দেশের অনেক স্থানে অধিকাংশ মার্কেট বন্ধ আছে। যেসব বিপণিবিতান খোলা আছে সেখানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মানায় রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। ফলে এ বছর ঈদের কেনাকাটায় অনলাইন মার্কেটপ্লেসকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শপিংমলে অনেক ভিড় হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অনলাইনে কেনাকাটা করা উত্তম।

তবে প্রশ্ন উঠছে, সঠিক পণ্য পাওয়া, ভাইরাস ঝুঁকিবিহীন ডেলিভারি ও কেনাকাটায় অনলাইন লেনদেন কতটা নিরাপদ?

ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বীকৃত অনলাইন মার্কেটপ্লেসসহ ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন গেটওয়ের মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্টসহ ক্যাশ অন ডেলিভারিতে পণ্য বিক্রি করছে। ফলে লেনদেনের ক্ষেত্রে ঝামেলা হওয়ার সুযোগ কম।

তবে, মার্কেটপ্লেসে ভালো পণ্য দেখিয়ে খারাপ পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া, পণ্যের ডেলিভারিম্যান করোনা সংক্রমিত কি না তা নিশ্চিত হতে হবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে দারাজ, ই-ভ্যালির মতো বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস এক ধরনের শপিংমল। এসব মার্কেটপ্লেস তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করে। শপিংমলের মতো এখানে আলাদা আলাদা বিক্রেতা রয়েছে। তারা তাদের পণ্য প্রদর্শন করে। সেখান থেকে ক্রেতারা কিনলে মার্কেটপ্লেস ডেলিভারির ব্যবস্থা করে দেয়। অনেক ব্যবসায়ী (সেলার) আছেন যারা ভালো মানের পণ্য কম দামে প্রদর্শন করে নিম্ন মানের পণ্য ক্রেতাদের পৌঁছে দেয়। এক্ষেত্রে পণ্যের রিভিউ দেখে পণ্য কেনার পরামর্শ দেন তারা।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) বলছে, ঈদে অর্ডার হওয়া পণ্যগুলো যেন ভাইরাসঝুঁকি ছাড়া ডেলিভারি হয় সেজন্য তারা একটি ব্রুশিয়ার তৈরি করেছেন। ওই ব্রুশিয়ার সব ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করা হয়েছে। এ অনুযায়ী যেন ডেলিভারিম্যানরা কাজ করেন তা বলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ওয়্যারহাউজে কর্মরতদের সুরক্ষা ও ডেলিভারিম্যানদের মাস্ক, গ্লাভস, চশমাসহ ব্যক্তিগত সব ধরনের সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে।

এদিকে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, কোথাও ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেলে তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন। আর পু্লিশ বলছে, অনলাইনে প্রতারণা করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দারাজ ডটকম প্লাটফর্মে সেলার হিসেবে আছে এনেক্স ক্লথিংয়ের মালিক জুবায়ের আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মার্কেটপ্লেসে যেকোনো প্রোডাক্ট আপলোড করা যায়। ক্রেতা পছন্দ করলে ওই প্রতিষ্ঠানের প্যাকেজিং প্রোডাক্টের মাধ্যমে প্যাকেজ করে জমা দিতে হয়। এরপর তারা আর খুলে দেখে না। সরাসরি পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছে যায়।’

তিনি বলেন, ‘এ সুযোগে অনেকে নিম্নমানের পণ্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেন। অনেক পণ্যে ওয়ারেন্টি থাকে না। অনেক পণ্য থাকে নো রিটার্ন। এসব শর্ত দেখার পরও অনেকে সুন্দর ছবি ও দাম কম দেখে কিনেন। পরে ফেরতও দিতে পারেন না। এজন্য কেনার আগে অবশ্যই রিভিউগুলো পড়ে কিনতে হবে।’

ফেসবুকে পেজের মাধ্যমে কাপড়ের ব্যবসা করেন উম্মে হাবিবা তাহমিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা লাইভে এসে এবং প্রোডাক্টের ছবি অনলাইনে ডিস্প্লে করে বিক্রি করি। আমাদের ক্রেতা মূলত ফিক্সড। তবে অনেকে ধোঁকা দিয়ে পণ্য বিক্রি করে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাস্টমাররা যেহেতু সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন, এজন্য অনেকে প্রোডাক্টের দাম বিকাশ/রকেটের মাধ্যমে আগে দিয়ে দেন। তবে বেশিরভাগ ক্রেতাই ক্যাশ অন ডেলিভারি শর্তে পণ্য নেন। তবে ফেসবুকে অনেকে বিদেশি পণ্যের কথা বলে ডেলিভারির টাকা অগ্রিম টাকা চেয়ে নেয়। পরে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।’

তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ রুহুল আবেদিন বলেন, ‘অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড নাম্বার দেওয়ার ক্ষেত্রে দেখতে হবে ট্রাস্টেড গেটওয়ে কি না। তা না হলে কার্ড হ্যাক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে দেশে বড় ই-কমার্স সাইটগুলো ট্রাস্টেড গেটওয়েগুলোই ব্যবহার করে।’

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হলে অধিদপ্তরে অভিযোগ করা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতারণা প্রমাণিত হলে আর্থিক জরিমানা করা হবে।’

সিআইডির সাইবার পুলিশ ব্যুরোর অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক শাহ আলম বলেন, ‘অনলাইনে প্রতারণা করা হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবাদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ‘অনলাইনে যেন মানসম্পন্ন পণ্য বিক্রি করা হয়, সেজন্য সবাইকে বলা আছে। ডেলিভারিম্যানরা যেন পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করেন সেটি নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে। প্রয়োজনে জিরো কন্টাক্ট ডেলিভারির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’ 

এদিকে, দারাজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের ৩১ হাজার ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা রয়েছেন। করোনা সংকটকালে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের জন্য দেড় কোটি টাকার ভর্তুকি দেবে প্রতিষ্ঠানটি। এটিকে তারা মৈত্রী প্রোগ্রাম বলে অবহিত করছে। 

ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘ক্রেতাদের ভালো মানের পণ্য দিতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। বিক্রেতারা যেন বেশি দাম না নেন এবং সঠিক মূল্যে ভালো পণ্য দেন সেজন্য তারা ১০ শতাংশ বোনাস ঘোষণা করেছেন।’ 

 

ঢাকা/নূর/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়