ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

চলছে না আন্তঃজেলা বাস, তবু ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৪, ১০ মে ২০২১   আপডেট: ০১:৪৮, ১১ মে ২০২১
চলছে না আন্তঃজেলা বাস, তবু ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় ঘরমুখী মানুষের ভিড়

আজ ২৭ রমজান। দুই থেকে তিন দিন পর ঈদ। করোনার কারণে দেশব্যাপী চলছে লকডাউন। শহরে গণপরিবহন চললেও আন্তঃজেলা বাস বন্ধ আছে ৫ এপ্রিল থেকে। তারপরও সরকারি নির্দেশ অমান্য করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষজন ছুটছে গ্রামের পথে। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার জন্য। রাজধানী ছেড়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন উপায়ে যাচ্ছে বাড়িতে।

ইতোমধ্যে বাস-ট্রেনের পাশাপাশি লঞ্চ-স্টিমার, স্পিডবোট, ট্রলার চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। শুধু বিশেষ প্রয়োজনে রাতের বেলা পণ্যবাহী পরিবহন চলাচলের জন্য ফেরি চলাচল অব্যাহত আছে। সেই ফেরিতে করেই পার হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। গ্রামমুখী মানুষের চাপ সামলানো যাচ্ছে না। পরিস্থিতি মোকাবিলায় গতকাল মাওয়া এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি।

আজ (১০ মে) সকালে রাজধানীর মহাখালী, কমলাপুর, টিটি পাড়া, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে সরাসরি দূরপাল্লার বাস না চললেও বিভিন্ন উপায়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য মানুষজন বাস স্ট্যান্ডগুলোতে ভিড় করছেন।

মহাখালী: এই বাস স্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, সিলেট, পাবনা এবং বগুড়াসহ কয়েকটি জেলার বাস চলে। কিন্তু লকডাউনে আন্তঃজেলা বাস বন্ধ থাকায় এই টার্মিনাল থেকে কোনো বাসই ছাড়ছে না। পুলিশের কঠোর নজরদারি চলছে। তারপরও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে উল্লিখিত জেলাগুলোর যাত্রীরা এ বাস স্ট‌্যান্ডে ভিড় করছেন। বাস না পেয়ে প্রাইভেট কার বা মাইক্রো বাসে করে গন্তব‌্যে যাচ্ছেন।

সরকারি নির্দেশ না পেলে এই টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ছাড়বে না বলে জানিয়েছেন এনা পরিবহনের শ্রমিক নজরুল ইসলাম।

কমলাপুর: যাত্রীবাহী রেল বন্ধ আছে অনেকদিন থেকে। কেবল মালবাহী রেল চলে। তাও নির্দিষ্ট জেলায়, নির্দিষ্ট সময়ে। সাধারণ কোনো যাত্রীর কমলাপুর রেল স্টেশনে ঢোকার কোনো সুযোগ নেই। সার্বক্ষণিক পাহারায় আছে রেল পুলিশের দল। খা খা করছে টিকিট কাউন্টারগুলো। কয়েকজন রেল পুলিশ ছাড়া পুরো কমলাপুর স্টেশন এলাকায় কোনো জনমানবের অস্তিত্ব নেই।

টিটি পাড়া ও সায়েদাবাদ: দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাস চলে এ এলাকা থেকে। সারি সারি বাস কাউন্টারের সবগুলোই বন্ধ। তবে যাত্রীর অভাব নেই। টহল দিচ্ছে পুলিশ আর র‌্যাবের গাড়ি। এ কারণে কোনো আন্তঃজেলা বাস এখান থেকে ছাড়তে পারছে না। এখান থেকেও হাজার হাজার যাত্রী অনেক বেশি টাকায় গাড়ি ভাড়া করে বাড়ির পথ ধরছেন। এদেরকে বিভিন্ন পরিবহন ঠিক করে দিচ্ছেন এই এলাকার পরিবহন শ্রমিক রিয়াজ, করিম , আলম, সালামসহ কয়েকজন। এতে যাত্রী প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে পান বলে জানান তারা। পরিবহন শ্রমিকের সহযোগিতা নিয়ে কেউ মাইক্রো বাসে, কেউবা প্রাইভেট কারে, কেই আবার সিএনজি অটোরিকশায় করে ভেঙে ভেঙে নিজেদের গন্তব্যে যাচ্ছেন। সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করছেন না এসব রুটের যাত্রীরা। যেভাবেই হোক গন্তব্যে যাওয়াই এদের একমাত্র লক্ষ‌্য।

যাত্রাবাড়ী: যাত্রবাড়ী চৌরাস্তাতেও হাজারো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। সবাই বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য গাড়ির অপেক্ষায়। এখান থেকে বিভিন্ন পরিবহনে, ভেঙে ভেঙে কেউ যাচ্ছেন কুমিল্লা, কেউবা চাঁদপুরে। আবার কেউ কেউ নরসিংদীতে যাচ্ছেন। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকা-মাওয়া রুটের সব রকমের পরিবহন সরকারিভাবে বন্ধ থাকলেও মানুষের যাওয়া বন্ধ নেই। মোটরসাইকেলে চড়ে কেউ কেউ যাচ্ছেন মাওয়া ঘাট পর্যন্ত। এর জন্য তাদের গুনতে হচ্ছে মাথাপিছু ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। সিএনজি অটোরিকশায় নিচ্ছে জনপ্রতি ৪০০ টাকা করে। একটা অটোরিকশায় যাত্রী নিচ্ছে পাঁচজন করে। এরা সরাসরি যেতে পারছে না। মুন্সীগঞ্জ হয়ে ভেতরের রাস্তা ধরে মাওয়া পৌঁছে দিচ্ছে যাত্রীদের। যাত্রী বোঝাই করতে গিয়ে পুলিশের মামলাও খাচ্ছেন চালকরা। তারপরও যাত্রী আর অটোচালকদের সামলাতে সকাল থেকে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানালেন সার্জেন্ট সুশান্ত। সকাল থেকে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

ঢাকা/মেসবাহ/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়