ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

রাহুল তেওয়াতিয়া, নিজের অস্তিত্বের জানান দেওয়া এক ক্রিকেটার

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৪, ১৯ অক্টোবর ২০২০  
রাহুল তেওয়াতিয়া, নিজের অস্তিত্বের জানান দেওয়া এক ক্রিকেটার

দুর্দান্ত কোনো ঝড়ো ইনিংসে হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে যাওয়া ম্যাচ নিজেদের করে নেয়া কিংবা বল হাতে কাঙ্খিত ব্রেক থ্রু এনে দেয়ার পরেও রাহুল তেওয়াতিয়াকে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে শুনতে হয়, ‘মাঝে মাঝে অলৌকিক কিছু ঘটতেই পারে’ কিংবা ‘এটা কেবলই একটা অপ্রত্যাশিত সাফল্য ছাড়া কিছুই নয়’। সাত বছর মাঠের ক্রিকেটে প্রবল পরিশ্রম দেয়া সত্ত্বেও ভালো কিছুর উপহার বলতে তেওয়াতিয়ার ভাগ্যে আর কিছুই জোটে না। তবু নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদে, নিজের অস্তিত্ব সবার মাঝে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় দমেন না এই অদ্ভুত অলরাউন্ডার।

অদ্ভুত বলায় চোখ কপালে উঠলেও, আদৌতে যেন ঠিক তাই। প্রথাগত সুন্দর বোলিং বা ব্যাটিং করে কারো নজর কাড়ার ক্ষমতা তার নেই। লেগ স্পিনের মতো শিল্প চর্চা করেন নিজের ভঙ্গিতে। মাঠ খুব বেশি অনুকূলে না থাকলে বড় টার্ন তার কপালে জোটে না। ঠিক ব্যাটিংয়েও আকর্ষণীয় নন। বিশাল ছক্কা হাঁকানোর ক্ষমতা থাকলেও, দর্শক মন জয় করা হয়ে ওঠে না তেওয়াতিয়ার। তবুও মাঠে সর্বস্ব উজাড় করে নিজের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠায় মগ্ন এক সাধক রাহুল তেওয়াতিয়া।

হরিয়ানা রাজ্যের ফরিদাবাদ শহরের সিহি গ্রামে ২০ মে ১৯৯৩ সালে জন্ম রাহুল তেওয়াতিয়ার। আইনজীবী বাবার কল্যাণে স্বচ্ছলতার মধ্য দিয়ে বড় হয়ে ওঠা এই ক্রিকেটারের। পড়াশুনায় মধ্যম মানের তেওয়াতিয়ার ইচ্ছে ছিল বড় মঞ্চে নিজেকে দেখার। আর তাই অনেকটাই পরিবারের অমতে ক্রিকেটে আসা। তাও ২০ বছর বয়সে। উপমহাদেশে এই বয়সে অনেকে জাতীয় দলেরই তারকা হয়ে ওঠেন।

তেওয়াতিয়ার সবচেয়ে বড় গুণ হাল না ছাড়ার মানসিকতা। আর তাই কেবল ‘বড় শট খেলতে পারে’ এই তকমা নিয়েই ২০১৩ সালে রাজ্য দল হরিয়ানাতে অভিষেক। অভিষেকের মতোই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কখনোই নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। সেটার বড় প্রমাণ সাত বছরে মাত্র ৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে সুযোগ পাওয়া।

তবে ভাগ্য খুলেছে ওই হার্ড হিটিং ক্যাপাবিলিটি। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক। তাও আইপিএলের মতো আসরে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে। যদিও মাত্র ১০ লাখ রুপি ছিল তার মূল্য। তবে নিজেকে চেনানোর মঞ্চ পাওয়াতেই বেশি উচ্ছ্বসিত ছিলেন তেওয়াতিয়া। সেই আসরে সুযোগ পেয়েছেন কেবল ৩ ম্যাচে। পারফরম্যান্সও ছিল হতাশাজনক। ১৬ রানের সঙ্গে নিতে পেরেছেন মাত্র ৩ উইকেট। পরের বছরেও রাজস্থানের বেঞ্চ গরম করার কাজ করে গেছেন এই অলরাউন্ডার।

২০১৭ সালে এসে প্রথমবারের মতো যোগ দিলেন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব শিবিরে। মূল্য ১০ লাখ থেকে ২৫ লাখ রুপিতে পৌঁছায় তবে মাঠে নিজেকে প্রমাণের অপেক্ষার প্রহর যেন ফুরোয় না। তিন ম্যাচ মাঠে নামলেও সেবার করেন ১৯ রান আর শিকার করেন ৩ উইকেট। সেই বছর ঘরোয়া লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে কিছুটা প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হোন। আর তাতেই ২০১৮ সালে এক লাফে তার মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি রুপিতে।

দিল্লি ক্যাপিটালসের কোচ রিকি পন্টিংয়ের অধীনে ৮ ম্যাচে মাঠেও নামা হয় তেওয়াতিয়ার। তবে ব্যাটে-বলে মেলে না তার। জীবন সংগ্রামে তেওয়াতিয়ার জানা হয়ে যায় তারকা হয়ে ওঠা হবে না তার। বয়সও যে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবুও নিজের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় নিজেকে টিকিয়ে রাখেন। ব্যাটে-বলে না পারলেও ফিল্ডিংয়ে আইপিএল এক ম্যাচে উইকেটরক্ষক ব্যতীত সর্বোচ্চ ৪টি ক্যাচ নেওয়ার রেকর্ড গড়েন।

পন্টিংয়ের সেই দলে ড্রেসিংরুমে ম্যাচে ভালো ক্রিকেট খেলা ক্রিকেটারদের নাম নেওয়া হতো। চার ক্যাচ নেওয়া তেওয়াতিয়া আশা করেছিলেন, সেই ম্যাচ শেষে তার নাম নিবেন কোচ পন্টিং। কিন্তু সেটি না হওয়াতে নিজেই গিয়ে কোচের কাছে নিজের চার ক্যাচের কীর্তির কথা তুলে ধরেন। যা নিয়ে পরবর্তীতে হাসাহাসিও হয় ড্রেসিংরুমে।

তবে দমেন না রাহুল তেওয়াতিয়া। নিজেকে পুনরায় আবিষ্কার করেন এই আইপিএলের মঞ্চে। নিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি দল রাজস্থান শিবিরে ফিরে। চলতি আইপিএলে এসে বল হাতে উইকেটের পাশাপাশি ব্যাট হাতে রানের দেখাও পেয়েছেন তেওয়াতিয়া। প্রায় দেড়শ স্ট্রাইক রেটে ৪৫ গড়ে করেছেন ২২২ রান উইকেট নিয়েছেন ৬টি।

খুবই মধ্যম মানের অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স হয়ত। তবে রাজস্থানের ম্যাচে এর প্রভাব ছিল অসামান্য। বিশেষ করে পাঞ্জাবের বিপক্ষে শেলডন কটরেলকে গুড়িয়ে আইপিএল ইতিহাসে গেইলের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ওভারে পাঁচ ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জেতানো ইনিংস, কেউই ভুলতে পারার কথা নয়। শুধু ব্যাট-বল নয় মাঠের ফিল্ডিংয়েও তেওয়াতিয়া নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন। অবশেষে ভারতবাসীর কাছে তেওয়াতিয়া চেনা হয়ে উঠেছেন। নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে পেরেছেন।

শেষ করি, এই অলরাউন্ডারের একটি কথা দিয়ে। পন্টিংয়ের ড্রেসিংরুমে হাসাহাসির শিকার হওয়া রাহুল তেওয়াতিয়া বলেছেন, ‘তুমি যে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য তার জন্য সংগ্রাম করে যাও।’ সেই সংগ্রাম তেওয়াতিয়া করেছেন বলেই, ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তিরাও এই অদ্ভুত অলরাউন্ডারের প্রশংসা করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না।

ঢাকা/কামরুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ