ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

টি-টোয়েন্টিতে তামিমকে কতটুকু প্রয়োজন?

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৪, ৯ জুন ২০২২  
টি-টোয়েন্টিতে তামিমকে কতটুকু প্রয়োজন?

২০২০ সালের ৯ মার্চ, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকায় বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। মাহমুদউল্লাহর দল হেসেখেলে হারিয়ে দেয় আফ্রিকান প্রতিপক্ষকে। ৪১ রান করে তামিম ইকবাল দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। 

পরের ম্যাচে তামিম চোটের কারণে ছিটকে যান। একাদশে সুযোগ হয় নাঈম শেখের, এর আগে যার অভিষেক হয়েছিল ওপেনিংয়ে। কিন্তু তামিম ফেরায় তিনি জায়গা হারান। তবে অভিজ্ঞ বাঁহাতি ওপেনারের চোটে সুযোগ পেয়ে নাঈম আস্থা অর্জন করেন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। 

এদিকে তামিম এই ফরম্যাট থেকে আস্তে আস্তে দূরে চলে যেতে থাকেন। পরের বছর যখন বিশ্বকাপ, তখন থেকে আলোচনা শুরু হতে থাকে তিনি কি বিশ্বকাপ খেলবেন? বিশেষ করে বিশ্বকাপের আগে বাঁহাতি ওপেনার যখন ১৬ টি-টোয়েন্টি খেলেননি তখন জোর গুঞ্জন ছড়ায়, এই ফরম্যাট থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন তিনি! 

কিন্তু বিসিবির আগ্রহে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না তামিম। তাকে ছাড়াই আরেকটি বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশ। ফলাফল এবারও এক, মূল পর্বে কোনো জয় নেই।
এজন্য তামিমের উপস্থিতি-অনুপস্থিতি নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়নি। বরং চলতি বছর যখন আরেকটি বিশ্বকাপ রয়েছে, তখন আলোচনা- তামিম কি এবারও খেলবেন নাকি নিজেকে আড়াল করে নেবেন! গত নভেম্বরে তামিম বিপিএল খেলার সময় ৬ মাসের সেচ্ছ্বা বিরতিতে যান। তখনই বোঝা যাচ্ছিল এই ফরম্যাট নিয়ে তার আগ্রহ নেই। 

কিন্তু বিসিবি সভাপতি যখন বলেন, ‘তামিমকে আমাদের এই ফরম্যাটে প্রয়োজন’, তখন তামিম সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। কিন্তু এ ফরম্যাটে কি তামিমের প্রয়োজন আছে?  

২০০৭ সাল থেকে জাতীয় দলের হয়ে খেলা এই ওপেনার নিজের পজিশন নিয়ে খুব একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হননি। নিজের জায়গা পাকাপাকি রেখেই পারফর্ম করে গেছেন। কখনও সফল হয়েছেন, কখনও ব্যর্থ। ঠিক তার পজিশনে যারা এসেছেন তারাও কখনও সফল হয়েছেন, কখনও বা ব্যর্থ। 

তামিমের অনুপস্থিতিতে ৩০ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এ সময়ে ওপেনিংয়ে বেশিরভাগ সময়ই খেলেছেন লিটন ও নাঈম। ১৭ ম্যাচে ২৩.২৩ গড়ে ৩৯৫ রান করেছেন দুজন। স্ট্রাইক রেট খুবই বাজে, ৬.৩৮। লম্বা এ সময়ে অন্য দলের ওপেনাররা যেখানে দ্রুত রান তুলেছে, সেখানে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে। কমপক্ষে ১৫ ম্যাচে ওপেনিং করা এমন জুটির স্ট্রাইক রেটের তালিকাতে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে নিচে। গড় রানে কারও ধারেকাছেও নেই। 

অথচ ওপেনারদের কাজ পাওয়ার প্লে’র সুবিধা কাজে লাগিয়ে নতুন বলে দ্রুত রান তোলা। লিটন তুলনামূলক আগ্রাসন দেখালেও নাঈমের ব্যাট এগোয় মন্থর গতিতে। তাতে পরের ব্যাটসম্যানদের ওপর বাড়ে চাপ। 

এছাড়া নানা সময়ে সৌম্য সরকার, সাইফ হাসান, মুনিম শাহরিয়ার, মেহেদী হাসান, সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত ওপেনিংয়ে নেমেছেন। কিন্তু তারা কেউই পারেননি নিজেকে মেলে ধরতে। 

বাংলাদেশের সবশেষ খেলা দুই টি-টোয়েন্টিতে নেমেছিলেন মুনিম শাহরিয়ার। বিপিএলে দ্যুতি ছড়িয়ে ডানহাতি ওপেনার জায়গা করে নিয়েছেন জাতীয় দলে। তার সঙ্গে ওপেনিংয়ে নেমে ভালো করতে না পারায় নাঈম শেখ জায়গা হারিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে তিন টি-টোয়েন্টিতে মুনিমের সঙ্গী হবেন লিটন। 

কিন্তু ঘুরে ফিরে উঠছে এক আলোচনা, তামিমের এই ফরম্যাটে প্রয়োজনীয়তা কি আছে? এ ফরম্যাটে ৭৪ ম্যাচে ২৪.৬৫ গড়ে ১৭০১ রান করেছেন তিনি। ব্যাট হাতে আগের মতো আগ্রাসন নেই। ক্রিজে সময় নিয়ে ব্যাটিং করেন। তাতে দলের রান বাড়ছে। তামিম নিয়মিতও রান করছেন। অভিজ্ঞতার বিচারে তার বিকল্প কেউ নেই। কিন্তু তাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ না থাকায় ঘুরে ফিরে তার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে টিম ম্যানেজমেন্ট। তাইতো তার খেলার সম্ভাবনা উড়ানো যাচ্ছে না কোনোভাবেই। 

অস্ট্রেলিয়াতে নিশ্চিতভাবেই বিশ্বকাপ হবে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে। সেখানে শুরুতে পেসারদের দাপট তো থাকবে। এমন কন্ডিশনে অভিজ্ঞতা বিরাট ভূমিকা রাখবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ফরম্যাটে খেলা নিয়ে তামিম, ক্রিকেট বোর্ড ও টিম ম্যানেজমেন্টের দূরত্ব, বোঝাপড়ার ঝামেলা বিরাজমান। আরেকটি বড় আসরের আগে কি কেউ সম্প্রীতির পতাকা উড়াবেন? যদি উড়ান, আখেরে লাভটা দেশের ক্রিকেটই পাবে।

ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়