ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

অনুশীলনেই ‘ভবিষ্যৎ’ দেখে ফেললেন ডমিঙ্গো?

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৭, ২০ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ২২:১০, ২০ আগস্ট ২০২২
অনুশীলনেই ‘ভবিষ্যৎ’ দেখে ফেললেন ডমিঙ্গো?

রাসেল ডমিঙ্গোর বিদায়ঘণ্টা বাজছে, নাকি বিসিবি এমন পরিবেশ তৈরি করছে, যেন ডমিঙ্গো নিজেই ছেড়ে দিতে বাধ্য হন? প্রশ্নের উত্তরটা জানা যাবে কিছুদিনের মধ্যে। তবে, যে পক্ষই সম্পর্কচ্ছেদ করুক, আর্থিক ক্ষতি হবে না কারোই। 

বিসিবি এবারই প্রথম নয়, এর আগেও এমন মঞ্চ তৈরি করেছিল। মনে পড়ে বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের বিদায়ের কথা? ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে দলের ভরাডুবির পর ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষ কর্তারা তার চুক্তি বাড়ানো হবে কি না, তা নিয়ে কোনো কথা বলেননি। বিশ্বকাপ শেষে দলের হোটেল থেকে ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তির নিশ্চুপ প্রস্থানের সাক্ষী হয়েছিলেন কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী। সঙ্গে নরম-সরম কোচ স্টিভ রোডসের অনাকাঙ্ক্ষিত বিদায়। ৩০ ওয়ানডেতে ১৭ জয় এবং আট টেস্টের তিনটিতে জয় তার আমলে। অথচ, তাকে বিদায় দেওয়া হয় কঠোর কোচ নন বলে। বিশ্বকাপ শেষে দলের সঙ্গে দেশে উড়িয়ে এনে তাকে ধরিয়ে দেওয়া হয় অব্যাহতিপত্র।  

ডমিঙ্গোকে নিয়ে চর্চা হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। তাকে ‘ছাঁটাই’ করে খোলনলচে পাল্টে ফেলার কথা বলা হচ্ছে। এজন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ভারতীয় কোচ শ্রীধরন শ্রীরামকে। কাগজে-কলমে যার পদবি ‘টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট’ আর মৌখিকভাবে ‘হেড কোচ’, যা আড়ালেই থাকবে। মোদ্দাকথা, ডমিঙ্গোকে ছাঁটাইয়ের জন্যই এমন পরিকল্পনা বিসিবির।

গত ৩০ নভেম্বর থেকে বিসিবির সঙ্গে সিরিজ বাই সিরিজ চুক্তিতে কাজ করছেন ডমিঙ্গো। প্রতি সিরিজে ১৭ হাজার ডলার করে বেতন পাচ্ছেন। আগের চুক্তিতে ডমিঙ্গোকে ছাঁটাই করলে বিসিবিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হতো। নতুন চুক্তি অনুযায়ী বিসিবিকে কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে না। ফলে, যেকোনো সময় বিসিবি চাইলে ডমিঙ্গোকে বাদ দিতে পারে।

জাতীয় দলের সাবেক কোচ জেমি সিডন্সকে এবার বিসিবি ফিরিয়েছে ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে। কিন্তু, তার যোগদানের পর হুট করেই দায়িত্ব ছাড়েন অ্যাশওয়েল প্রিন্স। পারিবারিক কারণ বলা হলেও আসল কারণটা অজানা। তার জায়গায় সিডন্স দলের সঙ্গী হয়ে যান। তাতে বিসিবিকে ডেভেলপমেন্টের উদ্দেশ্য থেকে সরে আসতে হয়। তবে, বিসিবি এখন তাকেও জাতীয় দল থেকে সরিয়ে ভবিষ্যতের ব্যাটসম্যান গড়ে তোলার কাজে লাগাতে চায়। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচ নিজেও এ কাজ করতেই বেশি আগ্রহী। এক বছরের মধ্যে পজিশন ধরে ধরে ব্যাটসম্যান তৈরি করার চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ান এই কোচ।

গতকাল বাংলাদেশে ফিরে আজ দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ডমিঙ্গো। তবে, চিরচেনা সেই মিরপুর মাঠ আজ বড্ড অচেনা। অনুশীলনের বেশিরভাগ সময় একাকী সময় কাটাতে দেখা গেছে তাকে। কখনো ক্রিকেট ব্যাট হাতে শ্যাডো করেছেন, কখনো অলক্ষে ফুটবলে শট নিয়েছেন। মাঠের বাইরে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো বড্ড ভাবাচ্ছে তাকে, স্পষ্ট বোঝা গেছে অবয়বে। নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, হাবিবুল বাশার সুমন ও টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ আগামীকালের ম্যাচ সিনারিও অনুশীলনের জন্য ২২ গজের উইকেট পর্যবেক্ষণ করলেও সেখানে ছিলেন না ডমিঙ্গো। দল বেশিরভাগ সময় আজ ফিল্ডিং অনুশীলন করেছে। তাই, ডমিঙ্গোর কাজও ছিল কম। তবে, তাকে ইনডোরে মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে খোশগল্পে মেতে উঠতে দেখা গেছে। জানা গেছে, শিষ্যদের সঙ্গে বাড়তি কিছু নিয়ে আলোচনাও করেননি ডমিঙ্গো। বরং, এশিয়া কাপ নিয়ে নানা আলোচনায় যুক্ত ছিলেন। কিন্তু, নিজে থেকে কোনো ইনপুট দেননি।

ডমিঙ্গোর যে বিদায়ঘণ্টা বাজছে এবং টি-টোয়েন্টি থেকে তাকে সরিয়ে দিতে চাইছে বিসিবি, তা বোঝা গেছে টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদের কণ্ঠে। তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেক কোচের দর্শন আলাদা। ওর (ডমিঙ্গো) দর্শন হয়তো (টি-টোয়েন্টিতে) আমাদের ক্রিকেট ব্র্যান্ডের সঙ্গে মানাচ্ছে না।’ এজন্য টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট।

শ্রীধরন শ্রীরামের কাছ থেকে তার চাওয়া, ‘শ্রীরাম কি পরিবর্তন আনতে পারে? মাইন্ডসেট। আমরা আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার কথা বলি, ফিয়ারলেস ক্রিকেট খেলার কথা বলি। এই বীজটা শুধু পাঁচ-ছয় জনের মধ্যেই গেলে হবে না। পুরো দলের ভেতরেই এই ব্যাপারটা থাকতে হবে। বিশ্বকাপ পর্যন্ত আমরা অন্য কোনো সংস্করণে খেলব না। তাই, এটাই সেরা সময় এই বীজটা দেওয়ার। যেন ওই স্বাধীনতা নিয়ে যে ভীতিহীন ক্রিকেট খেলার কথা আমরা বলছি, সেটা সবাই খেলতে পারে।’

ডমিঙ্গোর বিদায়ে বড় কিছু হবে না, তা খালেদ মাহমুদ আরেকটা প্রশ্নের জবাবেও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ক্রিকেটাররা পেশাদার। কোচরাও পেশাদার। কেউ চলে গেলে কারও জন্য কেউ বসে থাকবে না।’

ইয়াসিন/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়