জয়ের সঙ্গে শঙ্কাও!
ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
যে ভয়ের শঙ্কা হচ্ছিল তা-ই কী হতে যাচ্ছে? ২০২১ সালের দুঃসহ স্মৃতিই কী ফিরতে যাচ্ছে? যেখানে বোলাররা ছিলেন সপ্তম স্বর্গে। আর ব্যাটসম্যানরা খসে পড়া তারা?
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট কেমন হবে তা নিয়ে উৎকণ্ঠার শেষ ছিল না। গতকাল ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে আসার আগে বাংলাদেশের অধিনায়ক লিটন দাস উইকেট দেখছিলেন লম্বা সময় ধরে। কিউরেটর গামিনী ডি সিলভার শরণাপন্নও হয়েছিলেন।
উইকেট দেখে এসে লিটনের সহজ স্বীকারোক্তি ছিল এমন, ‘‘দেখে ভালো মনে হয়েছে। একটা ইভেন গেম হবে।’’ কিন্তু রবিবারের পাকিস্তান-বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টির স্কোরবোর্ড দেখলে ‘ইভেন গেমের’ সংজ্ঞা নিশ্চিতভাবে পাল্টে ফেলতে হবে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তান পূর্ণ ২০ ওভারও খেলতে পারল না। সবকটি উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে রান কেবল ১১০। যা পাকিস্তানের এই মাঠে সর্বনিম্ন রান। ওই রান তাড়া করে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে ২৭ বল হাতে রেখে, ৭ উইকেট। তাতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ।
কিন্তু সহজ জয়ের পর শঙ্কাও দেখা দিচ্ছে। ২০২১ বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে ৫টি করে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ। স্বাগতিকরা দাপটের সঙ্গে দুটি সিরিজই জিতেছে। কিন্তু সেই সিরিজ এখনো ব্যাটসম্যানদের জন্য বিভীষিকাময়। এমন উইকেটে বিসিবি ১০ টি-টোয়েন্টি খেলেছিল যার মূল্যায়ন সাকিব আল হাসান করেছিলেন এভাবে, ‘‘এমন উইকেটে খেললে ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে।’’
প্রথম টি-টোয়েন্টির আগে লিটনও এমন কথাই বলেছেন, ‘‘আমিও একমত! (২০২১ সালের নিউ জিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ খেলে) অনেক ক্রিকেটারেরই ক্যারিয়ার নিচু হয়ে গেছে, ব্যাটসম্যান হিসেবে। আমি যদি বোলার হতাম, হয়তো আমার ক্যারিয়ারও বিল্ড-আপ হতো ওই উইকেটে খেললে (হাসি) ।’’
লিটনের বিশ্বাস ছিল, চার বছর পর এমন কিছুর পুনরাবৃত্তি হবে না। কিন্তু প্রথম টি-টোয়েন্টির উইকেট প্রায় একই রকমের। অসমান বাউন্স ছিল। গতিও হেরফের করেছে। স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন। স্লোয়ারে পেসারদের মিলেছে সাফল্য।
মোস্তাফিজের বোলিংটাই দেখুন। ৪-০-৬-২। ২৪ বলের ১৮টিই ডট। লিটন সাহস করে ফাহিম আশরাফের রিভিউ নিলে আরেকটি উইকেট বাড়তে পারত তার। হয়নি। তাতে কী? মোস্তাফিজ ঘরের মাঠে সবচেয়ে কম রান দিয়ে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটা নিজের করে নিতে পেরেছেন তো। তার স্লোয়ার, কাটার, স্টক বলের জবাব কেউ দিতে পারেননি। ২৪ বলে হজম করেননি কোনো বাউন্ডারি।
লিটন ইনিংসের শুরুটা করেছিলেন স্পিনার মাহেদী হাসানকে দিয়ে। ৪ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ১ উইকেট পেয়েছেন। তাসকিনের ২২ রানে শিকার ৩ উইকেট। ১ উইকেট পেয়েছেন তানজিম সাকিব। শামীম, রিশাদ হাত ঘুরালেও উইকেটের দেখা পাননি। বাংলাদেশের সাঁড়াশি আক্রমণে ৭০ বলে কোনো রানই নিতে পারেননি পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা।
অতিথিদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেছেন ওপেনার ফখর জামান। এছাড়া আব্বাস আফ্রিদি ২২ ও খুশদীল শাহ ১৭ রান করেছেন। বাকিরা কেউ দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি।
মন্থর উইকেটে বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটাও ভালো ছিল না। ৭ রানে তানজিদ ও লিটন সাজঘরে ফেরেন। ১ রান করে দুজন আউট হয়ে যান। সেখান থেকে পারভেজ হোসেন ইমন ও তাওহীদ হৃদয় খেলার চিত্র পাল্টে দেন।
৬২ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথেই এগিয়ে নেন। তাওহীদ ৩৭ বলে ৩৬ রান করে হাল ছেড়ে দিলেও ইমন নিজের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ৩৯ বলে ৫৬ রান করেন ৩ চার ও ৫ ছক্কায়।
পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা যেখানে খাবি খেয়েছে সেখানে স্বাগতিক দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং আশা জাগিয়েছে বেশ ভালোভাবে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং তুলনামূলক সহজ হয়ে গেছে যা বোঝাই গেছে। এজন্য টস জয়টাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নয় ম্যাচ পর লিটন টসে জিতেছেন। ম্যাচটা সেখানেই বাংলাদেশের পক্ষে চলে আসে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
শেষ সপ্তাহে টানা বৃষ্টির কারণে উইকেট পর্যাপ্ত সূর্যর আলো পায়নি। উইকেট ঠিকঠাক প্রস্তুত হয়েছে কি না তা নিয়েও দ্বিধা ছিল। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ২০২১ ফিরে আসার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পরের ম্যাচগুলোতে কী হয় সেটাই দেখার। জয়ের সঙ্গে শঙ্কাও রয়েছে। তবে যেকোনো জয়ই স্বস্তির। আপাতত ৪৮ ঘণ্টা সেই স্বস্তিতেই কাটাতে পারবে লিটন অ্যান্ড কোং।
ঢাকা/ইয়াসিন/রাজীব