ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

নিজেকে পাল্টে সাইফের পথ চলা

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ৩১ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ১৩:১০, ৩১ আগস্ট ২০২৫
নিজেকে পাল্টে সাইফের পথ চলা

২০১৬ সালের ঘটনা। বাংলাদেশে বসেছিল অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ সেবার হট ফেভারিট। মিরাজ, শান্ত, সাইফউদ্দিন, জাকির, জাকের মিলিয়ে দুর্বার দলটি। ঘরের মাঠে সেবার শিরোপা জেতা শেষ পর্যন্ত হয়নি। তৃতীয় হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

সেই দলে একজন ছিলেন, ওপেনার সাইফ হাসান। যাকে মনে করা হচ্ছিল বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে লম্বা রেসের ঘোড়া। ওপেনিং ম‌্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩১ বলে ৬ রানের ইনিংসে সেই ছাপ পাওয়া যায়। অফস্টাম্পের বাইরের বল লাগাতার ছেড়ে দেওয়া, বলের ওপর শেষ পর্যন্ত নজর রাখা, ধৈর্য ও চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় ব‌্যাটিং করার মানসিকতায় সাইফ হয়ে উঠেন অনন‌্য।

আরো পড়ুন:

ঘরোয়া ক্রিকেটে সেই প্রতিফলন দেখা যায়। জাতীয় দলে অভিষেকের আগেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট তিন ডাবল সেঞ্চুরি তার নামের পাশে। ধরেই নেওয়া হচ্ছিল, সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পরবর্তী ব‌্যাটন থাকবে তার কাছেই। কিন্তু বিশ্বাস ও ভাবনার সঙ্গে মাঠের ক্রিকেটে আকাশ পাতাল পার্থক‌্য।

টেস্ট ক্রিকেটে তার অভিষেক হলেও রাঙাতে পারেননি। নিজেকে পাল্টে আক্রমণাত্মক ব‌্যাটসম‌্যান হিসেবেও হাজির করেন। তাতেও খুব একটা লাভ হয়নি। টি-টোয়েন্টি অভিষেক হলেও বাদ পড়তেও সময় নেননি।

হাল ছাড়েন না সাইফ। আক্রমণাত্মক ব‌্যাটিংয়ে খুঁজে পান দিশা। চলে তার একক লড়াই। যেখানে পাশে পেয়েছিলেন অনেককেই। ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রতিযোগিতায় নিজেকে মেলে ধরেন। কখনো সফল হয়েছেন। কখনো ব‌্যর্থ। তবে পরিশ্রম থামাননি। অযুত-নিযুত ঘামবিন্দু ঝরিয়ে নিজেকে ফিট করেন বড় মঞ্চের জন‌্য। 
জানতেন একদিন সুদিন আসবে। সেই সুদিনটা গতকালই এলো সিলেটে। চার বছর পর জাতীয় দলে ডাক পেয়ে নিজেকে অন‌্যভাবে পরিচিত করেছেন সাইফ। বোলিংয়ে ২ উইকেট। লিটন স্টাম্পিং না করলে আরো একটি উইকেট পেতে পারতেন। এরপর ব‌্যাটিংয়ে ১৯ বলে ৩৬ রান। ৩ ছক্কার সঙ্গে ১ চার। অনুকূল পরিস্থিতি, চেনা কন্ডিশন, গড়পড়তা বোলিং আক্রমণ, পরিস্থিতিও স্বাভাবিক। সব কিছু তার পক্ষে গেছে। তাইতো সহজাত ক্রিকেট খেলেই নিজেকে মেলে ধরেছেন সাইফ।

২০২৪ সালের পর ধারাবাহিক রান করছেন এই ব‌্যাটসম‌্যান। বিপিএলে ৮ ম‌্যাচে ১৪৫ রান করেছেন ১১৩.৩ স্ট্রাইক রেটে। সেবার জিএসলে ৩ ম‌্যাচে ১৮৬.৪ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৪১ রান। জাতীয় ক্রিকেট লিগ টি-টোয়েন্টিতে ভালো করেননি। ৭ ম‌্যাচে রান করেছিলেন মাত্র ৪৭।

সবশেষ বিপিএলে ১৩ ম‌্যাচে ৩০৬ রান করেছেন ১১৯.৬ স্ট্রাইক রেটে। এরপর জিএসএলে ৪ ম‌্যাচে ১২৭.৩ স্ট্রাইক রেটে ৮৪ রান এবং সবশেষ টপ এন্ড টি-টোয়েন্টিতে ৬ ম‌্যাচে ১২১.১ স্ট্রাইক রেটে ১৩২ রান করেন সাইফ।

পরিসংখ‌্যান তার পারফরম‌্যান্স নিয়ে বড় উচ্ছ্বাস দেখাবে না নিশ্চিতভাবেই। বড় কিছু বা উল্লেখযোগ‌্য কিছু আছে তেমনও নয়। তবে নিজেকে পাল্টে অন‌্যদের সঙ্গে লড়াইয়ে রাখা, পরিস্থিতি বিবেচনায় পারফরম‌্যান্সে পরিবর্তন আনা এবং দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ একজন খেলোয়াড় সব সময়ই লক্ষ‌্যে পৌঁছে যায়। সাইফের ক্ষেত্রে তেমনটিই হয়েছে।

ব‌্যাটিংয়ের সঙ্গে তার বোলিংও প্রাসঙ্গিক। প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু সেই কথাই বলেছিলেন, ‘‘তাকে নেওয়ার সময় আরও অনেকেই আলোচনায় এসেছে। কোচ–অধিনায়ক, নির্বাচক মণ্ডলী, আমরা অনেক আলোচনা করেছি। আমাদের ওপরের দিকে (ব্যাটসম্যানদের মধ্যে) একটা গুরুত্বপূর্ণ বোলার দরকার ছিল। এক ওভার–দুই ওভারের একটা দায়িত্ব তিনি পালন করতে পারবেন।”

“তিন-চার নম্বরে অথবা ওপরের দিকে, যদি ওপেনার দরকার হয়, সে আলোকে সাইফের দিকে চোখ ছিল। এবার তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নম্বর চারে খেলার মতো ভালো ব্যাটসম্যান, একই সঙ্গে ওপরেও যদি কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, প্রয়োজনে তিনি ওপেন করার সক্ষমতা রাখেন। আমরা এরকম ‘মাল্টিপল’ জায়গায় দায়িত্ব পালনের মতো ক্রিকেটার অনেক বেশি খুঁজছি। দলের সেটার প্রয়োজন অনেক বেশি।”

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়