আইরিশ যে পরিবারের ভাষা কেবল ‘ক্রিকেট’
ক্রীড়া প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম থেকে || রাইজিংবিডি.কম
ক্রিকেটে ভাইদের গল্প কম নয়। বড় দেশের বড় তারকা হয়েছেন অনেকেই। ছোট দেশেরও রয়েছেন একাধিক ধ্রুবতারা। যারা ওই দেশের ক্রিকেটে ধুমকেতু হয়ে এসে ধ্রুবতারার জায়গাটি দখল করে নিয়েছেন।
ক্রিকেট আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেট অনেকটাই পরিবার কেন্দ্রিক। দুই ভাই থাকা যেন নৈমিত্তিক ব্যাপার। এড জয়েস ও ডম জয়েস, নেইল ও’ব্রায়ান ও কেভিন ও’ব্রায়ান ভাইরা মাঠ দাপিয়ে বেরিয়েছেন। এড জয়েসের বোন ইসাবেলা জয়েস খেলেছেন নারী দলে। যিনি এখন ধারাভাষ্য দিতে আছেন বাংলাদেশে।
এখন যেমন হ্যারি টেক্টর ও টিম টেক্টর দলের অক্সিজেন। এছাড়া ডেলানি, টাকার, এডাইয়ার ভাইরা গত ক’বছর ধরে ঘুরেফিরে জাতীয় দলে খেলছেন। তবে বর্তমান সময়ে আলোচিত বলতেই আছেন হ্যারি টেক্টর ও টিম টেক্টর। তাদের পুরো পরিবারই ক্রিকেটের কারণে পরিচিত।
দুজনের বাবা টুকটাক ক্রিকেট খেলতেন। চার ভাই-বোনের প্রত্যেকে ক্রিকেট খেলেন। তাদের বোন অ্যালিস খেলছেন নারী দলে। সবচেয়ে বড় ভাই জ্যাক খেলেছেন বয়সভিত্তিক দলে। ১২টি প্রথম শ্রেণির ও ২৮ লিস্ট এ ম্যাচও খেলেছেন।
ক্রিকেট এই পরিবারে তাদের মা-একমাত্র দর্শক। নিশ্চিতভাবেই সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। জানা গেল, এই পরিবারে ক্রিকেটই একমাত্র ভাষা। বাসার ড্রয়িংরুম কিংবা ব্রেকফাস্ট টেবিল ও ডিনার টেবিল...ক্রিকেটেই বুঁদ হয়ে থাকেন প্রত্যেকে।
হ্যারি এবং টিম দুজনই বাংলাদেশ সফর করছেন। চট্টগ্রামে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৩৯ রানে হারানোর নায়ক তারা। মঙ্গলবার টেক্টর ব্রাদার্স আরেকটি ভালো দিনের অপেক্ষায়। প্রথমবার বাংলাদেশকে টি-টোয়েন্টি সিরিজের হারানোর হাতছানি আইরিশদের। তিন ম্যাচ সিরিজে ১-১ এ সমতা। আগামীকাল সিরিজ জিততে হলে টেক্টর ব্রাদার্সকে জ্বলে উঠতেই হবে।
এর আগে টিম টেক্টর নিজেদের পরিবারের গল্প শোনালেন। সোমবার সাগরপাড়ের স্টেডিয়ামে টিম বলেছেন, ‘‘আমরা সবাই বেশ অনেক দিন ধরেই খেলছি। আমাদের বড় ভাই জ্যাক অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করেছে—মনে হয় সেটা এখানেই, বাংলাদেশেই হয়েছিল। তারপর হ্যারি তার (যুব) বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করেছে, আর আমিও একই কাজ করেছি। আমাদের ছোট বোন অ্যালিসও এখন নারী দলে জায়গা করে নিয়েছে। আমরা সবাই বড় হয়েছি ক্রিকেট খেলতে খেলতে; বাবাও একটু খেলতেন। আমরা সবাই একই ক্লাবে খেলেছি পুরো পথ চলার সময়, আর আমরা সবাই এই খেলাটা খুব ভালোবাসি। একই পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের একই খেলাটা এতটা ভালোবাসা—এটা খুবই বিরল। কিন্তু আমরা সবাই এতে একসঙ্গে থাকতে পারছি, আর সবাই মিলে খেলতে পারছি—এটাই দারুণ।'’
হ্যারি ও টিমের বয়সের পার্থক্য তিন। তবে দুজনের বোঝপড়া দারুণ। মাঠেও তার প্রমাণ মেলে। প্রথম ম্যাচে দুজন ২৪ বলে ৩১ রানের জুটি গড়েছিলেন। দ্বিতীয় ম্যাচে ২১ বলে ৩১। টি-টোয়েন্টিতে ছোট ছোট এসব জুটি অনেক সময়ই কার্যকরী। বড় ভাইয়ের সঙ্গে ব্যাটিং করা কতটা উপভোগ করেন টিম তা বোঝা গেল কথায়, ‘‘দেখো, হ্যারির সঙ্গে ব্যাটিং করা অবশ্যই খুব ভালো লাগে। আমরা ক্লাব ক্রিকেট ও ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক দিন ধরেই একসঙ্গে ব্যাটিং করছি, তাই ওর সঙ্গে ব্যাট করতে নেমে খুব আলাদা লাগেনি। অবশ্য এখানে ওর সঙ্গে ব্যাটিং করা একটু বড় উপলক্ষ, কিন্তু এটা আমার কাছে নতুন কিছু নয়। খুব ভিন্ন লাগেনি—স্বাভাবিকই মনে হয়েছে।'’
মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেট এতোটা পরিবার কেন্দ্রিক কেন? জাতীয়তাবাদের ধুয়া তুলে ১৯০২ সালে ক্রিকেট নিষিদ্ধ করা হয়। তখন থেকেই আইরিশদের ক্রিকেট চর্চা হয় ঘরের ভেতরে, বাড়ির লনে। বাবা-মা-ভাই-বোনেরা মিলে খেলতেন ক্রিকেট। ১৯৭১ সালে নিষেধাজ্ঞা উঠার পর থেকে ক্রিকেট ছড়িয়ে গেলেও পারিবারিক চর্চা এখনও চলমান।
টেক্টর ব্রাদার্স সেই আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন। যে পরিবারের ভাষা কেবল, ক্রিকেট!
চট্টগ্রাম/ইয়াসিন