ভ্রমণ ও পিকনিক স্পটের স্বর্গরাজ্য বরগুনা
জাহিদুল ইসলাম মেহেদী || রাইজিংবিডি.কম
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের এক শান্ত ও নৈসর্গিক জেলা বরগুনা। এখানকার অনন্য সৌন্দর্য, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য এবং ঐতিহ্যের টানে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের আকর্ষণ করছে এ জেলা। যারা প্রকৃতি, সমুদ্র, নদী, এবং ইতিহাসে মোড়া স্থানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য বরগুনা এক আদর্শ গন্তব্য।
বরগুনার বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য পর্যটকদের কাছে এক অসাধারণ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা এনে দেয়। সৈকত, নদী, বন, এবং স্থানীয় ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে ভ্রমণ করে যে কেউ প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে যেতে পারেন।
লালদিয়া সৈকত
বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলায় অবস্থিত লালদিয়া সৈকত কম পরিচিত হলেও এর সৌন্দর্য কুয়াকাটার থেকে কম নয়। মনোরম পরিবেশে ভ্রমণ এবং পিকনিকের জন্য এটি একটি গোপন রত্নস্বরূপ। ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য লালদিয়া সৈকত প্রকৃতির অপূর্ব রূপ উপভোগের এক সুযোগ।
জেলার খুব নিকটে রয়েছে শুভসন্ধ্যা সৈকত, যা এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। নামের মতোই, এখানে সন্ধ্যার সময় সূর্যাস্তের অসাধারণ দৃশ্য দেখা যায়। পিকনিক এবং ক্যাম্পিংয়ের জন্য এটি আদর্শ স্থান, যেখানে প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য পর্যটকদের বারবার আসতে আকর্ষণ করে।
হরিণঘাটা বন
বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলায় অবস্থিত হরিণঘাটা বন, একটি প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য। এখানে হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর গভীর বনের রহস্যময় পরিবেশে সময় কাটানোর জন্য এই স্থানটি আদর্শ। নৌকায় নদী পাড়ি দিয়ে বনের ভিতরে গিয়ে প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে আসার অভিজ্ঞতা এক কথায় অসাধারণ।
এভারগ্রিন টুলুর চর
বরগুনা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে বরইতলা ফেরিঘাটের মাঝামাঝি বিষখালী নদীতে টুলুর চর আরেক সৌন্দর্যের হাতছানি। বিষখালী নদীর বুকে জেগে ওঠা এ শ্বাসমূলীয় বন এখন ঘন ও গাঢ় সবুজে আচ্ছাদিত। এ চরে হরেক পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর রৌদ্র-জলের তরঙ্গ পর্যটকদের মোহিত করে।
পাথরঘাটা এবং সুন্দরবন সংলগ্ন নদী অঞ্চল
বরগুনার পাথরঘাটা এলাকা নদী এবং সুন্দরবনের সংলগ্ন হওয়ায় এটি মৎস্য শিকার এবং ভ্রমণের জন্য দারুণ জনপ্রিয়। এখানে নদীর পাড়ে বসে বা নৌকায় চড়ে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা পর্যটকদের কাছে একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে। এছাড়া, সুন্দরবনের কাছাকাছি থাকার কারণে বন্যপ্রাণী দেখা এবং ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগও মেলে।
বলেশ্বর নদী এবং হরিণবাড়িয়া পর্যটন এলাকা
বরগুনার বলেশ্বর নদী এলাকায় নৌকায় ঘুরে ঘুরে প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্য উপভোগ করা পর্যটকদের জন্য একটি অন্যতম আকর্ষণ। এখানে পিকনিক বা আউটডোর অ্যাডভেঞ্চারের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত স্থান।
বিষখালী নদী
নদীমাতৃক বরগুনার বিষখালী নদী পাড়ে রয়েছে পর্যটকদের জন্য বিশেষ নৌভ্রমণের ব্যবস্থা। নৌকা করে বিষখালী নদীর শান্ত পানিতে ভেসে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা মনোমুগ্ধকর। এটি পিকনিক এবং দিনের ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়।
তেঁতুলবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত
একটি তুলনামূলক কম পরিচিত, কিন্তু অত্যন্ত সুন্দর সৈকত হলো তেঁতুলবাড়িয়া। শান্ত পরিবেশ ও কোলাহলমুক্ত এই সৈকতে প্রকৃতির সান্নিধ্য অনুভব করতে এবং নির্জনতায় সময় কাটাতে এটি একটি আদর্শ স্থান।
নীলিমা, কালমেঘা পয়েন্ট ও মোহনা পর্যটন কেন্দ্র
পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ও পাথরঘাটা পৌরশহরের নীলিমা পয়েন্ট। বিষখালী নদী তীরে বসে জেলেদের মাছ শিকার, সূর্যডোবা গোধূলিতে পাখিতে নীড়ে ফেরা আর ছোট ছোট তীর ভাঙা ঢেউয়ের সৌন্দর্য দেখা যাবে শেষ বিকেলে বসে এখানে সময় কাটালে।
এছাড়া বরগুনা জেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের পায়রা-বিষখালী নদীর মোহনার প্রায় এক কিলোমিটার জায়গায় গড়ে উঠেছে মোহনা পর্যটন কেন্দ্র। একটি সংগঠনের কর্মীদের স্বেচ্ছাশ্রমে নান্দনিক হয়ে ওঠা এই জায়গা এখন দেখলে যে কারও চোখ জুড়িয়ে যাবে।
জল তরনী’র সেবা
বরগুনার পর্যটন শিল্পকে আরও সহজ এবং উপভোগ্য করতে ভ্রমণ সেবা প্রতিষ্ঠান ‘জল তরনী’ ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ভ্রমণ প্যাকেজ চালু করেছে। তাবু সার্ভিস, বোর্ড সার্ভিস, গাইড সার্ভিস এবং স্থানীয় খাবারের মাধ্যমে পর্যটকদের ভ্রমণকে আরও স্মরণীয় করে তুলছে এ প্রতিষ্ঠান।
রাজধানী ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়া জন্য বিভিন্ন বাস সার্ভিস রয়েছে। এছাড়া সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে জলপথে সহজ ভ্রমণেরও সুযোগ রয়েছে।
লেখক: সাংবাদিক
/মেহেদী/