ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

নির্ঘুম রাত কাটানো ও রাহীর কোহলি বধের গল্প

ইন্দোর থেকে ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৮, ১৭ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নির্ঘুম রাত কাটানো ও রাহীর কোহলি বধের গল্প

রোহিত শর্মাকে আউট করে আবু জায়েদ রাহী ছুটছিলেন দিকবিদিক। তার উল্লাসই বলে দিচ্ছিল কতো বড় সাফল্য তিনি পেয়েছেন।

কিন্তু রাহীর ক্ষুধা ছিল আরও বেশি। বিরাট কোহলি। ওয়ার্ল্ড নাম্বার টু টেস্ট ব্যাটসম্যান। তার উইকেটই পেতেই হবে। এ প্রজন্মের বোলারদের কাছে ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর’ অর্থ্যাৎ স্টিভেন স্মিথ, জো রুট, কেন উইলিয়ামসন ও বিরাট কোহলির উইকেট আরাধ্য। তাদের উইকেট মানে সাফল্যের মুকুটে মহামূল্যবান কোহিনূর যুক্ত হওয়া।

ইন্দোরে রাহী কোহলিকে ফিরিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন। দল হেরেছে। তাতে বেশ মন খারাপ সিলেটের এ পেসারের। কিন্তু কোহলির উইকেট তার মুখে হাসি ফুটিয়েছে,‘কোহলির উইকেট আমার জীবনে স্বপ্নের উইকেট। আমার কাছে পুরো ব্যাপারটিই স্বপ্নের মতো লাগছে।’ – বলছিলেন রাহী।  কিন্তু এ স্বপ্ন পূরণের আগে নির্ঘুম রাত কাটানোর গল্প আছে।

বাংলাদেশকে মাত্র ১৫০ রানে অলআউট করে ইন্দোরে প্রথম দিনের শেষ সেশনে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল ভারত।  রাহীর দারুণ বোলিংয়ে রোহিত শুরুতেই সাজঘরে ফেরেন। এরপর পূজারা ও আগারওয়ালের জুটি এগিয়ে নেয় ভারতকে। শেষ বিকেলে আরেকটি সুযোগ তৈরি করেছিলেন রাহী।  ২৪৩ রানের ইনিংস খেলা আগারওয়াল রাহীর বলে ৩২ রানে স্লিপে ক্যাচ দেন।  কিন্তু ইমরুল ক্যাচ ছেড়ে জীবন দেন ভারতের ওপেনারকে।

আগারওয়াল আউট হলে কোহলি ব্যাটিংয়ে আসতেন।  রাহী মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন কোহলিকে বোলিং করার। কিন্তু শেষ বিকেলে কোনো উইকেট না পড়ায় ২২ গজে নামা হয়নি কোহলির।  পরদিন তো নামবেন! তাতেই রাতের ঘুম হারাম রাহীর!

কোহলি ব্যাটিংয়ে নামলে কেমন বোলিং করবেন? শুরুটা কেমন হবে? কোথায় বল পিচ করাবেন? শুরুটা বাউন্স নাকি অন্যকিছু? চোখে মুখে ঘোর লাগা উচ্ছ্বাসে বোঝা যাচ্ছিল ওই রাতে কতো স্বপ্ন আঁকছিলেন। নির্ঘুম রাতটা ছিল রোমাঞ্চের। শরীর জুড়ে রোমাঞ্চ, উত্তেজনা, স্বপ্নের জাল বোনা। পরদিন সকালেই পূজারাকে সাজঘরে পাঠিয়ে রাহীর পকেটে আরেকটি উইকেট।

পূজারা সাজঘরে ফিরছেন আর ইন্দোরের সবুজ গালিচা ধরে ক্রিজে আসছেন কিং কোহলি।  সে কী চিৎকার ইন্দোরে।  কোহলি কোহলি কলরব।  রাহীর ভেতরে ধুক ধুক…ধুক ধুক! প্রথম বলটা ফুলার ডেলিভারি প্যাডের উপর।  কোহলির আলগা শট।  এক ওভার পর আবার রাহী বোলিংয়ে।  ব্যাটিংয়ে কোহলি।  লেন্থ বল দারুণ সুইং করে ভেতরে ঢুকল।  আঘাত করল কোহলির পেছনে প্যাডে।  রাহীর আবেদনে আম্পায়ার রড টাকার নট আউট দেন।  অধিনায়ক মুমিনুলকে মানিয়ে রিভিউ চাইলেন। তাতে ফল আসলো রাহীর পক্ষে। কোহলির দশম ডাক, রাহীর আরেকটি উইকেট।

সে কি আনন্দ রাহীর।  স্বপ্ন পূরণের উল্লাস, উচ্ছ্বাস বোঝা যাচ্ছিল তার শরীর জুড়ে।   রোহিত ও কোহলির উইকেট রাহী নিজের সাফল্যের খাতায় জায়গা দেবেন বিশেষ স্থানে, তা বোঝা যাচ্ছিল তার কন্ঠে,‘ওদের উইকেট পেয়ে অবশ্যই ভালো অনুভূতি ছিল। বিশ্বের এক, দুই নম্বর ব্যাটসম্যান বলতে গেলে।’

রোহিত, পূজারা, কোহলির উইকেটের পর রাহী পকেটে গেছে রাহানের উইকেট।  আগারওয়ালের ক্যাচ মিস না করলে রাহী পেতেন প্রথম পাঁচের স্বাদ। অবশ্য নিজের টেস্ট অভিষেকেই রাহী পাঁচ উইকেট পেয়ে যেতেন।  ওয়েস্ট ইন্ডিজে লিটন দুবার রাহীর বলে ক্যাচ মিস করেন।  সতীর্থদের ভুলে পাঁচের মাইলফলক ছুঁতে পারেননি এবারও। তবে এ নিয়ে রাগঢাক নেই সিলেটের এ পেসারের, ‘এটি আসলে ক্রিকেটের অংশ। আমি মেনে নেই। ক্যাচ ধরাটাও অবশ্য ক্রিকেটর অংশ। এখন মিস হয়ে গেলে তো আসলে করার কিছু নেই।’

কোহলির উইকেটে রাহী পেয়েছেন আত্মবিশ্বাস।  বেড়েছে মনোবল।  তার বিশ্বাস এ সাহস আর আত্মবিশ্বাসে সামনে এগিয়ে চলা সম্ভব।


ইন্দোর/ইয়াসিন/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়