ঢাকা     মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

গণিত জাদুকরের গল্প

মোসতাফা সতেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ২৬ নভেম্বর ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গণিত জাদুকরের গল্প

অলংকরণ : অপূর্ব খন্দকার

মোসতাফা সতেজ : গণিত দেখলে অনেকে ভয় পায়। আতঙ্কে পানসে হয়ে যায় মুখ! তাদের কাছে গণিত মানেই জটিল বিষয়। অনেক ছেলেমেয়ে তো গণিতের ক্লাসে মাথা নিচু করে বসে থাকে। সবাই যে এমন তা বলছি না। অনেকে আবার গণিতে ভীষণ পটু। এমনই একজন হলেন যাদবচন্দ্র চক্রবর্তী। বলতে পারো, গণিত ছিল তার খেলার বিষয়! সারাদিন বসে বসে গণিতের সব জটিল হিসাবের সমাধান করতেন। আর এভাবেই তিনি একদিন হয়ে উঠলেন, গণিতের জাদুকর!


শুধু গণিতে নয়, অসাধারণ জনসেবক ছিলেন তিনি। তৎকালীন সিরাজগঞ্জ শহর উন্নয়নে তিনি দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। এই সিরাজগঞ্জেরই কামারখন্দ থানার তেতুলিয়া গ্রামে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতৃহারা যাদবের  শৈশব কাটে নিজ এলাকাতেই। প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তিনি গণিতে দক্ষতার প্রমাণ দেন। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ১৫ টাকা বৃত্তি নিয়ে তিনি মাধ্যমিক পাস করেন। উচ্চশিক্ষা লাভের আশায় চলে যান কলকাতা।


যদিও গণিতের এই জাদুকরের জীবনের সবটুকু জানা যায়নি। সারাজীবন গণিতের সাধনা করে গেছেন, আত্মপ্রচার চাননি। লেখেননি আত্মজীবনী। তবে চরিতাভিধান থেকে জানা যায়, প্রেসিডেন্সি কলেজের বেতন পরিশোধ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজে তিনি পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন শাস্ত্র পড়েছেন। লেখাপড়ার খরচ চালাতেন ছাত্র পড়িয়ে। এতে যেমন কষ্ট ছিল তেমনি ছিল আনন্দ। প্রখর মেধাবী যাদব চন্দ্র ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে গণিতে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন। এ সময় তিনি বালির মধ্যে উট পাখি যেমন মুখ গুঁজে থাকে তেমনি গণিতে ডুবে থাকতেন।


কলকাতা সিটি কলেজে তার পেশাজীবন শুরু হয়। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেন। এরপর জন্মভূমির টানে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে চলে আসেন সিরাজগঞ্জ। শহরের ধানবান্ধী এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করেন। কর্মধারাকে এবার তিনি নতুন খাতে প্রবাহিত করতে সচেষ্ট হন। সিরাজগঞ্জ মিউনিসিপালিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সরাসরি জড়িয়ে পড়েন জনকল্যাণকর কাজের সঙ্গে।


যাদবচন্দ্র চক্রবর্তীর জীবন পঞ্চাঙ্ক নাটকের মতো পর্বে পর্বে বাঁক নেয়া। বিস্ময়কর উত্তরণ। সিটি কলেজে অধ্যাপনার সময় প্রবেশিকা পরীক্ষার্থীদের জন্য পাটিগণিত রচনা শুরু করেন। ইংরেজিতে লেখা বইটি প্রকাশিত হয় ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে। বইটি প্রকাশিত হলে দেশের শিক্ষাজগতে বিপ্লব ঘটে যায়।  বইটি বাংলা, হিন্দি, উর্দু, অসমীয়া, মারাঠী ও নেপালী ভাষায় অনুদিত হয়। তার লেখা বীজগণিত গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে। এ ছাড়াও তিনি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য কয়েকটি বই প্রকাশ করেন। পাটিগণিতের প্রণেতা যাদবচন্দ্র চক্রবর্তী ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ২৬ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ নভেম্বর ২০১৪/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়