ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অজ্ঞাত তরুণীর হত্যার রহস্য উন্মোচন

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫২, ১৯ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অজ্ঞাত তরুণীর হত্যার রহস্য উন্মোচন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর : মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্ক করে এক তরুণীকে  হত্যার ১৮ মাস পর হত্যাকারী সন্দেহে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি পুলিশ।

পুলিশ প্রথমে এটিকে ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ড হিসেবে অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ দাফন করে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ কছিম উদ্দিন নামে এক ট্রাক চালককে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের পর তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র এসআই নাজমুল কাদের জানান, রোজিনা নামের মেয়েটির সঙ্গে রং নম্বরে পরিচয় হয় ট্রাক ড্রাইভার কছিম উদ্দিনের। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের টানে মেয়েটি নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন। সেখানে তারা তিন সপ্তাহ এক সঙ্গে বসবাস করেন। পরবর্তীতে মেয়েটি বিয়ের জন্য চাপ দিলে কছিম উদ্দিন কৌশলে তাকে রংপুরের কাউনিয়া নিয়ে এসে হত্যা করেন। আনুমানিক ২২ বছর বয়সী ওই তরুণী ‘ওই এলাকার না’ শুধু এই টুকুই নিশ্চিত হতে পেরেছিল পুলিশ। পরে অজ্ঞাতনামা হিসেবে লাশ দাফন করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা আরো জানান, কছিম উদ্দিন স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে, বেশ কয়েক দিন একত্রে বসবাসের পর তিনি ওই তরুণীর কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তরুণী কিছুতে পিছু ছাড়ছিল না। তাই তাকে হত্যা করেন। মেয়েটির নাম রোজিনা ছাড়া আর কিছু জানেন না তিনি।

গত মঙ্গলবার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে কছিম উদ্দিন বলেন, মুন্সিগঞ্জে একটি বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ট্রাক চালানোর সময় রোজিনা পরিচয় দিয়ে এক নারী হঠাৎ তাকে মোবাইলে ফোন দেন। এরপর ওই নারীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। রোজিনার বাড়ি ঢাকার আশুলিয়ার জিরানী বাজারে বলে জানান। তখন কছিম উদ্দিন থাকতেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ আর্ট স্কুল মোড়ের ভাড়া বাসায়। এক দিন রোজিনা তার বাসায় আসেন। এ সময় তারা বাসার অন্য লোকজনদের স্বামী-স্ত্রী বলে পরিচয় দেন। সেখানে ১৫ দিন থাকার পর কছিম উদ্দিন ওই তরুণী রোজিনাকে নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুরের তার এক ভগ্নিপতির বাসায় ওঠেন। সেখানে পাঁচ দিন অবস্থান করে তাকে নিয়ে বাসে করে রংপুরে চলে আসেন কছিম উদ্দিন। এরপর তিনি পীরগাছা উপজেলার সাতভিটা গ্রামে তার এক খালার বাসায় ওঠেন। সেখান থেকে ২০১৬ সালের ২ নভেম্বর তিনি তার খালাত ভাইয়ের শ্বশুরবাড়িতে বিয়ের দাওয়াত খেতে যান। ওই দিন সন্ধ্যার পর রোজিনাকে সঙ্গে নিয়ে নিজ বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে কছিম উদ্দিন হেটে রওনা দেন। এরপর রাত আনুমানিক ২টার দিকে তাকে হত্যা করেন।

২০১৬ সালের ৫ নভেম্বর কাউনিয়া উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের কুর্শা বিলের ধানখেতে এক তরুণীর গলা ও পেটে-বুকে ছুরিকাঘাত করা লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকার লোকজন থানায় খবর দেয়। ওই হত্যার ঘটনায় কাউনিয়া থানার এসআই শাহাদাত হোসেন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। কিন্তু সাত মাসেও হত্যার রহস্য ও খুনিকে শনাক্ত করতে না পেরে মামলা হস্তান্তর করা হয় রংপুর সিআইডি পুলিশের কাছে।

সিআইডির পুলিশের এসআই এ কে এম নাজমুল কাদের মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান। দীর্ঘ দিন তদন্ত শেষে সিআইডি নিশ্চিত হয় এই হত্যার সঙ্গে ড্রাইভার কছিম উদ্দিন জড়িত। গত ১৩ মে পীরগাছা উপজেলায় শ্বশুর বাড়িতে এলে কছিম উদ্দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের কছিম উদ্দিন স্বীকার করেন তিনি একাই ওই তরুণীকে হত্যা করেছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা নাজমুল কাদের বলেন, ঢাকার আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন থানায় বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে রোজিনার পরিচয় জানতে খোঁজ করা হয়েছে।




রাইজিংবিডি/রংপুর/১৯ মে ২০১৮/নজরুল মৃধা/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়