ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ফিচার লিখে প্রথম হলেন রাইজিংবিডির প্রদায়ক মাছুম

আমিনুর রহমান হৃদয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৭, ২৮ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফিচার লিখে প্রথম হলেন রাইজিংবিডির প্রদায়ক মাছুম

স্বীকৃতি সনদ তুলে দিচ্ছেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী আব্দুল মান্নান’

আমিনুর রহমান হৃদয়: পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াকালীন তিনি ছড়া-কবিতা লিখতেন। নিজের লেখা কবিতা পড়ে শোনাতেন বন্ধুদের। কবিতা লেখার কারণে শিক্ষকরাও তাকে ‘কবি’ ডাকতেন। স্বপ্ন দেখতেন একদিন বিখ্যাত কবি হবেন। নাম ছড়িয়ে পড়বে দেশ-বিদেশে। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন সেই স্বপ্ন বদলে গেল। দশম শ্রেণীতে পড়াকালীন স্থানীয় এক পত্রিকায় ইউনিয়ন প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা করার সুযোগ পান। এবার তার লক্ষ্য বড় সাংবাদিক হবেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে এখনো নানা বাধা পেরিয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি।

বলছিলাম উদীয়মান তরুণ সাংবাদিক ছাইফুল ইসলাম মাছুমের কথা। সম্প্রতি রাইজিংবিডি ডটকম অফিসে বসে আড্ডার ফাঁকে কথা হয় তার সঙ্গে। এই তরুণের জন্ম নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণ চরচেঙ্গা গ্রামে। বাবা আবুল কাশেম পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা, মা শাহনাজ বেগম গৃহিণী। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। প্রান্তিক এলাকা থেকে উঠে আসা এই তরুণ এরই মধ্যে ফিচার প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে। তবে রাজধানীতে তার লেখালেখি শুরু হয়েছিল অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি থেকে। ছাইফুল ইসলাম মাছুম বলেন, ‘বিভিন্ন পত্রিকায় নিজের লেখা কবিতা খামে করে পাঠাতাম। কিন্তু কোনো পত্রিকা আমার লেখা কবিতা ছাপায়নি। তাই বন্ধুরা মিলে নিজেদের লেখাগুলো দিয়ে নিজেরাই ম্যাগাজিন বের করি।’ তিনি আরো বলেন, ‘হঠাৎ করেই স্থানীয় ‘পাক্ষিক নিঝুম দ্বীপ’ পত্রিকায় ইউনিয়ন প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা করার সুযোগ পাই। শুরু হয় সাংবাদিক হিসেবে পথ চলা। সাইকেল চালিয়ে ইউনিয়নের এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটেছি খবরের সন্ধানে। সেই খবর পত্রিকায় ছাপা হলে নিজেই আবার পত্রিকা বিলি করেছি। এরপর হাতিয়ার কমিউনিটি রেডিও ‘সাগর দ্বীপ’ এর সাথেও কাজ করেছি।’

মাছুম পরিবার থেকে লেখালেখিতে তেমন উৎসাহ পাননি। তারপরও দমে যাননি তিনি। সাংবাদিকতাকে ভালোবেসে ফেলেন। যে কারণে এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি সরাসরি রাজধানীতে চলে আসেন। এ প্রসঙ্গে মাছুম বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলে খুশি হয়ে বাবা ল্যাপটপ কিনে দিয়েছিলেন। যদিও এসএসসি পরীক্ষায় রেজাল্ট আশানুরূপ হয়নি। ফলে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের কাছ থেকে দূরে থাকতাম। সেই সময়টাতে আমার সঙ্গী ছিল বই। বই পড়ে সময় কাটাতাম। পরিবার থেকে ধরেই নিয়েছিল আমার দ্বারা কিছু হবে না। বাবা স্থানীয় বাজারে একটি দোকানও ধরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ব্যবসা করার জন্য। প্রায় সময়ই আমার জন্য বাবার কাছে অভিযোগ আসতো। স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যানের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির খবর পত্রিকায় লিখলেই বাবার কাছে অভিযোগ চলে আসতো। অনেক বাধা পেরিয়ে সংবাদ করেছি । কিন্তু ভয় পাইনি। এলাকায় মানুষ আমাকে চিনতে শুরু করেছিল এসব কারণে।’



শুধু সাংবাদকিতা নয়, এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন এই তরুণ সাংবাদিক। ‘আলোর মশাল’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলে এলাকার তরুণদের নিয়ে হাতিয়ার বিভিন্ন গ্রামে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। হাতিয়া দ্বীপের নদী ভাঙন রোধসহ বিভিন্ন সমাজিক আন্দোলনেও রয়েছে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ। বর্তমানে টিআইবির ইয়েস মেম্বার, ব্রিটিশ কাউন্সিলের অ্যাকটিভ সিটিজেন মেম্বার ও উপকূলীয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘আলোকযাত্রা’র ঢাকা দলের টিম লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাংগঠনিক কাজের কিছু স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি। সবুজ উপকূল ২০১৬ বাস্তবায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক থেকে ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে সংগঠক সাফল্য স্মারক সম্মাননা পান এই তরুণ।

ভবিষ্যতে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিতে চান। সেই লক্ষ্যে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হন মাছুম। রাজধানীতে এসেও পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা চালিয়ে যান তিনি। সাংবাদিকতার সুযোগ চেয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় যোগাযোগ করেন। প্রথমেই কাজের সুযোগ পান দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম-এ। এরপর বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে ফিচার প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে রাইজিংবিডি ডটকমেই নিয়মিত ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবেদন লিখছেন তিনি।

ফিচার লেখার জন্য সম্প্রতি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ফিচার রাইটিং প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন মাছুম। তিনি বলেন, ‘প্রান্তিক এলাকার ছিন্নমূল শ্রমজীবী মানুষের কষ্টের কথাগুলো সংবাদের পাতায় তুলে ধরতে চাই। যারা অবহেলিত, উপেক্ষিত সেইসব কণ্ঠহীন মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে কাজ করে যেতে চাই।’




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ নভেম্বর ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়