ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

খেজুরের রসে মিষ্টি করি মুখ

খালেদ সাইফুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০১, ৭ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খেজুরের রসে মিষ্টি করি মুখ

খালেদ সাইফুল্লাহ : কাকডাকা ভোরে সূর্য পূর্ব আকাশে উঁকি দিতে শুরু করেছে। ভোরের মিষ্টি রোদ জানালা দিয়ে ঢুকে দিন শুরুর কথা জানান দিচ্ছে। এমন সময় গৃহস্থের উঠানে রসের ভাঁড় হাজির। বাড়ির মহিলারা সেই রস জ্বাল দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হয়তো এক্ষুণি ডাক পড়বে এই সাতসকালে খেজুরের সুমিষ্ট রসের স্বাদ গ্রহণের জন্য!

দেশখ্যাত খেজুরের গুড় এবং পাটালি তৈরির জন্য খ্যাতি রয়েছে যশোর জেলার। যশোরের যে কোনো গ্রামে গেলে চোখে পড়বে মেঠোপথের দু’ধারে লম্বা খেজুর গাছের সারি। কোথাও আবার বিশাল খেজুর বাগান। শীত আসতে না আসতেই শুরু হয় এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি। পৌষ-মাঘ দুই মাস খেজুর রসের প্রধান মৌসুম। তাইতো এই সময় খেজুর রসের স্বাদ নেয়ার জন্য রাজধানী ছেড়ে একবারের জন্য হলেও গ্রামে পা রাখেন যশোর জেলার মানুষ। শহরে বসে গুড়-পাটালি হাতের নাগালে পেলেও খেজুরের রস পাওয়ার উপায় নেই। তাই এই রসের টানে অনেকেই ছুটে যান নিজ গ্রামে।

ভোর হতে না হতেই এই অঞ্চলের বাড়িগুলোতে শুরু হয় খেজুর রস জ্বাল দিয়ে গুড় কিংবা পাটালি বানানোর ব্যস্ততা। তারও আগে ঘুম ভাঙে গাছির। বাক কাঁধে কুয়াশাচ্ছন্ন অন্ধকারেই তাকে বেরিয়ে যেতে হয় গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য। একের পর এক গাছে ঝোলানো ভাঁড় থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। রস সংগ্রহের পর যেসব গাছের রস সবচেয়ে স্বচ্ছ এবং পরিষ্কার সেগুলোকে আলাদা করে রাখা হয়। এরপর বাকের দুইধারে রসের ভাঁড় ঝুলিয়ে কাঁধে উঠিয়ে নিয়ে আসা হয় বাড়িতে। রস জ্বাল দেওয়া হয় চারকোণা আকৃতির বিশেষ চুল্লির উপরে টিনের তৈরি চারকোণা কড়াইয়ের মতো বিশেষ পাত্রে। তবে গত দু’দশক আগেও যশোরাঞ্চলে খেজুর রসের যে প্রাচুর্য ছিল, সময়ের পরিক্রমায় তা অনেকখানিই ম্লান। একসময় গ্রামের গৃহস্থ বলতেই প্রত্যেকেরই অন্তত ১০-২০টি খেজুর গাছ ছিল। গাছের মালিকেরা নিজেই ছিলেন গাছি। তাই সকাল-বিকেলে প্রত্যেক বাড়িতেই শুরু হতো ব্যস্ততা। গাছিকে নিয়মিত বিকেলে গাছ কাটার সরঞ্জাম নিয়ে মাঠে যেতে হতো। আবার সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে যেতে হতো হাঁটে।

 



যশোরে সবচেয়ে বেশি খেজুর গাছ সমৃদ্ধ উপজেলা বাঘারপাড়া। শীতকালে গুড়-পাটালির জন্য এখানকার হাঁটগুলো জমজমাট হয়ে ওঠে। দূর থেকে গাছিরা খেজুরের পাটালি নিয়ে হাজির হন এখানে। খেজুর গুড়ের প্রাচুর্যের কারণে বাঘারপাড়া উপজেলার একটি বাজারের নামকরণ করা হয়েছে ‘খাজুরা’। বাঘারপাড়ার ছাতিয়ানতলা গ্রামের গাছি সাত্তার বিশ্বাস জানান, ‘আগে শীতকালজুড়ে শুধু গুড়-পাটালি বিক্রি করেই অনেকের সংসার চলত। কিন্তু বোরো ধানের আবাদ শুরু হওয়ার পর থেকে খেজুরগাছগুলো মারা পড়েছে। এছাড়াও পানি সেচ ও সার-কীটনাশক ব্যবহারের কারণে দিন দিন রসের পরিমাণ কমেছে। তাই এখন আর আগের মতো ঘরে ঘরে গুড় পাটালির সমৃদ্ধি নেই।’ সদর উপজেলার ছোট গোপালপুর গ্রামের গাছি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গাছে ওঠা এবং নিয়মিত গাছ কাটা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। গাছিরা পেশা পরিবর্তন করে অন্য কাজের দিকে চলে যাওয়ায় গাছির সংকট দেখা দিয়েছে। গাছির সংকটের কারণে খেজুর গাছের সংখ্যাও কমে গেছে। তাই রস-গুড়ের পরিমাণও এখন অনেক কম।’

গাছ এবং গাছির সংখ্যা কমে যাওয়ায় কমেছে রসের পরিমাণ। রসের সংকটের কারণে যোগান কমেছে পাটালির। যোগান কমলেও কমেনি যশোরের গুড়-পাটালির চাহিদা। সারাদেশের চাহিদা পূরণ করতে বাজার সয়লাব হয়েছে ভেজাল পাটালিতে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভেজালমুক্ত খেজুরের পাটালিপ্রাপ্তি নিশ্চিত করছে যশোররোড ডটকম নামে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। অনলাইনে অর্ডার করলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকেই মিলবে যশোরের ভেজালমুক্ত খেজুরের পাটালি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ জানুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়