ফুল দিয়ে বৈশাখ বরণে প্রস্তুত শাহবাগ
ছাইফুল ইসলাম মাছুম : বাঙালি জাতির সর্বজনীন উৎসব পয়লা বৈশাখ। পয়লা বৈশাখকে ঘিরে শহরজুড়ে তৈরি হয় অন্য রকম আনন্দঘন আবহ। ফুল ছাড়া যেন সেই আনন্দ পূর্ণতা পায় না। এ দিন ফুল দিয়ে হয় সাজসজ্জা, শুভেচ্ছা বিনিময়, প্রেম নিবেদন, সৌন্দর্য বর্ধন। ফলে উৎসবের আমেজে জমে ওঠে ফুলের ব্যবসা।
পয়লা বৈশাখের ফুলের চাহিদা নিয়ে কথা হয় রাজধানীর শাহবাগের কয়েকজন ফুল ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন, বছরে ৬টি উৎসবকে ঘিরে মূল বেচাকেনা তারা করেন। উৎসবগুলোর মধ্যে ইংরেজি নববর্ষ, ফাল্গুনের প্রথম দিন, ভালোবাসা দিবস, মাতৃভাষা দিবস, বাংলা নববর্ষ ও বিজয় দিবস। সেই ধারাবাহিকতায় ফুল ব্যবসায়ীদের নজর এখন পয়লা বৈশাখে।
শাহবাগের ‘মেহেদী ফুল ঘর’র মালিক মোহাম্মদ জসিম (৩১)। তিনি ১০ বছর ধরে ফুল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি দোকানের জন্য পাইকারি মূল্যে ফুল সংগ্রহ করেন চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও রাজশাহী থেকে। জসিম জানান, সারা বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠান ঘিরে ফুল বিক্রি হলেও, বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। এ জন্য তারা নেন বাড়তি প্রস্তুতি। তিনি বাংলা নববর্ষে যে ফুলগুলোর চাহিদা রয়েছে সেগুলো ফুল চাষীদের কাছে আগেই অর্ডার দিয়ে রেখেছেন।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে শাহবাগে ফুলের ব্যবসা করেন গোলসা বেগম (৩৮)। মায়ের সঙ্গে মাঝে মাঝে দোকানে সময় দেন গোলসা বেগমের মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফলপ্রার্থী সাবা ইসলাম (১৬)। সাবা ইসলাম বলেন, ‘পয়লা বৈশাখে ফুলের তৈরি মাথার রিংয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। বিভিন্ন ধরনের মাথার রিং তৈরি করা হয়। কিছু মাথার রিং ধবধবে সাদা ফুল দিয়ে তৈরি, কিছু মাথার রিং হলুদ মিক্স, আবার কিছু মাথার রিংয়ে করা হয় জারবারা ফুলের ব্যবহার।’ তিনি বলেন, ‘রিংয়ের ধরন অনুযায়ী দামও আলাদা হয়। সাধারণত মাথার রিংয়ের দাম ১০০ থেকে ৩০০ টাকা হয়ে থাকে।’
সাবা জানান, অন্য সাধারণ দিনে এক থেকে দেড় হাজার টাকার ফুল বিক্রি হলেও, পয়লা বৈশাখ ঘিরে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হতে পারে তাদের দোকানে। পয়লা বৈশাখে পূজার জন্য হিন্দু ধর্মালম্বীরা গাঁদা ফুল ও বেলি ফুল সংগ্রহ করে থাকেন। এছাড়া অন্যান্য ফুলের মধ্যে এই সময় চাহিদা থাকে রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ প্রভৃতি ফুলের।
শাহবাগে ফুলের ব্যবসা করেন মঞ্জুর খান (৫৮)। তিনি দীর্ঘ ২০ বছর আগে ‘সাদিয়া ফুল শপ’ নামে ছোট্ট দোকান নিয়ে ফুল ব্যবসা শুরু করলেও, এখন পাইকারি ফুল ব্যবসায়ী। মঞ্জুর খান বলেন, ‘ফুলের ব্যবসা হলো কাঁচামালের ব্যবসা, অনেক সময় বিক্রি না হলে মাল নষ্ট হয়।’
মঞ্জুর খান রাইজিংবিডিকে জানান, পয়লা বৈশাখকে ঘিরে ইতিমধ্যে ছোট দোকানিরা তার প্রতিষ্ঠানে পাঁচ লাখ টাকার ফুলের অর্ডার দিয়েছেন। আরো অর্ডার পাবেন। এবার পয়লা বৈশাখে ফুল বেচাকেনা বেশ জমবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ এপ্রিল ২০১৮/ফিরোজ/তারা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন