ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সাবধান, এসবেও আসক্তি হতে পারে

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাবধান, এসবেও আসক্তি হতে পারে

প্রতীকী ছিবি

এস এম গল্প ইকবাল : অ্যাডিকশন বা আসক্তি শব্দটি শুনলে আমাদের মনে জুয়া, মদ্যপান এবং মাদকের কথা আবির্ভূত হতে পারে। কিন্তু এমন অনেক অভ্যাস, ব্যবহার এবং এমনকি সৌন্দর্যবর্ধক দ্রব্যসামগ্রী রয়েছে যা বিস্ময়করভাবে অ্যাডিক্টিভ বা আসক্তি-সৃষ্টিকারী হতে পারে।

১. চ্যাপস্টিক

শিকাগোর নর্থওয়েস্টার্ন মেমোরিয়াল হেলথকেয়ারের ডার্মাটোলজিস্ট সামান্থা কনরাডের মতে, ‘যদি আপনি কোনো বন্ধুর সঙ্গে বসেন এবং দেখেন যে সে চ্যাপস্টিক প্রয়োগ ও পুনঃপ্রয়োগ করছে, অথবা অন্য কোনো ধরনের লিপ বাম ব্যবহার রিপিট করছে, তাহলে এর পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণ আছে।’ স্টার্টার বা আরম্ভকারীদের ক্ষেত্রে কিছু প্রোডাক্টের উপাদান অতি দ্রুত শুকিয়ে যেতে পারে, যা আপনাকে এসব জিনিস পুনঃপ্রয়োগের দুষ্ট চক্রের দিকে নিয়ে যাবে। ডা. কনরাড বলেন, ‘এছাড়া কেউ তার ঠোঁটে টেক্সচারাল অনুভূতিতে খুব বেশি অভ্যস্ত হয়ে পড়লে সে চ্যাপস্টিকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। যখন তাদের কাছে এই প্রোডাক্ট থাকে না, তারা অনুভব করে যে কোনো কিছু মিসিং।’

২. টিথ হোয়াইটেনিং

কফি এবং রেড ওয়াইনের দাগ দূর করার জন্য অনেকে নিয়মিত হোয়াইটেনিং স্ট্রিপ ব্যবহার করেন। এটি এমন একটি অভ্যাস যা আপনাকে দাঁত সাদা করার প্রতি আসক্ত করে তুলবে। ডালাসে অবস্থিত জেফারসন ডেন্টাল ক্লিনিকের ডেন্টাল সার্জারির ডাক্তার লেসলি রেনি টাউনসেন্ড বলেন, ‘এমনকি এটির জন্য আলাদা একটি শব্দ রয়েছে এবং তা হচ্ছে ব্লিচোরেক্সিয়া, দাঁত সাদা করার প্রতি আসক্তিকে ব্লিচোরেক্সিয়া বলে।’ তিনি যোগ করেন, ‘হোয়াইটেনিং প্রোডাক্টের (যেমন- লেজার, স্ট্রিপ, জেল, রিন্স অথবা পেস্ট) অতিরিক্ত ব্যবহার বা ভুল ব্যবহার উল্লেখযোগ্য সেনসিটিভিটি, দাঁত ব্যথা, মাড়ির ইরিটেশন এবং দুর্বল এনামেলের কারণ হতে পারে, যা প্রায়ক্ষেত্রে সাময়িক, কিন্তু কখনো কখনো দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘দাঁতকে ঝকঝকে দেখানোর জন্য হোয়াইটেনিং প্রোডাক্ট স্ট্রিপ ব্যবহারে সময়ের স্রোতে দাঁত ডিমিনারেলাইজ হতে থাকে।’

৩. ময়েশ্চারাইজার

যদি আপনার দিনে দুইবারের বেশি ময়েশ্চারাইজ করার প্রবণতা থাকে, তাহলে এ অভ্যাস ত্যাগ করুন। প্রকৃতপক্ষে, আপনি যা করছেন তার প্রয়োজন নেই এবং অত্যধিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের কারণে আপনার ত্বক প্রোডাক্টটির প্রতি আসক্ত হয়ে যেতে পারে। নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত মাউন্ট সিনাই হসপিটালের ডিপার্টমেন্ট অব ডার্মাটোলজির কসমেটিক অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল রিসার্চের পরিচালক এবং মেডিক্যাল ডাক্তার জশুয়া জাইকনার বলেন, ‘কিছু থিওরি প্রচলিত আছে যে ঘনঘন থিক ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার ত্বককে অলস করে তুলে। বিরূপ আবহাওয়ায় ত্বক স্বাভাবিকভাবে পর্যাপ্ত হাইড্রেশন লেভেল বজায় রাখতে পারে না। যদি আপনি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করেন, তাহলে আপনার ত্বক দ্রুত শুষ্ক হয়ে যাবে এবং ত্বকে প্রদাহ হবে।’ প্রকৃতপক্ষে, একটি মিথ আছে যে প্রত্যেকের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন। ডা. জাইকনার বলেন, ‘আপনার একজিমার মতো চর্মরোগ থাকলে, অথবা আপনার ত্বকে শুষ্কতা, দৃশ্যমান আঁশ, লালতা কিংবা চুলকানি থাকলে ময়েশ্চারাইজার সাহায্য করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু আপনার ত্বক দেখতে স্বাভাবিক এবং ত্বকে অনুভব স্বাভাবিক হলে আপনার নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।’ যদি আপনি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে চান, তাহলে ব্রিদঅ্যাবল প্রোডাক্ট বেছে নিন যা হালকা এবং ছড়ানো সহজ। জাইকনার বলেন, ‘নতুন এ ধরনের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে আপনি পিচ্ছিল ও ভারী অনুভূতি ছাড়াই চিরাচরিত উপকারিতা পাবেন।’

৪. ভাইজিন

যদি চোখের অ্যালার্জির কারণে আপনার চোখ লাল হয় এবং আপনি রুটিনমাফিক ভাইজিনের মতো ওভার-দ্য-কাউন্টার চোখের ড্রপ ব্যবহার করেন, তাহলে আপনি সম্পূর্ণভাবে এসব ড্রপের প্রতি আসক্ত হয়ে যাবেন। ভাইজিন চোখের লালতা দূর করে, এ কৃতিত্ব ভাইজিনে থাকা কিছু সক্রিয় উপাদানের, যেমন- টেট্রাহাইড্রোজোলাইন (একটি ভ্যাসোকন্সট্রিকটর বা রক্তনালী সংকোচক যা কনজাঙ্কটিভ্যাল রক্তনালীকে সংকুচিত করে, তাই তারা অধিকতর ক্ষুদ্র আকারে প্রকাশিত হয় এবং এ কারণে আপনার চোখে লালতা কম দেখা যায়)। ওরিগনের পোর্টল্যান্ডে অবস্থিত ওরিগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির অপথ্যালমোলজি বিভাগের ইন্সট্রাক্টর এবং অপটোমেট্রির ডাক্তার কেলি ভোল্টজ বলেন, ‘কিছু রোগী দেখতে পায় যে তাদেরকে ভাইজিন ব্যবহারের হার বাড়াতে হচ্ছে, কারণ ভাইজিনের রিবাউন্ড ইফেক্ট (ব্যবহার বন্ধ বা স্থগিত জনিত নেতিবাচক উপসর্গ বৃদ্ধি) আছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘কিছু লোকের ক্ষেত্রে ভাইজিনের বর্ধিত ব্যবহার লালতা সৃষ্টি করতে পারে, রোগীরা লক্ষ্য করতে পারে যে প্রোডাক্টটি প্রথমদিকে চোখের লালতা দূর করেছিল সেই প্রোডাক্টটিই লালতা সৃষ্টিতে অবদান রাখছে।’

৫. প্লাস্টিক সার্জারি

কারো কারো ক্ষেত্রে প্লাস্টিক সার্জারি দ্রুত আসক্তিতে পরিণত হতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার বিভারলি হিলস প্লাস্টিক সার্জারি গ্রুপের প্লাস্টিক সার্জন জন লেইক বলেন, ‘প্রায়ক্ষেত্রে বোটক্স সেবা নিতে চাওয়া রোগীরা নিজেদেরকে নৈসর্গিক শোভাময় হিসেবে দেখাতে চায়। বোটক্স তাদের মুখের রেখা দূর করলেও তাদের অনুভূতি প্রকাশের সময় ছোট রেখা দেখা যায় এবং তারা এসব রেখাও দূর করতে চায়।’ তিনি বলেন, ‘অন্য একটি কমন অ্যাডিকশন হচ্ছে ফেসিয়াল ফিলার (বিশেষ করে, ঠোঁট ও গালে) এবং লাইপোসাকশন।’ তিনি যোগ করেন, ‘প্রসিডিউরাল অ্যাডিক্টরা সাধারণত তাদের অ্যাডিকশনের ব্যাপারে অসচেতন থাকে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা প্লাস্টিক সার্জন দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়। এ ধরনের রোগীরা এক ডাক্তার থেকে অন্য ডাক্তারের কাছে ছুটতে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত কেউ তারা যা চায় তা করে দিতে সম্মত হয়। সাধারণত সার্জন বা ইনজেক্টর তাদের অ্যাডিকশন ধরতে পারে।’

৬. ট্যাটু

আনুমানিক ৪৫ মিলিয়ন আমেরিকানদের অন্তত একটি করে ট্যাটু রয়েছে এবং এ সংখ্যার ৩২ শতাংশ বলে যে তারা ট্যাটুর প্রতি আসক্ত। প্রশ্ন হচ্ছে- কেন? অ্যামারস্টে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটসের অধ্যাপক ড. কিরবি ফারেল বলেন, ‘ট্যাটুর প্রতি অ্যাডিকশন হচ্ছে সাইকোসোম্যাটিক বা মনোদৈহিক। আপনি কি রকম চিন্তা করছেন তার উপর ভিত্তি করে আপনার শরীর প্রভাবিত হচ্ছে। যদি আপনি ধারণা করেন যে ট্যাটু আপনার সম্পর্কে মানুষের উপলব্ধি পরিবর্তন করতে পারে, আপনি বিশ্বাস করতে পারেন যে আপনার ত্বকে একটি নতুন ইমেজ অন্যদের ইম্প্রেস করবে ও আপনার আত্মসম্মানবোধ বাড়াবে এবং আপনি বেশি করে ট্যাটুর প্রতি ঝুঁকবেন।’ তিনি যোগ করেন, ‘আপনি আরো বেশি ইমেজ খুঁজতে এখানে সেখানে যাবেন, না পেলে বিষণ্ন হবেন বা নিজের প্রতি রাগান্বিত হবেন এবং আয়নায় নিজের সুখী চেহারা দেখতে পাবেন না।’

৭. শপিং

যদি আপনার রিটেইল থেরাপির (ভালো অনুভূতি বা নিজেকে সুখী রাখতে শপিং চর্চা) প্রয়োজন হয়, তাহলে তা বিতাড়ন করুন। ‘টু বাই অর নট টু বাই: হোয়াই উই ওভারশপ অ্যান্ড হাউ টু স্টপ’র লেখক এপ্রিল লেন বেনসন বলেন, ‘শপিংয়ের প্রতি আসক্ত হওয়া বা শপিং অ্যাডিক্ট হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘অনেকে নিজের মধ্যে ভালো অনুভূতি আনতে কিংবা অধিক সিকিউর অনুভব করতে অর্থাৎ নতুন ড্রেস নিজের অধিকারে আনতে শপিং করে।’ তিনি যোগ করেন, ‘শপিং নিজেকে শান্ত রাখা অথবা নিয়ন্ত্রণে রাখা কিংবা মনের কোনো শূন্যতা পূরণের চেষ্টার উপায় হতে পারে।’ কিভাবে বুঝবেন যে আপনি একজন শপিং অ্যাডিক্ট? বেনসন বলেন, ‘যদি শপিং করে আপনার মেজাজ পরিবর্তন হয়, আপনি শপিং থামাতে চান কিন্তু ব্যর্থ হন, আপনি ক্রয় বা বিলের কথা গোপন রাখেন এবং শপিংয়ের ব্যাপারে অন্যদের সঙ্গে মিথ্যা বলেন, তাহলে ধরে নিতে পারেন যে আপনি একজন শপিং অ্যাডিক্ট।’

৮. এক্সারসাইজ

এক্সারসাইজ অ্যাডিকশন বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং এক্সারসাইজ অ্যাডিকশনের মানে হচ্ছে, আপনার দিন সম্পূর্ণ মনে হবে না যদি না আপনি দৌঁড়ান বা জিমে এক্সারসাইজ করেন কিংবা বাইক চালান। সান ডিয়েগোর এক্সারসাইজ ফিজিওলজিস্ট রাশেল স্ট্রব বলেন, ‘এক্সারসাইজ অ্যাডিক্টরা মনে করে যে এক্সারসাইজ তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘তারা আবেগ বা মানসিক নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবেও এক্সারসাইজ করেন।’ কিভাবে বুঝবেন আপনি এক্সারসাইজ ফ্যানাটিক? স্ট্রব বলেন, ‘যদি নিজেকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য আপনি এক্সারসাইজ বৃদ্ধি করেন কিংবা হঠাৎ এক্সারসাইজ কমিয়ে দিলে আপনি বিরক্ত বা বিষণ্ন হন, তাহলে বিবেচনা করতে পারেন যে আপনার এক্সারসাইজের প্রতি আসক্তি আছে।’

৯. ট্যানিং

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্যানিং অ্যাডিকশন খুব কমন, বিশেষ করে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়স্ক পুরুষ ও নারীদের মধ্যে। দ্য স্কিন ক্যানসার ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ডেবোরাহ এস. সারনফ বলেন, ‘জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টার কর্তৃক পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় পাওয়া যায় যে, গতবছর ট্যানিং বেড ব্যবহার করা প্রতি ৫ জন শ্বেতাঙ্গ নারীর একজনের মধ্যে ট্যানিং অ্যাডিকশনের লক্ষণ দেখা গেছে।’ ট্যানিং কিভাবে খারাপ? যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ৪১৯,০০০ এরও বেশি স্কিন ক্যানসারের রোগী ইনডোর ট্যানিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কিভাবে জানবেন যে আপনি ট্যানিংয়ে আসক্ত? সারনফ বলেন, ‘এটি বোঝার জন্য কিছু জোরালো লক্ষণ রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আল্ট্রাভায়োলেট লাইট এন্ডোরফিন নামক ভালো অনুভূতির হরমোন রিলিজের জন্য উদ্দীপনা যোগায়। সুখের এই অনুভূতি পাওয়ার জন্য আপনার মধ্যে আকাঙ্ক্ষা জাগতে পারে। যদি দেখেন যে অধিক হারে ট্যানিং স্যালুনে যাচ্ছেন কিংবা দীর্ঘসময় ট্যানিং বেডে অবস্থান করছেন, তাহলে তা ট্যানিং আসক্তির লক্ষণ হতে পারে।’

১০. অনলাইন ডেটিং

বর্তমানে অনলাইনে ডেটিং বাম বা ডানে সোয়াইপ করার মতো সহজ হয়ে গেছে, তাই অনলাইন ডেটিং খুব আসক্তির বিষয় হতে পারে। এলিট ডেটিং ম্যানেজারসের প্রতিষ্ঠাতা, ম্যাচমেকার এবং রিলেশনশিপ কোচ ইসাবেল জেমস বলেন, ‘লোকজন অনলাইন ডেটিংয়ে আসক্ত হচ্ছে, কারণ আমাদের অনেকের মধ্যে মিস্টার বা মিসকে অনুসন্ধানের গভীর ফ্যান্টাসি থাকে, যে জীবনকে বদলে দেবে, উদ্ধার করবে কিংবা জীবনকে উন্নত করবে।’ তিনি বলেন, ‘জীবনের সবচেয়ে চমৎকার বিষয়সমূহের একটি হচ্ছে প্রেমে পড়া এবং ডেটিং অ্যাপ অ্যাডিকশন এই আকাঙ্ক্ষাকে বাড়িয়ে দিতে পারে।’

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ ডিসেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়