মুখের থ্রাশ থেকে মুক্তির উপায়
প্রতীকী ছবি
এস এম গল্প ইকবাল : মুখের থ্রাশ হচ্ছে, একপ্রকার ইনফেকশন যা ক্যানডিডা ফাঙ্গাস বা ইস্ট দ্বারা সংঘটিত হয়। মুখের থ্রাশ হলে মুখে বা জিহ্বায় সাদা প্রলেপ তৈরি হয়, যা ব্যথাযুক্ত হতে পারে। এটি ফাউল ব্রেথ বা দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাসেরও উৎস হতে পারে।
‘সুপার ওমেন আরএক্স’ এর লেখক এবং সুসংহত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ তাজ ভাটিয়া বলেন, ‘মুখে শর্করা বৃদ্ধির কারণে অথবা পিএইচ পরিবর্তনের ফলে থ্রাশ বিকশিত হয়।’ এই উভয়প্রকার ফ্যাক্টর মুখে ব্যাক্টেরিয়াল লোড বা ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যাকে প্রভাবিত করে ইস্ট বিকাশে উৎসাহিত অথবা অনুৎসাহিত করতে ভূমিকা রাখে। এই ইনফেকশন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে হয়ে থাকে অথবা সেসব ছেলেমেয়ে বা প্রাপ্তবয়স্কদের হয়ে থাকে যারা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে বা যাদের দুর্বল ইমিউন সিস্টেম আছে।
মুখের থ্রাশ দূর করতে ঘরোয়া কিছু উপায় জেনে নিন।
১. প্রোবায়োটিক অথবা দই
প্রোবায়োটিক এবং দইয়ের মধ্যে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া মাউথ থ্রাশ বা মুখের থ্রাশ দূরীকরণে সাহায্য করতে পারে। আরকানসাসের লিটল রকে অবস্থিত আরকানসাস চিলড্রেন’স হসপিটালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ক্যারি ব্রাউন বলেন, প্রোবায়োটিক বা দই মুখে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে।
২. ভালো মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি
আপনার যথাযথভাবে ফ্লসিং এবং ব্রাশিং করা উচিত। যখন আপনি ব্রাশ করবেন, তখন শুধুমাত্র দাঁত পরিষ্কারের ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে হবেন না, জিহ্বা পরিষ্কারের ব্যাপারেও নিশ্চিত হোন। মায়ো ক্লিনিকের মতে, এসব অভ্যাসের সঙ্গে অ্যান্টিসেপ্টিক মাউথওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে থ্রাশের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে।
৩. লবণ পানি
লবণের বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। মায়ো ক্লিনিকের মতে, লবণের একটি জনপ্রিয় ব্যবহার ডাক্তাররা প্রায়ই রিকমেন্ড করে থাকে: লবণ পানি দিয়ে মুখ ধৌতকরণ ইস্ট ইনফেকশনের উপসর্গ প্রশমিতকরণে সাহায্য করতে পারে এবং মুখ পরিষ্কার করে।
৪. খাদ্য পরিবর্তন
শর্করা খেয়ে ইস্টের বিকাশ সাধন হয়, তাই কারো মুখে থ্রাশ থাকলে ডাক্তাররা খাবার তালিকা থেকে শর্করার পরিমাণ কমাতে বলেন এবং সেসব মায়েদেরও শর্করার পরিমাণ কমানোর পরামর্শ দেন যাদের শিশুরা থ্রাশযুক্ত মুখ দিয়ে বুকের দুধ পান করে। ডা. ভাটিয়ার মতে, শর্করা ভোজন করে ইস্ট বিকাশ সাধন করে এবং শর্করার পরিমাণ কমালে তা থ্রাশ দূরীকরণে সহায়ক হতে পারে।
৫. বেকিং সোডা
মুখকে ইস্টের প্রতিকূল পরিবেশে রূপান্তর করতে কিছু প্রাকৃতিক চিকিৎসক দুই টেবিল চামচ বেকিং সোডা এবং এক কাপ পানির মিশ্রণ দিয়ে মুখের ভেতর মুছতে পরামর্শ দেন। এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের চিকিৎসা। শিশুদের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য পরিবর্তন এবং শ্বাসাঘাত সম্ভাবনার কারণে ডা. ব্রাউন এই চিকিৎসা শিশুদের ওপর প্রয়োগ না করতে পরামর্শ দিয়েছেন।
৬. নারকেল তেল
২০০৭ সালের এক গবেষণায় আবিষ্কার হয়, নারকেল তেল অন্ততপক্ষে কয়েক প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া হত্যা করতে সাহায্য করতে পারে। তাই নারকেল তেল দিয়ে মুখের ভেতর মুছাটা ইনফেকশনের বিরুদ্ধে একপ্রকার প্রবল যুদ্ধ।
৭. টি ট্রি অয়েল
ডা. ভাটিয়ার মতে, টি ট্রি অয়েলের অ্যান্টিসেপ্টিক উপকারিতার কারণে অনেক প্রাকৃতিক চিকিৎসক পানিতে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশ্রিত করে মুখ ধোয়ার পরামর্শ দেন।
৮. শক্তিশালী পরিষ্করণ কৌশল
শিশুদের মুখে নেওয়া যে কোনো কিছু (যেমন- চামচ, প্যাসিফাইয়ার, মায়ের স্তন) অত্যন্ত পরিষ্করণ পুনরায় ইনফেকশন ও থ্রাশ হ্রাসে সাহায্য করতে পারে। ডা. ব্রাউন বলেন, ইস্টের পরিমাণ কমাতে শিশুরা যেসব জিনিস মুখে নেয় (যেমন- বোতল নিপল এবং প্যাসিফাইয়ার) তা ফুটন্ত পানি বা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
* অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের ব্যবহার
ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি মুখের থ্রাশ দূরীকরণে সাহায্য করলেও কিছু ক্ষেত্রে থ্রাশ পুরোপুরি ক্লিয়ার করতে অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের জন্য আপনার ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন হবে। ডা. ব্রাউন বলেন, ‘মুখের থ্রাশ বা সাদা প্রলেপ বিস্তৃত হলে নাইস্টাটিনের মতো অ্যান্টি-ইস্ট এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ওষুধের প্রয়োজন হবে।’ তিনি যোগ করেন, নাইস্টাটিন ইস্টের সংস্পর্শে সরাসরি কাজ করে, তাই এটি সাদা প্রলেপে প্রয়োগে নিশ্চিত হোন এবং ডাক্তার দৈনিক যতবার প্রয়োগ করতে বলেছেন ততবার প্রয়োগ করুন। আপনি মাউথ থ্রাশ আছে এমন শিশুকে বুকের দুধ পান করালে আপনার স্তনে মাখার জন্য আপনার ডাক্তার আপনাকে অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম প্রেসক্রাইব করতে পারেন, যা থ্রাশ পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা হ্রাস করে।
তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ নভেম্বর ২০১৭/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন