ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নিরাপত্তা : এপিজিকে আশ্বস্ত করল সরকার

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০১, ৬ অক্টোবর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নিরাপত্তা : এপিজিকে আশ্বস্ত করল সরকার

কেএমএ হাসনাত : পরপর দু’জন বিদেশী নাগরিক খুন হওয়ার পর বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে শংকিত এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানিলন্ডারিং (এপিজি)। এ বিষয়ে সংস্থার পক্ষ থেকে নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।

 

মানিলন্ডারিং ও জঙ্গী অর্থায়নের সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখতে আগামী ৯ অক্টোবর সংস্থার আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা। তার আগে সংস্থার পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিয়ে তারা সরকারকে এ শঙ্কার কথা জানিয়েছে।

 

তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বাংলাদেশে সফরকালে পূর্ণ নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাদের জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ সফরের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাদের নিরাপত্তায় কোন ঘাটতি থাকবে না। এরই মধ্যে সংস্থার প্রতিনিধি দলের পূর্ণ নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

 

‘এপিজি’ হচ্ছে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (মানি লন্ডারিং) ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সংস্থা (এফএটিএফ)-এর আঞ্চলিক সংস্থা। এর কাজ হচ্ছে, বিভিন্ন দেশে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইনি দুর্বলতা ও ঝুঁকি  মোকাবিলায় বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি সেগুলো বাস্তবায়নে সহায়তা করা। ১৯৮৯ সালে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সংস্থাটি মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কাজ করে আসছে।

 

এপিজি’র বাংলাদেশ সফরকালে নিরাপত্তার বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম বলেন, তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। সার্বক্ষনিক তাদের কিভাবে নিরাপত্তা দেওয়া যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে আসার পর তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোন শংকায় পড়তে হবে।

 

সূত্র জানায়, মানিলন্ডারিং ও জঙ্গী তথা সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো খতিয়ে দেখতে আগামী শুক্রবার বাংলাদেশে আসার কথা এপিজি’র আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের। এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড শ্যানন। প্রতিনিধিদলে ভারত, নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ার লোক থাকবে।

 

তিনি বলেন, সফরকালে প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করবে।

 

গুলশানে ইতালির নাগরিক খুন হওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় এবং রংপুরে একজন জাপানি নাগরিকের খুন হওয়ার ঘটনা সারা বিশ্বে বাংলাদেশে বিদেশীদের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের চলাচলের ওপর সতর্ক বার্তা জারি করেছে।  এপিজি’র পক্ষ থেকে এ বিষয়গুলোর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে।

 

সূত্র জানায়, নিরাপত্তার বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়েই সংস্থাটি তাদের প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশে পাঠাতে চায়। এজন্য সরকারের কাছে কয়েকটি প্রশ্ন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সফরের জন্য যথাযথ নিরাপদ কি না। এপিজি’র নিরাপত্তায় সরকার কি ব্যবস্থা নেবে?

 

সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে অবস্থানের সময়ে এপিজি’র সদস্যদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এখানে ভ্রমণের সময় তাদের নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি হবে না। এমনকি নিরাপত্তা কথা বিবেচনায় এপিজি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যেসব বৈঠক করবে সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়েই অনুষ্ঠিত হবে। চলাচলের সীমাবদ্ধতার কারণে এখানে তাদের নিরাপত্তা কোনো অভাব হবে না।

 

এছাড়া নিরাপত্তা সংক্রান্ত যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে তার বিস্তারিত ই-মেইলে এপিজিকে জানানো হবে। তবে যেহেতু এপিজি’র প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকবেন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ডেভিড শ্যানন, তাই তার দেশ থেকে যদি কোন সমস্যা করে তাহলে বাংলাদেশের কিছু করার থাকবে না।

 

এপিজি’র বাংলাদেশ সফর সরকারের জন্য অনেক গুরুত্ব বহন করে। কারণ, মানিলন্ডারিং ও জঙ্গী অর্থায়নে যেসব সাফল্য সরকার অর্জন করেছে তার সবকিছুই ম্লান হয়ে যেতে পারে এপিজি’র রিপোর্টে। এখানে অবস্থানের সময় এপিজি প্রতিনিধি দলটি সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যে ধারাবাহিক বৈঠক করবে তার ফল নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে এর প্রধান কার্যালয়ে। তার ওপর ভিত্তি করে এপিজি সরকারকে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের পরামর্শ দেবে।

 

সূত্র জানায়, নেতিবাচক প্রতিবেদন বাংলাদেশকে ধূসর তালিকাভুক্ত করতে পারে। যা থেকে বের হতে সরকারকে আবারো অনেক শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত ‘ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ)-এর প্ল্যানারি সভায় জঙ্গী ও সন্ত্রাসী অর্থায়নকারী দেশের ‘গ্রে লিস্ট’ (ধূসর তালিকা) থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। এখন বাংলাদেশ কোন তালিকায় নেই। কিন্তু মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ  বিষয়ে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে বাংলাদেশের আবারও ধূসর তালিকায় চলে যাবার আশঙ্কা রয়েছে।

 

এদিকে, এপিজি’র প্রতিনিধি দলের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পাঠানো এ চিঠিতে বলা হয়েছে, এপিজি’র আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আগামী ১১-১২ অক্টোবর বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রম ইভাল্যুয়শনের লক্ষ্যে অন-সাইট ভিজিট করবে।

 

এলক্ষ্যে প্রতিনিধি দলটি ৯ তারিখ আসবে এবং ২৩ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবে। বাংলাদেশ সফরকালে প্রতিনিধি দলটিকে (৯ তারিখে ঢাকা শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে আগমন হতে ২৩ অক্টোবরে যাওয়া পর্যন্ত) সার্বক্ষনিক যথাযথ নিরপত্তা দেওয়ার কথা বলা হয় চিঠিতে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ অক্টোবর ২০১৫/হাসনাত/নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়