ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

রাস্তায় হঠাৎ পাওয়া বন্ধু

রণজিৎ সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০০, ৩ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাস্তায় হঠাৎ পাওয়া বন্ধু

রণজিৎ সরকার : আসাদ গেট থেকে হেঁটে যাচ্ছি। সংসদ ভবনের দিকে। পশ্চিম পাশে আসতেই অবাক হলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখি দুজন মেয়ে। আমার সঙ্গে আর কেউ নেই। আমি একা। কেন যেন মনে হলো, মেয়েরা কিছু বলবে। আবার মনে হলো, ওদের জন্য হয়তো অন্য কেউ অপেক্ষা করছে। সংসদ ভবনের সামনে।

 

ভাবলাম, তাদের আগে যাওয়ার সুযোগ করে দেই। আমি পরে যাই। তাদের পেছনে গেলে স্বস্তি পাব আমি।

 

হাতের ডান পাশে অবশ্য ফুসকার দোকান। কিছুদূর যাওয়ার পর ফুসকার খাওয়ার অজুহাতে বসে গেলাম ফুসকার দোকানে। দোকানে গিয়ে দোকানদার মামাকে বললাম, মামা এক প্লেট ফুসকা দাও। খুব তাড়াতাড়ি।’

 

দোকানদার মামা বললেন, ‘একটু অপেক্ষা করেন মামা। রেডি করি।’
ঠিক আছে। একটু তাড়াতাড়ি করো।

 

হঠাৎ দেখি মেয়েরা ফুসকার দোকানে এসে বসল। আমি এবার সত্যি সত্যি অবাক হলাম। অবশ্যই এদের কোনো উদ্দেশ্য আছে। আমি ভাবলাম, মেয়েরা আমার সঙ্গে যেন কথা না বলতে পারে। সেজন্য আমি মাথা নিচু করে মোবাইল বের করলাম। মোবাইলে নম্বরগুলো দেখতে লাগলাম। কিছু বুঝতে পারছি না। ভাবলাম, ফুসকা না খেয়ে উঠে যাব কি না। ফুসকা না খেয়ে গেলে তো আবার দোকানদার মামা যে কি বলে, বিল ঠিকি দিতে হবে।  তার চেয়ে ফুসকা খেয়ে যাই। এর মধ্যে যদি মেয়েরা কিছু না বলে তাহলে ভালোই হবে। হঠাৎ একটু মাথা তুলে তাকিয়েছি, তখনি মেয়েরা হেসে ফেলল। আমি লজ্জা পেলাম। তবু বিষয়টা বুঝতে পারছি না। আসলে কী ঘটতে পারে।
আমি বললাম, মামা ফুসকা তৈরি করা হয়নি?
দোকানদার মামা বললেন, ‘এই তো মামা হয়ে গেছে।’
মেয়েরা বলল, ‘মামা আমাদের প্লেট রেডি হয়েছে?’
দোকানদার বললেন, ‘এই তো তিন প্লেট একসঙ্গে রেডি করছি।’

 

আমি আবার মোবাইল দেখার ভান করে চোখ বাঁকা করে তাকালাম। মেয়েরা কী করে। দেখি তারা আমার মতো মোবাইল দেখছে। ভাবলাম, তারা হয়তো মোবাইলে ফেসবুক উইজ করছে। আমি আবার মাথা নিচু করে থাকলাম।  এর মধ্যে দোকানদার মামা প্লেট নিয়ে এসে বললেন, ‘মামা, এই যে আপনার ফুসকার প্লেট।’

 

আমি হাত এগিয়ে দিয়ে প্লেট নিলাম। আমাকে দেওয়ার পর  তাদের দিল। খেতে শুরু করলাম। ওরাও খেতে শুরু করেছে। ভাবলাম, খুব দ্রুত খাওয়া শেষ করব। তাদের আগে চলে যাব। পরে যেন তারা আমাকে কাছে না পায়। খাওয়া শেষ করার চেষ্টা করলাম।  খাওয়া প্রায় শেষ।  হঠাৎ একটা মেয়ে চিৎকার করল। আমি অবাক হলাম। ঘটনা কী মেয়েটি চিৎকার করল কেন?’

 

আশপাশের লোকজন আসার আগেই দৌড়ে চলে আসতে চাইলাম। কিন্তু হঠাৎ পাশের মেয়েটা বলল, ‘কী হয়েছে তোর, চিৎকার করছিস কেন?’
মেয়েটা বলল, ‘ ঝাল লেগেছে।’
‘এই মামা, পানি দাও তো?’
পাশ দিয়ে যারা হেঁটে যাচ্ছিল, তারা কাছে এলো দুইচার জন।  পানি দিতে দিতে বলল, ‘কোনো সমস্যা হয়নি। আপনারা চলে যেতে পারেন। ওর ঝাল লেগেছে।’

 

কিছু লোক চলে গেল। আর দুই-একজন দোকানে বসল। ফুসকা খাওয়ার জন্য হয়তো। আমি ওদের কাণ্ড দেখে হেসে ফেললাম। মাথা নিচু করে খাওয়া শেষ করলাম। আর ভাবলাম, এই সুযোগে আমি চলে যাই। বেঞ্চ থেকে উঠলাম। এমন সময় মেয়েটি বলল, ‘কোথায় যান?’

 

আমি এদিক-ওদিক তাকালাম। ভাবলাম, আমাকে বলছে কী-না। মেয়েটি বলল, ভদ্রলোক আপনাকেই বলছি।’

 

অবাক হলাম। তাকালাম তাদের দিকে। আমরা একসঙ্গে ফুসকা খেলাম। আমরা কি বন্ধু হতে পারি না আপনার?’
আমি তো আপনাদের চিনি না। আপনারা আমার বন্ধু !

 

‘আজ বন্ধু দিবস। আমাদের দুজনের ইচ্ছা। সংসদ ভবনের রাস্তায় যাকে পাব আজ তাকেই নতুন বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব দেব। আপনি রাজি আছেন তো?’
আমি বাধ্য হয়ে মাথা নাড়ালাম।
মেয়েটি বলল, ‘আপনার ফেসবুক আইডি বলেন।’
বললাম।
অন্য মেয়েটি বলল, ‘মোবাইল নম্বর দেন?’
দিলাম মোবাইল নম্বর।
আবার বলল, ‘এবার ফুসকার বিলটা দেন।’
আচ্ছা, দিচ্ছি।
বাই বন্ধু, বলে মেয়ে দুটি চলে গেল। আমি অবাক  হলাম। দোকানদার মামাকে বললাম, মামা এরা আসলে কারা?
দোকানদার মামা বললেন, ‘আপনি হয়তো নতুন। তাই চিনতে পারেননি।’

 

টাকা দিয়ে বললাম, মামা বুঝতে পেরেছি। এই বলে খামারবাড়ির দিকে রওনা হলাম। খামাররাড়ি থেকে রিকশা নিয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের দিকে।

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ আগস্ট ২০১৫/রণজিৎ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়