ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কঠোর হুঁশিয়ারির পরও তৃণমূল আ.লীগে কোন্দল

এনআর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩০, ১৭ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কঠোর হুঁশিয়ারির পরও তৃণমূল আ.লীগে কোন্দল

নৃপেন রায় : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কঠোর হুঁশিয়ারির পরও দলটির তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কোন্দল থামছে না। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি ঘটনায় এ চিত্র স্পষ্ট হয়েছে।

 

গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন হয়। এতে প্রথমবারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের।

 

২৪ অক্টোবর দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে একটি কমিউনিটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ওবায়দুল কাদের। সেদিন নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়ে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেন দলটির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক।

 

পরবর্তী সময়েও বিভিন্ন সভা ও আলোচনায় দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে শক্ত অবস্থানের কথা জানান ওবায়দুল কাদের। রাজধানীর গুলিস্তানে হকার উচ্ছেদকালে অস্ত্রপ্রদর্শনের দাযে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে বহিষ্কারের মধ্যে দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের সামনে কঠোরতার উদাহরণও দেন তিনি।
জেল হত্যা দিবসে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। সম্মেলনের পর এটা আমাদের প্রথম অ্যাকশন। যারা শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও ব্যবস্থা নেবে। অপরাধীর কোনো ছাড় নেই।

 

বুধবার যশোর সার্কিট হাউজে তিনি বলেন, আমি এসেছি আগামী দুই বছর দল গোছানোর কাজে। যারা দলের নিয়মশৃঙ্খলা মানবেন না, তাদের দলে থাকার কোনো দরকার নেই।
ওই দিন বিকেলে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দলের অভ্যন্তরের সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান তিনি।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কয়েকজন নেতা বলেন, সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে যে অভিযোগ আছে তা দলের হাইকমান্ডকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ ছাড়াও আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনসহ আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা দলীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থে কোন্দলে জড়িয়ে পড়া শুরু করছে। আমরা শিগগিরই তৃণমূলের এসব সমস্যা নিরসনে দলীয় সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করে করণীয় ঠিক করব।

 

ইতিমধ্যে আমরা স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোন্দল ও দ্বন্দ্বের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। আশা করছি, ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে দেশজুড়ে সাংগঠনিক সফর শুরু হলে এসব সমস্যার সমাধান হবে। কারণ, আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য হচ্ছে, সময় হলেই দলীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। সারা দেশে এরকম দু-একটা ঘটনা এতো বড় দলে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

 

সম্প্রতি তৃণমূল নেতাদের কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সারা দেশে কয়েকটি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। গত ১৪ নভেম্বর নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নীলক্ষা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম সরকার এবং প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হক সরকারের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে চারজন নিহত ও প্রায় ৪৫ জন আহত হয়।

 

ময়মনসিংহের ত্রিশালে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতার আধিপত্য বিস্তারের জেরে গত ১৬ নভেম্বর সংঘর্ষে একজন নিহত হয়। স্থানীয় বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোহাম্মদ বাদল এবং ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুল বারীর দ্বন্দ্বে এ সংঘর্ষ হয়।

 

অপরদিকে গত ৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সাহেবগঞ্জ আখের খামার এলাকায় সাঁওতালপল্লিতে হামলায় তিনজন নিহত ও প্রায় ৩০ জন আহত হয়। এর পেছনেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ইন্ধনের অভিযোগ উঠেছে।

 

নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর ধারাবাহিক হামলার পেছনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল জড়িত বলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদেনে আভাস পাওয়া গেছে। ৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নাসিরনগরের স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হককে বেকায়দায় ফেলতে দলীয় একটি পক্ষ হামলায় ইন্ধন দিয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচন নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে। 

 

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনকে ঘিরে আবারও স্থানীয় আওয়ামী লীগে কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মহানগর আওয়ামী লীগ নাসিকের বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বাদ দিয়ে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার মধ্যে দিয়ে নির্বাচনের শুরুতেই কোন্দল দেখা দিয়েছে। এর নেপথ্যে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ নভেম্বর ২০১৬/এনআর/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়