আইন বিষয়ে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার
এম ওয়াহিদ তাওসিফ মুছা || রাইজিংবিডি.কম
আইন পেশায় ক্যারিয়ার অথবা নামের আগে বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, অধ্যাপক, ব্যারিস্টার, অ্যাডভোকেট পদবিগুলো দেখতে কার না ভালো লাগে। বর্তমানে চাহিদার কারণে তরুণদের অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন পছন্দের আইন পেশায়। দেশের প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
আইন বিভাগে পড়াশোনা, কর্মক্ষেত্র, সুবিধা-অসুবিধাসহ নানা প্রসঙ্গ নিয়ে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সামসুল আলম সাদ্দামের মুখোমুখী হয়ে বিস্তারিত লিখেছেন রাইজিংবিডির ডিআইইউ ক্যাম্পাস প্রতিনিধি এম ওয়াহিদ তাওসিফ মুছা৷
ওয়াহিদ তাওসিফ মুছা: কোন বিভাগের শিক্ষার্থী আইন নিয়ে পড়তে পারবেন?
সামসুল আলম সাদ্দাম: যে কোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থী বা পেশাজীবীর আইন পড়ার সুযোগ আছে। সে বিজ্ঞানের ছাত্র হোক, মানবিক, বাণিজ্য কিংবা মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের হোক না কেন। প্রথমে আপনাকে এইচএসসি পাসের পর যে কোনো সরকারি অথবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অনুষদে ভর্তি হতে হবে। এখানে আপনাকে চার বছর মেয়াদি এলএলবি অনার্স সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। আপনি ইচ্ছা করলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন। আর বাংলাদেশের প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের জন্য এলএলবি অনার্স কোর্স চালু আছে। এখানে পড়তে হলে প্রতিষ্ঠানভেদে খরচ পড়বে ৩ থেকে ৭ লাখ টাকা।
ওয়াহিদ তাওসিফ মুছা: কোথায় পড়া যাবে?
সামসুল আলম সাদ্দাম: আইন বিষয়ের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এবিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এছাড়াও দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম হলো নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশসহ আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এছাড়া আপনি চার বছর মেয়াদি এলএলবি না করেও আইন পেশায় আসতে পারেন। এজন্য আপনাকে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজ থেকে অনার্স বা ডিগ্রি পাস করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যে কোনো 'ল' কলেজে দু’বছর এলএলবি (পাস) কোর্স করতে হবে।
ওয়াহিদ তাওসিফ মুছা: কী কী বিষয়ে পড়ানো হয়?
সামসুল আলম সাদ্দাম: দেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েই অন্যতম চাহিদাসম্পন্ন বিষয় আইন। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কোর্স পড়ানো হয়। তবে সার্বিকভাবে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করতে হলে একজন শিক্ষার্থী ‘জুরিসপ্রুডেনস’, সাংবিধানিক আইন, মুসলিম আইন, হিন্দু আইন, চুক্তি আইন, টর্ট আইন, ভূমি আইন, প্রশাসনিক আইন, কোম্পানি আইন, বাণিজ্যিক আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, সাইবার ল, রেজিস্ট্রেশন আইন, পরিবেশ আইন, আয়কর আইন, সুনির্দিষ্ট কার্য-সম্পাদন আইন, ইক্যুইটি ট্রাস্ট, শ্রম আইন, অপরাধ আইন, দেওয়ানি কার্যবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, সাক্ষ্য আইন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইন, আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার আইন, ক্রিমিনোলজি, রিয়েল এস্টেট আইন, সমুদ্র আইন, আন্তর্জাতিক সংগঠন, রিফুজি ল ও গুড গভর্নেন্সসহ ইত্যাদি নানা বিষয়ে পড়ানো হয়। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আরও কিছু বিশেষায়িত বিষয় পড়ানো হয়।
ওয়াহিদ তাওসিফ মুছা: চাকরির সুযোগ কোথায়?
সামসুল আলম সাদ্দাম: এক সময় সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল আইন বিষয়ে পড়াশোনা মানেই ওকালতি করা। প্রথমত, আইনজীবী হিসেবে সফল ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা তো আছেই। কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা যেসব চাকরিতে আবেদনের যোগ্য, আইনের শিক্ষার্থীরাও সেই সব পদে অনায়াসে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। বলাই বাহুল্য, আইন পেশায় এখন যোগ হয়েছে নতুন নতুন মাত্রা ও সম্ভাবনা।
বিসিএস ও অন্য যে কোনো নন ক্যাডারের চাকরি, ব্যাংক, স্বায়ত্তশাসিত ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে আইনের ছাত্রদের অন্য ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীদের মতো সমান সুযোগ আছে। তবে বিশেষ কিছু পেশা আছে, যেখানে শুধু আইনের ছাত্ররাই কাজ করতে পারবেন, অন্যরা নয়। আইনজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিভিন্ন বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা, বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, বহুজাতিক কোম্পানি ও এনজিওতে আছে আইন কর্মকর্তা বা প্যানেল আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সুযোগ।
রয়েছে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আদালতে যোগ দেওয়ার সুযোগ। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে, আইন কলেজে আইন বিভাগের গ্র্যাজুয়েটদের শিক্ষকতার সুযোগ রয়েছে। তবে বিশেষ কিছু পেশা আছে, যেখানে শুধু আইনের স্নাতকরাই কাজ করার সুযোগ পায়। বার কাউন্সিলের অধীনে অ্যাডভোকেটশিপ পরীক্ষার মাধ্যমে নিম্ন আদালত।
ওয়াহিদ তাওসিফ মুছা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ৷
সামসুল আলম সাদ্দাম: আপনাকেও ধন্যবাদ৷
ডিআইইউ/মাহি