আমান ফিডের আর্থিক প্রতিবেদন যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি
নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি আমান ফিডের আর্থিক প্রতিবেদনে কারসাজি ও করপোরেট গভর্নেন্স পরিপালনে অসঙ্গতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ কমিটি কোম্পানিটির ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা তথ্যের সত্যতা যাচাই করবে।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন—বিএসইসির সার্ভিল্যান্স বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শামসুর রহমান, করপোরেট ফাইন্যান্স বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন ও ক্যাপিটাল ইস্যু বিভাগের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল।
গত ২২ অক্টোবর আমান ফিডের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের আদেশ জারি করে বিএসইসি। কমিটিকে আদেশ জারির ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৭ অক্টোবর তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আমান ফিডের সব আর্থিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কোম্পানিটি হিসাব কারসাজির মাধ্যমে মুনাফা বাড়িয়ে দেখিয়েছে কি না এবং আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষায় ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) অনুসরণ করেছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ও পর্ষদ কমিটি করপোরেট গভর্নেন্স রেগুলেশন যথাযথভাবে পরিপালন করেছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে।
এছাড়া, আমান ফিড আইপিওতে আসার আগে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করেছে কি না এবং পুনঃতফসিল সুবিধা নিয়ে খেলাপি নাম কাটিয়ে আইপিওতে আসার সুযোগ নিয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। বিশেষ করে এবি ব্যাংকের ২৫০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ না করা এবং ঋণ আদায়ে আমান ফিডের সম্পদ নিলামে বিক্রির বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট অডিটরের অডিট আপত্তি ও তাদের ভূমিকা কী ছিল, তাও খতিয়ে দেখা হবে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘আমান ফিডের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। কমিটি কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অসঙ্গতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে।’
এ বিষয়ে আমান ফিডের কোম্পানি সচিব শরিফুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ জানিয়েছেন, কোম্পানিগুলো যেন আর্থিক প্রতিবেদন ম্যানুপুলেট করার সাহস না পায়, সেজন্য বিএসইসিকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এর আগে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে সংগৃহীত অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার না করার পাশাপাশি কমিশনের কাছে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কারণে আমান ফিডের প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচালক বাদে) ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করে বিএসইসি।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে আইপিওর মাধ্যমে ১০ টাকা ফেসভ্যালুর সঙ্গে অতিরিক্ত ২৬ টাকা প্রিমিয়াম নিয়ে মোট ৩৬ টাকা দরে শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় আমান ফিড। আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৭০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। তবে আর্থিক প্রতিবেদনে অনেক মুনাফা দেখিয়েও কোম্পানিটি এবি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেনি। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অর্থঋণ আদালতের আওতায় আমান ফিডের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পদ নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেয়। চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বর নিলামে দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে কোম্পানি নিলামের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে। তবে উচ্চ আদালত চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এবি ব্যাংককে কমপক্ষে ৬০ কোটি টাকা পরিশোধের শর্তসাপেক্ষে স্থগিতাদেশ দিয়েছে।
ঢাকা/এনটি/রফিক
আরো পড়ুন