ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মেহেদি পাতার গ্রাম!

আরিফুল ইসলাম সাব্বির, সাভার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৮, ২৪ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১৯:০২, ২৪ আগস্ট ২০২২
মেহেদি পাতার গ্রাম!

ছবি: রাইজিংবিডি

‘হলুদ বাঁটো, মেন্দি বাঁটো, বাঁটো ফুলের মৌ’— বাঙালি বিয়ের অনুষ্ঠানে কনের হাত রাঙাতে মেহেদির প্রয়োজনীয়তা বোঝা যায় এই ঐতিহ্যবাহী গানেই। যদিও বাঁটাবাঁটির ঝক্কি কমাতে এখন বাজারে হরেক কিসিমের টিউব মেহেদি পাওয়া যায়। তবুও পাতার মেহেদির কদর কমেনি এতটুকুও। হাটে, বাজারে, শহুরে গলিতে এখন সবজির মতোই বিক্রি হয় মেহেদি। রাজধানীজুড়ে মেহেদির বড় যোগান আসে সাভার উপজেলার সালমাশি গ্রাম থেকে। মেহেদি গাছে জীবিকা নির্বাহ করা পুরো গ্রামটি পরিচিত ‘মেহেদি গ্রাম’ নামে।

গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ে মেহেদি গাছ, পাতা ও পরিচর্যাকে কেন্দ্র করে কৃষকদের ব্যস্ততা। কৃষকরা জানান, মেহেদিকে কেন্দ্র করেই ঘুরছে এখানকার অর্থনীতির চাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গত ১৫ বছর ধরে এই গ্রামে মেহেদি চাষ হচ্ছে। গ্রামের ৫০ জন কৃষক বাণিজ্যিকভাবে ২০০ বিঘা জমিতে এই গাছের চাষ করেন। তাদের একজন পেয়ার আলী জানান, এক বিঘায় চার-পাঁচ হাজার মেহেদি গাছের চারা রোপণ করা যায়। পরিচর্যা করলে একেকটি গাছ ৭-৮ বছর ধরে পাতা দেয়।

এই কৃষক আরও জানান, নিজের না থাকায় চাষের জন্য ভাড়ায় জমি নিয়েছেন। এজন্য বছরে জমিমালিককে বিঘাপ্রতি দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা। রাজধানীর রায়ের বাজারে বিক্রি হয় তার মেহেদি। প্রতিদিন সেখানে ১০০ বান্ডিল মেহেদি পাতা পাঠান তিনি। একেক বান্ডিল বিক্রি হয় ৩০-৮০ টাকায়।

পেয়ার আলী বলেন, কীটনাশকের খরচ কম হওয়ায় ও বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় গত মৌসুমে খরচ বাদে লাভ হয়েছে ২ লাখ টাকা। যদিও চলতি বছরে আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় চিন্তিত এই কৃষক।

মেহেদি গ্রামের আরেক চাষি স্বপন আলী। তার চাষ করা ১০ বিঘা জমির গাছের পাতা বিক্রি হয় সরাসরি ক্ষেত থেকেই। তিনি বলেন, চলতি বছর তিন বার বিক্রি হয়েছে মেহেদি পাতা। এতে ভালো লাভ পেয়েছি। 

স্বপন আলী বলেন, আমাদের পাশের কলাতিয়া গ্রামে আগে মেহেদি চাষ হতো। কিন্তু সেখানে কল-কারখানা হওয়ায় চাষ কমে গেছে। এ ছাড়া সেখানে সার, কীটনাশক ও জমির ভাড়াও বেশি। এজন্যও অনেকে চাষ বাদ দিয়েছেন। তার শঙ্কা, চাষ কমে আসলে মেহেদি গ্রাম তকমা হারিয়ে যেতে পারে। 

মেহেদি গ্রামে কথা হয় রাজধানীর কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল আলীর সঙ্গে। মেহেদি গ্রাম থেকে পাতা কিনে রাজধানীতে বিক্রি করেন তিনি। আব্দুল আলী বলেন, চুক্তিতে পাতা কিনি এখান থেকে। এবার এক একর মেহেদি গাছ কিনেছি ৮০ হাজার টাকায়। এখান থেকে আশা করছি ৪০ হাজার টাকা লাভ হবে। 

রাজধানীর রায়ের বাজারে সবজির সঙ্গে মেহেদি পাতা বিক্রি করেন জালাল মিয়া। তিনি বলেন, মেহেদি গ্রাম থেকে ২৫০-৩৫০ টাকায় পাঁচ বান্ডিল মেহেদি কিনি। আর বিক্রি করি ৭০০-৭৫০ টাকায়। ঈদ ও উৎসবের আগে বেশি পাতা বিক্রি হয়। ওই সময় লাভও বেশি হয়।

এদিকে, সাভারে প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে মেহেদি গাছের চাষ হয় বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজিয়াত আহমেদ। তিনি বলেন, সাধারণ শাক-সবজি চেয়ে মেহেদি চাষে লাভ বেশি হওয়ায় অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন। সালমাশি এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে মেহেদি চাষ করছে ও লাভবান হচ্ছে। এই চাষে কৃষকদের আরও প্রশিক্ষিত করতে আমরা নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। 

ঢাকা/এনএইচ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়