ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ১১ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৩:৪৩, ১১ জানুয়ারি ২০২১
বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী

দেশবরেণ্য বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের মহাপ্রয়াণের ৬ষ্ঠ বার্ষিকী আজ। ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। 

প্রধান বিচারপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা- এই দুটি পরিচয়ের বাইরেও তিনি একজন গবেষক ও লেখক। শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ, ভাষা সৈনিক, অভিধানপ্রণেতা- এমন অনেক পরিচয়েই তাকে ভূষিত করা যায়। ১৯৪৯ হতে ৫২ পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনেও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিলো তার।

প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি ১৯৯৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দেশের বিচার বিভাগের দায়িত্ব নেন। অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারেরও প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন প্রণীত হওয়ার পর তিনিই প্রথম এ দায়িত্ব পালন করেন।

উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা প্রবর্তনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা করেছেন। নির্লোভ ও নির্মোহ স্বভাবের এই মানুষটি ছিলেন অত্যন্ত উঁচুমানের লেখক। নীরবে-নিভৃতে তিনি দু'হাতে লিখে গেছেন। 

মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের প্রবন্ধ বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৪০টি। এর মধ্যে রয়েছে- মাতৃভাষার সপক্ষে রবীন্দ্রনাথ (১৯৮৩), রবীন্দ্র প্রবন্ধে সংজ্ঞা ও পার্থক্য বিচার (১৯৮৩), কোরান সূত্র (১৯৮৪), রবীন্দ্র রচনার রবীন্দ্রব্যাখ্যা (১৯৮৬), রবীন্দ্রবাক্যে আর্ট, সঙ্গীত ও সাহিত্য (১৯৮৬), বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক (১৯৯৬), যথাশব্দ (১৯৭৪), বচন ও প্রবচন (১৯৮৫), বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক (১৯৯৬), তেরই ভাদ্র শীতের জন্ম (১৯৯৬), কলম এখন নাগালের বাইরে (১৯৯৬), আমরা কি যাব না তাদের কাছে যারা শুধু বাংলায় কথা বলে (১৯৯৬), বাংলাদেশের সংবিধানের শব্দ ও খন্ডবাক্য (১৯৯৭), বাংলাদেশের তারিখ (১৯৯৮), বং বঙ্গ বাঙ্গালা বাংলাদেশ (১৯৯৯), সরকার সংবিধান ও অধিকার (১৯৯৯), মৌসুমী ভাবনা (১৯৯৯), মিত্রাক্ষর (২০০০), কোরান শরিফ সরল বঙ্গানুবাদ (২০০০), চাওয়া-পাওয়া ও না- পাওয়ার হিসেব (২০০১), স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন ও বোবার স্বপ্ন (২০০২), রবীন্দ্র রচনায় আইনি ভাবনা (২০০২), বিষন্ন বিষয় ও বাংলাদেশ (২০০৩), প্রথমে মাতৃভাষা পরভাষা পরে (২০০৪), রবীন্দ্রনাথ ও সভ্যতার সংকট (২০০৪), দায়মুক্তি (২০০৫), উন্নত মম শির (২০০৫), এক ভারতীয় বাঙালীর আত্মসমালোচনা (২০০৫), একজন ভারতীয় বাঙালীর আত্মসমালোচনা (২০০৫), কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ (২০০৬), শিক্ষার্থী ও শিক্ষাদাতাদের জয় হোক (২০০৭), বাংলার সূর্য আজ আর অস্ত যায় না (২০০৭), উদয়ের পথে আমাদের ভাবনা (২০০৭), যার যা ধর্ম (২০০৭), বাংলাদেশের তারিখ ২য় খন্ড (২০০৭), রাজার চিঠির প্রতীক্ষায় (২০০৭) এবং জাতি ধর্মবর্ণনারীপুরুষ নির্বিশেষে (২০০৭)। শিক্ষার্থী ও শিক্ষাদাতাদের জয় হোক (২০০৭), বাংলার সূর্য আজ আর অস্ত যায় না (২০০৭) ও স্বাধীনতার দায়ভার (২০০৭)।

তার কবিতাগ্রন্থ চারটি। এগুলো হলো কলম এখন নাগালের বাইরে (১৯৯৭), মনের আগাছা পুড়িয়ে (১৯৯৮), সাফ দেলের মহড়া (২০০৪) এবং মানুষের জন্য খাঁচা বানিও না (২০০৭)।

মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তার প্রকাশিত-অপ্রকাশিত-অসমাপ্ত নানা লেখায় জাতি হিসেবে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার রেখা আঁকতে চেয়েছেন। আত্মপরিচয় দিতে গিয়ে এক লেখায় তিনি বলেছেন, ‘আমার দাদার বাবা ছিলেন একজন কৃষক, আমার দাদা কৃষক-কাম-সিল্ক ব্যবসায়ী এবং আমার বাবা একজন আইনজীবী। শিক্ষাই ছিল আমার একমাত্র পুঁজি।’

তার জন্ম ১৯২৮ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার জংগীপুর মহকুমার দয়ারামপুর গ্রামে। বাবা মৌলভী জহিরউদ্দিন বিশ্বাস আইনজীবী ছিলেন। মা গুল হাবিবা ছিলেন গৃহিণী। দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে মুর্শিদাবাদ ছেড়ে জহিরউদ্দিন বিশ্বাস রাজশাহীতে চলে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। 

জীবনে সংবর্ধনা, সম্মাননা ও স্বীকৃতির অভাব নেই তার। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস গবেষণা পরিষদ পুরস্কার, ইব্রাহিম মেমোরিয়াল পুরস্কার, অতীশ দীপংকর পুরস্কার, হিউম্যান ডিগনিটি সোসাইটি থেকে সরোজিনী নাইডু পুরস্কার, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার-২০০৫, স্পেশাল কনট্রিবিউশন টু হিউম্যান রাইটস পুরস্কার ও একুশে পদকসহ আরো অনেক পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।

মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের তার কর্মকাণ্ড ও সৃষ্টির জন্য বাঙালি গণমানসে অনেক অনেক দিন জাগ্রত থাকবেন। 

ঢাকা/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়