ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মৌলভীবাজারে রাস উৎসব: মণিপুরি নৃত‌্যে ধর্ম ও আনন্দ

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২২, ১৩ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মৌলভীবাজারে রাস উৎসব: মণিপুরি নৃত‌্যে ধর্ম ও আনন্দ

দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ বলা হয় এই বৃহত্তর সিলেটকে। এ অঞ্চলের এক অনন্য ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী হচ্ছে মণিপুরি। বিশ্বনন্দিত সংস্কৃতির ধারকও বলা হয় তাদের। বেশিরভাগই সনাতন ধর্মের অনুসারী। এ সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসবের নাম ‘মহারাসলীলা’।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর ) কার্তিকের পূর্ণিমা তিথিতে উপজেলার মাধবপুর জোড়ামণ্ডপ এবং আদমপুর সানাঠাকুর মণ্ডপে শুরু হয়। পাপমোচন ও পূণ্য লাভের আশায় মণিপুরিরা দলে দলে উৎসব শুরুর দিন সকালে পূজা-অর্চনা ও পুণ্যস্নান করেন।

এবারের উৎসব ঘিরে সাদা কাগজের নকশায় নিপুণ কারুকাজে সজ্জিত করা হয়েছে মন্ডপ গুলো। বেলা ২টা থেকে রাখালনৃত্যের মধ্য দিয়ে মাধবপুর জোড়ামণ্ডপ প্রাঙ্গণে উৎসব শুরু হয়।  রাখালনৃত্যের বিভিন্ন ধাপে রাধা-কৃষ্ণের শৈশব, কৈশোর ও যৌবনকালের বিভিন্ন চিত্র ফুটে ওঠে। মণিপুরি শিশু নৃত্যশিল্পীদের সুনিপুণ নৃত্যাভিনয় মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের।

রাতভর চাঁদের আলোয় মায়াবী জোৎস্নায় নূপুরের সিঞ্চনে মুদ্রা তোলেন সুবর্ণ কঙ্কণ পরিহিতা রাধা ও গোপিনী রূপের মণিপুরি তরুণীরা। তুমুল হৈচৈ, আনন্দ-উৎসাহ, ঢাক, ঢোল, মৃদঙ্গ, করতাল ও শঙ্খধ্বনিতে রাধা-কৃষ্ণের এ লীলা যেন অন্য সব দিন থেকে ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্তসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে মণিপুরি অঞ্চলগুলো।

এ উপলক্ষে রকমারি আয়োজনে বসেছে বিশাল মেলাও। খৈ, মুড়ি, বাতাসা, ছোটদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা, পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ ও প্রসাধনী, শ্রীকৃষ্ণের ছোট-বড় বিভিন্ন আকৃতির ছবিসহ বাহারি পণ্য শোভা পাচ্ছে মেলায়।

এ ছাড়া মাধবপুর ললিতকলা একাডেমির সামনে বসেছে মণিপুরি সম্প্রদায়ের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে বইপত্রের কয়েকটি স্টল। প্রতিবারের মতো এবারও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

প্রকৌশলী যোগেশ্বর চ্যাটার্জির সভাপতিত্বে মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহের পরিচালনায় অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন, মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক প্রমুখ।

কথিত আছে, রাজর্ষি ভাগ্যচন্দ্র একদিন রাধা ও কৃষ্ণের রাসলীলা স্বপ্নে দেখতে পান। তারপর স্বপ্নের আলোকেই কয়েকজন কুমারী মেয়ে দিয়ে উপস্থাপন করেন রাসনৃত্য। নিজের মেয়ে কুমারী বিশ্বাবতীকে রাধা এবং মন্দিরের গোবিন্দকে অবতীর্ণ করেন কৃষ্ণের ভূমিকায়। ওই রাসে মৃদঙ্গবাদক ছিলেন ভাগ্যচন্দ্র নিজেই। তাতে ব্যবহার করেন নিজস্ব তাল। ১৭৭৯ সাল থেকে রাজর্ষির সেই তাল এখন পর্যন্ত চলছে। তার মৃত্যু একশ বছর পর মহারাজ চন্দ্রকীর্তির শাসনামলে গোটা রাসনৃত্য আচৌকা, বৃন্দাবন, খুডুম্বা, গোস্ট, গোস্ট বৃন্দাবন, আচৌবা বৃন্দাবনসহ নানা ভঙ্গিতে রূপ নেয়।


সাইফুল্লাহ হাসান/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়