ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নিরবেই কাটছে হাসন রাজার ৯৭তম মৃত্যুবার্ষিকী

আল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নিরবেই কাটছে হাসন রাজার ৯৭তম মৃত্যুবার্ষিকী

আজ ৬ ডিসেম্বর বিখ্যাত মরমী সাধক হাসন রাজার ৯৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। অনেকটা নিরবেই কাটছে তার এ দিনটি।

সাধকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শহরে উল্লেখ করার মতো কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। পারিবারিক কিংবা সরকারিভাবে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের খবর পাওয়াও যায়নি।

হাওর-বাঁওড় ও মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশের জেলা সুনামগঞ্জ ‘হাসন রাজার দেশ’ হিসেবেই পরিচিত। প্রতিবছর সরকারি পৃষ্টপোষকতায় বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম, বৈষ্ণব কবি রাধারমণ দত্ত, মরমী গীতিকবি দুর্বিন শাহের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হলেও হাসন রাজার কোনোটিই পালিত হয়নি। কিন্তু মরমী এই সাধকের জীবন ও দর্শন কিংবা তার গানের চর্চা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এখানে হয় না বললেই চলে। হাসন রাজার মৃত্যু বা জন্মতারিখ ঘিরে এখানে লালন মেলার মতো সরকারি পৃষ্টপোষকতা হাসন মেলারও দাবি রয়েছে স্থানীয়দের।

এদিকে, জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে ২১ ডিসেম্বর দিনব্যাপী ৪ লোককবিকে নিয়ে স্মরণ উৎসব হবে বলে জানিয়েছেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাবেল।

মাটির পিঞ্জিরার মাঝে বন্দী হইয়ারে কান্দে হাসন রাজার মন মুনিয়া রে, একদিন তোর হইবো রে মরণ, রে হাসন রাজা, রঙের বাড়ই রঙের বাড়ই রে, লোকে বলে ঘরবাড়ি ভালানা আমার, প্রেমের বান্ধন বান্ধরে দিলের জিঞ্জির দিয়াসহ জনপ্রিয় অসংখ্য গানের বিখ্যাত মরমী সাধাক এই হাসন রাজা।

তিনি ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর (৭ পৌষ ১২৬১) সুনামগঞ্জ শহরের নিকটবর্তী সুরমা নদীর তীরে লক্ষণশ্রী পরগণার তেঘরিয়া গ্রামে জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষণশ্রী আর সিলেটের একাংশ নিয়ে ৫ লাখ বিঘার বিশাল অঞ্চলের জমিদার ছিলেন হাসন রাজা। পিতা ও মাতা উভয়ের কাছ থেকে পাওয়া বিশাল জমিদারির মালিকানা চলে আসে কিশোর বয়সে তাঁর হাতে। বেহিসাবি সম্পদ আর ক্ষমতার দাপটে বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি।

জাগতিক লোভ-লালসা, ক্ষমতায়ন, জবরদখল করেও তার প্রতিপত্তি বাড়ানোর কাজে প্রবৃত্ত ছিলেন এই প্রবল পরাক্রমশালী জমিদার। কিন্তু একসময় তার ভেতরের ভ্রান্তি ঘুচে যায়। তিনি তাঁর সম্পদ জনকল্যাণের জন্য উইল করে দিয়ে কয়েকজন সঙ্গিনীকে নিয়ে হাওরে হাওরে ভাসতে থাকেন। আর এর মধ্যে খুঁজতে থাকেন সেই মহা পরাক্রমশালীকে। সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজতে খুঁজতে একসময় আবিষ্কার করেন, তাঁর নিজের মধ্যেই তাঁর বাস। সৃষ্টিকর্তার প্রেমে পাগল তিনি সেই সময় থেকেই নিজের সৃষ্টি গান গেয়েই বিখ্যাত হয়েছেন দেশে-বিদেশে।

হাসন রাজার গানের মাঝে অন্তর্নিহিত রয়েছে নশ্বর জীবন, স্রষ্টা এবং নিজের কৃতকর্মের প্রতি অপরাধবোধের কথা। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর রচিত ২০৬টি গান নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। এই সংকলনটির নাম ছিল ‘হাসন উদাস’। এর বাইরে আর কিছু গান ‘হাসন রাজার তিনপুরুষ’ এবং ‘আল ইসলাহ্’সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

মরমী সাধক ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রীতে মায়ের কবরের পাশে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। তার এই কবরখানা তিনি মৃত্যুর পূর্বেই প্রস্তুত করেছিলেন। মরমী এই সাধকের সৃষ্টিকর্ম ধরে রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভক্তরা।

হাসন রাজার প্রপৌত্র সাবেক সংসদ সদস্য দেওয়ান শাসছুল আবেদীন বলেন, ‘হাসন রাজার প্রতি কর্তৃপক্ষের নজর না থাকায় তিনি অবহেলিত আছেন। লোককবি হিসেবে যে গুরুত্ব থাকার কথা ছিল, সেটা দেখছি না। বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির দিক বিবেচনা করে তাঁকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া উচিৎ।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসন রাজা একাডেমি করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুদান দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার মধ্যে দিয়ে এই একাডেমির কাজ স্থগিত হয়ে যায়। আমরা আশা করছি, বঙ্গবন্ধুকন্যা এই কাজটি করবেন। হাসন রাজার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারি কোনো অনুষ্ঠান নেই। তবে, পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় শিল্পিদের নিয়ে ছোট আকারে ভক্তদের নিয়ে গানের মধ্যে দিয়ে তাঁকে স্মরণ করা হবে।’

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ‘৬ ডিসেম্বর হাসন রাজার মৃত্যুবার্ষিকী এবং ২১ ডিসেম্বর মৃত্যুবার্ষিকী। তাই একই মাসে জন্ম এবং মৃত্যুবার্ষিকী হওয়াতে একসাথে জেলার ৪ লোককবি রাধারমণ দত্ত, শাহ আব্দুল করিম, দুর্বিন শাহ ও হাসন রাজার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাদের জীবন ও কর্ম নিয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। আমাদের হাওর অঞ্চলের এই প্রধানতম লোক শিল্পীদের স্মরণ করার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবো।’

মানুষে মানুষে ভালবাসা এবং অসাম্প্রদায়িকতার জয়গান ছড়িয়ে দেবার জন্যই হাসন রাজাকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা জরুরি মনে করেন হাওরবাসী।

 

সুনামগঞ্জ/মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়