হাওরে দর্শনার্থীদের ভিড়, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি
রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম
কিশোরগঞ্জের হাওরে বিনোদনপ্রেমীদের ভিড়
চারদিকে থই থই পানি। তার মাঝ দিয়ে চলে গেছে দৃষ্টিনন্দন সড়ক। কিশোরগঞ্জের হাওরগুলো যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পসরা মেলে ধরেছে। এ সৌন্দর্য উপভোগের জন্য সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন হাজারো মানুষ। তবে, দর্শনার্থীদের অধিকাংশই সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।
ঈদুল ফিতরের ছুটির সময় প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারণে বিনোদনপ্রেমী মানুষজন ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আসতে পারেননি। সে সময় লকডাউন থাকার কারণে মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছিল। তাই ঈদুল আজহার ছুটি ও লকডাউন না থাকার সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকা বিনোদনপ্রেমী মানুষজন। হাওর এলাকার নির্মল পরিবেশ ও মনোরম সৌন্দর্য উপভোগে এখানে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।
কিশোরগঞ্জের নিকলী বেড়িবাঁধ ও ছাতিরচর, তাড়াইলের হিজলজানী, করিমগঞ্জের বালিখলা, মরিচখালী ও চামটা বন্দর এবং ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম হাওরে ঈদের দিন থেকেই হাওরপ্রেমী মানুষজন ভ্রমণে মেতেছেন। ঈদের দিন বিকেল থেকে শুরু করে প্রতিদিনই বাড়ছে হাওরে ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের আসা-যাওয়া।
তবে সামাজিক দূরত্ব মানার ব্যাপারে তারা উদাসীন। অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিরও তোয়াক্কা করছেন না। শিশু থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ, বেশিরভাগ মানুষকে মাস্ক পরতে দেখা যায়নি।
এ বছর ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম উপজেলায় তৈরি করা হয়েছে অল ওয়েদার রোড। হাওর দর্শনে এ যেন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনোমুগ্ধকর ছবি দেখে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ ভিড় করছে হাওরপাড়ে। হাওরপ্রেমী দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনকে। দর্শনার্থীদের সচেতন করতে প্রতিনিয়ত মাইকিং করা হচ্ছে। কারণ, গত কয়েক দিনে হাওরের পানিতে ডুবে দর্শনার্থীসহ প্রাণ হারিয়েছেন অনেকেই।
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা থেকে সাব্বির আহমেদ বন্ধুদের নিয়ে হাওরে ঘুরতে এসেছেন। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন, ‘আমরা গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ। করোনা আমাদের কিছু করতে পারবে না।’
নরসিংদী থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে হাওর দেখতে এসেছেন মো. ইফতেখার। তিনি বলেন, ‘কিশোরগঞ্জের হাওরের বিভিন্ন জায়গার ছবি দেখেছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাই চার বন্ধু মিলে বাইক চালিয়ে হাওরে ঘুরতে আসা। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না দেখে খারাপ লাগছে। করোনা মহামারিকালে বেড়ানোর সময়েও সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। প্রশাসনের এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
মো. রিফাত গাজীপুর থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিকলীর হাওরে ঘুরতে এসেছেন। তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, ‘হাওরে ঘুরতে এসে বিপাকে পড়েছি। নৌকাভাড়া থেকে শুরু করে খাবার, প্রতিটি জিনিসের দাম প্রায় দ্বিগুণ। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।’
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে হাওরে দর্শনার্থীদের সমাগম সীমিত করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্রমণ করার বিষয়ে বলা হচ্ছে। দর্শনার্থীদের কাছে অতিরিক্ত দামে খাবার বিক্রির বিষয়টি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটিকে জানানো হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কিশোরগঞ্জ/রুমন/রফিক
আরো পড়ুন