ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী টাউনহল ভাঙার নেপথ‌্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫৭, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ২২:০১, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী টাউনহল ভাঙার নেপথ‌্যে

কুমিল্লার বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন

১৩৫ বছরের ঐতিহ‌্যবাহী স্থাপনা কুমিল্লার বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন। এই ঐতিহাসিক ও ঐতিহ‌্যবাহী স্থাপনাটিকে আধুনিকায়নের নামে ভেঙে ফেলার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। 

প্রাচীন এ স্থাপনাটি ভেঙে নতুন করে তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে কুমিল্লার স্থানীয় প্রশাসন। সবাই আধুনিক সুযোগ-সুবিধা চায়, উন্নয়ন চায়। তবে সেটা ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে নয়।

নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ে ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই টাউন হল ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু এবং অবিভক্ত ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজ পরিবারের স্মৃতি বহন করছে। এছাড়া কুমিল্লার শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক ইতিহাসের সাক্ষী এই টাউন হল যাদের আগমনে ধন‌্য হয়েছে- তার মধ‌্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহাত্মা গান্ধী, সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী অন‌্যতম।

গত বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তনটিকে আধুনিকায়নের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ও টাউন হলের সভাপতি আবুল ফজল মীরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কুমিল্ল-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। 

এসময় এমপি বাহার বলেন, ‘আশা করছি সুন্দর একটি স্থাপনা হবে।’ 

ওই মতবিনিময় সভার পর থেকেই শুরু হয়েছে নানান গুঞ্জন। কুমিল্লার সংস্কৃতিকর্মী ও সুধীজন আধুনিকায়নের প্রস্তাব সমর্থন করেননি। তবে এর বিপরীতে প্রকাশ্যে প্রতিবাদও করতে সাহস করেননি।

তবে, কুমিল্লা থেকে প্রতিবাদের সাহস না পেলেও বসে নেই সারাদেশের সংস্কৃতি কর্মীরা। এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন কুমিল্লাসহ সারাদেশের লেখক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিশিষ্ট জনেরা। প্রশাসনের এমন উদ্যোগের প্রতিবাদ ও সমালোনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমেও। আধুনিকায়নের নামে টাউন হলটি ভাঙা হলে তা হবে কুমিল্লার ইতিহাস-ঐতিহ্যে কুঠারাঘাতের সামিল। 

লেখক আহসানুল কবীর বলেন, ‘‘যতই বৈরী সময় হোক, ঐতিহ্যকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় নিজের নৈতিক অবস্থান থেকে সরে যাওরার কোনোই অবকাশ নেই।

‘পুরনো ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার কোনো সুযোগ নেই। টাউনহলের পশ্চিম পাশে অবস্থিত থিওসফিক্যাল সোসাইটির ভবনটি ১৯১১ সালের দিকে প্রতিষ্ঠিত। মাদ্রাজের পরেই কুমিল্লা শহরের থিওসফিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ থেকে একশ বছর আগেই কুমিল্লায় সর্ব ধর্মের লোকজন এখানে মুক্ত আলোচনা করতেন। 

‘কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন যে, টাউন হল ১৯৩৩ সালে নির্মিত। এটি সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। কেননা টাউনহলের সামনে ওপরে লেখা আছে, টাউন হলটি ১৯৩০ সালে সংস্কার করা হয়েছে। আমি মনে করি যদি কোনো প্রতিষ্ঠান সংস্কার করা হয়, এর থেকে কমপক্ষে ২০-৩০ বছর আগে সেটি নির্মাণ করা হয়ে থাকে। হলই যদি না থাকতো তাহলে ১৯০৩ সালে নবাব সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী সভা হলো কী করে? ১৯০৩ সালের সেই অনুষ্ঠানে তৎকালীন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদরা এখানে এসেছিলেন। 

‘এখানে মহাত্মা গান্ধী, সীমান্ত গান্ধী, কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, লিয়াকত আলী খাঁন, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসেছেন। 

‘সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ বাংলাদেশে সর্বশেষ কনসার্ট তিনি এএই টাউন হলে করেছেন। ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ তমঘা-ই-ইমতিয়াজ পদক লাভ করার পর এখানে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এখানে বিখ্যাত শিল্পী আলী আকবর খাঁ, বাহাদুর হোসেন খাঁন কনসার্ট করেছেন। অতএব এই টাউন হলকে কিন্তু জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করা উচিত। তাজমহলকে যদি অক্ষত রেখে এখন পর্যন্ত টিকিয়ে রাখা যায়, তাহলে এই টাউন হলকে কেনো পারা যাবে না? সরকার এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চাইলে এর পুরনো আদল রক্ষা করেই তাকে সংরক্ষণ করা সম্ভব।” 

কবি ও লেখক পিয়াস মজিদ বলেন, ‘আধুনিকায়নের নামে ১৩৫ বছরের এই স্থাপনা কোনোভাবেই ভেঙে ফেলা যাবে না।’

সামাজিক সংগঠন ঐতিহ্য কুমিল্লার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল বলেন, ‘কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ে অবস্থিত টাউন হলটি আমাদের ঐতিহ্য। এর সংস্কার জরুরি। এটি সংস্কারে এমপি আ.ক.ম. বাহাউদ্দিন বাহার যে উদ্যোগী হয়েছেন, সেজন‌্য তাকে সাধুবাদ জানাই। তবে টাউন হলের বর্তমান কাঠামো এবং নকশা অক্ষুন্ন রেখে সংস্কার করার দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে কুমিল্লা ক্লাব, থিওসফিক্যাল সোসাউটি এবং মিনিস্ট্রিয়েল ক্লাব এগুলোও টাউন হলের সমান গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য বহন করে। এগুলোকেও সংস্কার ও সংরক্ষণ করার আহ্বান থাকবে সংসদ সদস্যের কাছে।’

কথাশিল্পী স্বকৃত নোমান বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন ধরে আমি বেশ তৎপর। এটিকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছি এবং গুণীজন-সুধীজন সবার সঙ্গে কথা বলেছি। কুমিল্লা যে এক সময় ত্রিপুরার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো এবং ত্রিপুরার উল্লেখযোগ্য এলাকা ছিলো তার একমাত্র শেষ নিদর্শন হলো এই বীরচন্দ্র নগর মিলনায়তন। ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ। যে ইতিহাসে মহাত্মা গান্ধীর থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এটিকে ন্যাশনাল হেরিটেজ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। 

‘হলটি ভাঙার পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ইতিহাস-ঐতিহ্য জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে। এরা জানে না ইতিহাস-ঐতিহ্যের গুরুত্ব কতখানি। ইতিহাস-ঐতিহ্যের চিহ্ন যদি না রাখা হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে ইতিহাস বিকৃতি মাথাচাড়া দেয়। একটি জাতির আত্মপরিচয়ে সংকট দেখা দেয়। এ সমস্ত স্থাপনাগুলোকে সরকার অবশ্যই ন্যাশনাল হেরিটেজ ঘোষণা করবে। এটাকে সংরক্ষণ করতে হবে। যদি মিলনায়তন বানাতে হয়, তাহলে অন্যত্র জায়গা নির্ধারণ করে সেখানেই মিলনায়তন বানাবে। ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শনকে ধ্বংস করে নয়।” 

বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘‘এটি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। এটিকে কখনোই বিলুপ্ত করা বা ভাঙা উচিত হবে না। আমাদের সংস্কৃতির ইতিহাসের একটা অধ্যায় তাহলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটিকে রক্ষা করে যদি প্রয়োজন হয়, অন্য জায়গায় আরেকটি হল নির্মাণ করা যেতে পারে। যেহেতু সংস্কারের পিছনে অনেক অর্থই ব্যয় হচ্ছে, তাহলে নতুন করে আরেকটা তৈরি করলে অসুবিধা কি? 

‘এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসেছেন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম এখানে দীর্ঘদিন কাটিয়ে গেছেন। এখানে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এসেছেন। এটি একটি ঐতিহাসিক জায়গা। কুমিল্লা একসময় ছিল সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। আর এর মূল ভিত্তিতো এই টাউন হল। সেখানে কেনো এখন নতুন করে এসব উদ্ভট চিন্তা করা হচ্ছে আমার বোধগম্য নয়। আমার মনে হয় এটি পুনর্বিবেচনা করা জরুরি।” 

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর বলেন, ‘‘এ বিষয়ে কোনো কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। তবে, মাননীয় সংসদ সদস্য আ.ক.ম. বাহাউদ্দিন বাহার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি ডিউ লেটার দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দিয়েছেন বিষয়টি দেখার জন্য। অতঃপর গণপূর্ত বিভাগ একটি নকশা তৈরি করেছে। ওই ডিজাইন বা নকশাটি শুধু কুমিল্লাবাসীর সামনে প্রদর্শন করা হয়েছে।

‘এটি কুমিল্লাবাসীর একটি গর্বের-অহংকারের জায়গা। কুমিল্লাবাসী যে ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন, আমি সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সংস্কৃতিকর্মী এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, মূলত পশ্চিম পাশের থিওসফিক্যাল সোসাইটি এবং মিনিস্ট্রিয়াল ক্লাবের জায়গাটাকে নিজেদের দখলে আনার জন্য টাউনহলের নকশায় আধুনিকতার এ আয়োজন। 

কেউ কেউ বলছেন, ‘টাউন হল ভাঙার পেছনে আর্থিক লুটপাটের আয়োজনসহ অনেক কারণ লুকিয়ে রয়েছে। সে কারণে টাউন হলের আধুনিকায়নের প্রসঙ্গকে সামনে আনা হচ্ছে বার বার। কিন্তু এই টাউন হল কমপ্লেক্সের ভেতরেই রয়েছে আরও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থাপনা। যেমন, কুমিল্লা ক্লাব, মিনিস্ট্রিয়েল ক্লাব এবং থিউসোফিক্যাল সোসাইটি ক্লাব ভবন। এগুলোর মধ্যে পশ্চিম পাশে অবস্থিত মিনিস্ট্রিয়েল ক্লাব এবং থিউসোফিক্যাল সোসাইটি ক্লাব ভবন এবং পাশের কেয়ার টেকারের বাসভবন। টাউন হলের নতুন নকশা বাস্তবায়িত হলে এই তিনটি স্থাপনা অকেজো হয়ে পড়বে। আর আসল রহস্যটা এখানেই লুকিয়ে আছে।’

এদিকে টাউন হলের ঐতিহ্য সংরক্ষণের দাবিতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। গত রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) ২০২০ পবা-এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান স্বাক্ষরিত একটি আবেদন পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে- কুমিল্লা (টাউন হল) ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন বীরচন্দ্র গণগ্রন্থাগার মিলনায়তন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ না করে ঐতিহ্য হিসাবে সংরক্ষণ করার অনুরোধ। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) মনে করে, সমৃদ্ধ দেশ গঠনে ঐতিহাসিক স্থাপনা, পুরাকীর্তি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ জরুরি। 

 

ফেসবুক থেকে নেওয়া কয়েকটি পোস্ট: 

১ : বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রর যুগ্ম-পরিচালক (প্রোগ্রাম) গত রোববার (৭ সেপ্টম্বর) বিকেলে এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন- ‘১৩৫ বছরের টাউন হল ও ঐতিহ্যের আকরখনি বীরচন্দ্র গণপাঠাগার। স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন কুমিল্লা বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন ভবনটি রক্ষার জোর দাবি জানাই। আমরা উন্নয়ন চাই, তবে এমন ঐতিহ্যনাশী উন্নয়ন কখনোই চাই না। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা হোক, উন্নয়ন হোক। তবে সেটা ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে নয়।’

২ : কথা সাহিত্যক স্বকৃত নোমান গত শনিবার (৫ সেপ্টম্বর) তার এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন- ‘কুমিল্লায় ১৩৫ বছরের পুরনো বীরচন্দ্রনগর মিলনায়তন ভেঙে কমপ্লেক্স বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঐতিহ্যবিনাশী এই ধরনের উন্নয়ন অগ্রহণযোগ্য। ইতিহাসের কিছু কিছু নিদর্শন রেখে দিতে হয় পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। নইলে ইতিহাস-বিস্মৃতির প্রবণতা মাথাচাড়া দেয়। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঐতিহ্যবাহী এই মিলনায়তন ভাঙার বদলে রক্ষার উদ্যোগ নেবে।’

৩ : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীরমুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর বরাত দিয়ে স্বকৃত নোমান লেখেন- ‘কুমিল্লার ১৩৫ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন ভেঙে বহুতল স্থাপনা নির্মাণের প্রক্রিয়া অনতি বিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ১৮৮৫ সালে তৎকালীন ত্রিপুরা জেলার চাকলা রোশনাবাদের জমিদার নরেশ মহারাজ বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর এটি প্রতিষ্ঠা করেন। আমরা উন্নয়ন চাই, তবে এমন ঐতিহ্যনাশী উন্নয়ন চাই না।’

৪ : কবি নির্মলেন্দু গুণের বরাত দিয়ে স্বকৃত নোমান আরেকটি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন- ‘স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন কুমিল্লা বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন ভবনটি যারা ভাঙতে আসবে, তাদের হাত ও কোমর ভেঙে দেওয়ার জন্য একটা শক্তশালী স্কোয়াড গঠন করা হোক। আমি সেই ঐতিহ্যরক্ষক স্কোয়াডের সদস্য হতে রাজি আছি। শেখ হাসিনার সরকার এরকম একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। নিশ্চয়ই তিনি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে এরকম দুষ্ট চিন্তা থেকে সরে আসার জন্য নির্দেশ দেবেন।’

৫ : একটিভিস্ট সাহেদ কায়েস পোস্ট দেন- ‘সুন্দর একটি স্থাপনা উপহার দেওয়ার নামে ঐতিহ্যের গায়ে কুঠার চালাতে দেওয়া যাবে না।’ 

কুমিল্লা টাউন হল গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তনের ইতিহাস :

২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় তরুণ ইতিহাসবিদ ও কুমিল্লা টাউন হলের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আহসানুল কবীরের লেখা ‘কুমিল্লার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি’ গ্রন্থ। সেই গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়, ১৮৮৫ সালের ৬মে নগরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ের ৩ একর ৪৩ শতক জায়গা নিয়ে কুমিল্লা টাউন হল প্রতিষ্ঠিত হয়। 

হলের প্রতিষ্ঠাতা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজপরিবারের সদস্য মহারাজা বীরচন্দ্র মাণিক্য বাহাদুর। দৃষ্টিনন্দন কারুকাজে ভবনটি নির্মিত। ১৯৩০ সালে এটি প্রথম সংস্কার করা হয়।

১৮৮৫ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এফ এইচ স্ক্রাইন ত্রিপুরা জেলার চাকলা রোশনাবাদের জমিদার নরেশ মহারাজ ‘বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর’- এর কাছে পাঠাগার তৈরির নিমিত্ত জমি প্রদানের অনুরোধ জানান। মহারাজ কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ে ১০ বিঘা জমির ওপর একটি ভবন নিজস্ব অর্থায়নে করে দেন। ১৮৮৫ সালের ৬মে প্রতিষ্ঠিত ওই ভবনই কুমিল্লার গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন, যা কুমিল্লা টাউন হল নামে পরিচিত।

পাঠাগারে এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা, রাজমালা থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কবি, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মনীষীদের রচনাসমগ্র রয়েছে। এখানে বাংলা ভাষার ২৪ হাজার বই ও ইংরেজি ভাষার ছয় হাজার বই রয়েছে। ৩০ হাজার বই দিয়ে ৬৩টি আলমারি সজ্জিত। 

সদস্যরা একসঙ্গে এক সপ্তাহের জন্য তিনটি বই নিতে পারেন। তা ছাড়া সংরক্ষিত গ্রন্থগুলো পাঠাগারে বসে পড়া যায়। টাউন হল ভবনের দ্বিতীয় তলায় যে কেউ গেলে সেখানে অধ্যয়ন করতে পারবেন। 

টাউন হলের নিচতলায় সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে ৪৪টি জাতীয়, আঞ্চলিক, স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ও সাময়িকী। যে কেউ চাইলে পুরোনো পত্রিকার কপি দেখতে পারেন। ২০০২-০৩ সালে এটি পুনরায় সংস্কার করা হয়।

ঢাকা/ইকাস

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়