ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শিক্ষককে কান ধরে ওঠ-বস: মামলা হচ্ছে না যে কারণে

জে. খান স্বপন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ২০:১৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
শিক্ষককে কান ধরে ওঠ-বস: মামলা হচ্ছে না যে কারণে

কান ধরে ওঠ-বস করার ভিডিও ভাইরালের পর সন্মানহানি হলেও আইনগত ব্যবস্থার দিকে এগুচ্ছেন না ভুক্তভোগী শিক্ষক। অর্থের অভাব আর নিরপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি।

আজ সোমবার বিকেলে রাইজিংবিডি’র কাছে এমন মন্তব্য করেন বরিশালের রুপাতলীর জমজম ইনস্টিটিউটের খণ্ডকালীন শিক্ষক পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়নের আয়লা গ্রামের এই বাসিন্দা।

তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আজ দুপুরে বরিশাল কোতোয়ালি থানার ওসি সাহেব আমাকে ফোন দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ ও এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দাখিলের জন্য বলেছেন। কিন্তু অভিযোগ দাখিল কিংবা মামলা করতে আমি ভয় পাচ্ছি। পাশাপাশি ওসব পরিচালনা করার জন্য আর্থিকভাবে আমি প্রস্তুত নই।’

ভিডিও ভাইরালের ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গত মাসের ২৬ তারিখ কতিপয় ছাত্র আমাকে কান ধরে ওঠ-বস করান। এসময় এক ছাত্র ভিডিও করেন। বিষয়টি ওই পর্যন্তই থাক। কিন্তু ভিডিওটি ফেইসবুকে ছেড়ে দেওয়া ও সেটি ভাইরাল হওয়ায় আমার সন্মানহানি হয়েছে।’

তিনি জানান, গ্রামের বাড়িতে প্রতিবেশীরা তাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছেন। এমনকি সহপাঠী ও বন্ধুরা তাকে এড়িয়ে চলছেন। এ অবস্থায় তিনি খুবই মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন।

তিনি বলেন, ‘অভাবেব সংসার, তাই আমি পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছি। সবশেষ ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বরিশাল নগরীর রুপাতলীর জমজম ইনস্টিটিউটে নিয়মিত শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম আমি।’

‘আগে থেকে ওই ইনস্টিটিউটের ছাত্র ইমন ও ছাত্রী মনিরা ক্লাস ফাঁকি দিত ও লেখাপড়ায় অমনোযোগী ছিল। তারা লেখা-পড়ায়ও ভালো ছিলো না। কিন্তু পরীক্ষায় ভাল নাম্বার পাইয়ে দেওয়ার জন্য তারা আমাকে চাপ প্রয়োগ করতো। কিন্তু এটা শিক্ষকের নীতি ও আর্দশ নয়। তাই তাদের অন্যায় আবদার আমি মেনে নিতে পারিনি। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৬ আগস্ট হাতেম আলী কলেজ সংলগ্ন এলাকায় ইমন ও তার ৬-৭ জন বন্ধু আমার পথরোধ করে আমাকে জোর করে পার্শ্ববর্তী অক্সফোর্ড মিশন রোডের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকের মারধর করে এবং কান ধরে ওঠ-বস করাতে বাধ্য করে।’

শিক্ষক আরও বলেন, ‘ওরা আমার কান ধরে ওঠ-বস করানোর ভিডিও ধারণ করে। সে সময় আমার এ বিষয়ে কোন মাথা ব্যাথা ছিলো না। কিন্তু ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় আমার সন্মানহানি হয়েছে।’ 

এ ব্যপারে তার সঙ্গে জমজম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুল হক যোগযোগ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু মামলা পরিচালনা করার জন্য তাদের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা করা হবে না বলে জানিয়েছেন বলে ভুক্তভোগী শিক্ষক মন্তব্য করেছেন।

জমজম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুল হক রাইজিংবিডিকে জানান, ‘ওই শিক্ষক আমাদের এখানে খণ্ডকালিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ভিডিওটি আমারা দেখেছি। কিন্তু সেটা ক্যম্পাসের বাহিরে। এছাড়া ওই শিক্ষক আমাদের এখান থেকে অনেক আগেই চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। তাই আমাদের এ বিষয়ে তাকে পরামর্শ দেওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই।’

বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ভিডিওটি হাতে পেয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাকে এ বিষেয়ে একটি অভিযোগ দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। তিনি অভিযোগ দাখিল করলে বিষয়টি যথাযর্থ আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

প্রসঙ্গত, কান ধরে ওঠ-বস করার ভিডিওটি রাইজিংবিডির কাছে সংরক্ষিত থাকলেও শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে বলে তা প্রকাশ করা হয়নি। 

বরিশাল/স্বপন/সাজেদ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়