ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

খুলনায় এক বছরে ২০৩ নবজাতক ও শিশুর মৃত্যু

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ৩০ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ০৯:২৫, ৩০ অক্টোবর ২০২০
খুলনায় এক বছরে ২০৩ নবজাতক ও শিশুর মৃত্যু

খুলনা জেলা পরিবার পরিকল্পনা ভবন

খুলনা মহানগর ও জেলায় ২০১৯ সালে ২০৩ জন নবজাতক ও শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে ১৮ মায়ের মৃত্যু হয়েছে।

খুলনা জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়। তবে, চলতি বছরে এ হার প্রায়ই শূন‌্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, খুলনা জেলায় গত বছরের জানুয়ারি মাসে ১ হাজার ৯৩৮ জন শিশুর জন্ম হয়, এরমধ্যে মারা যায় ১২ জন। ফেব্রুয়ারি মাসে জন্ম নেয় ১ হাজার ৭৮৬ জন, এর মধ্যে মারা যায় ১৮ জন। মার্চ মাসে জন্ম নেয় ১ হাজার ৮৩৩ জন, এরমধ্যে মৃত্যুবরণ করে ১৪ জন। এপ্রিল মাসে জন্মগ্রহণ করে ২ হাজার ৮৬ জন, এর মধ্যে মারা যায় ১৫ জন। মে মাসে জন্মগ্রহণ করে ২ হাজার ২০১ জন, এরমধ্যে মারা যায় ২০ জন। জুন মাসে জন্মগ্রহণ করে ২ হাজার ৬৯ জন, এর মধ্যে মারা গেছে ১৮ জন। জুলাই মাসে জন্ম নেয় ২ হাজার ৩০৭ জন, এর মধ্যে মারা গেছে ১৭ জন। আগস্ট মাসে জন্মগ্রহণ করেছে ২ হাজার ৩৫৮ জন, এরমধ্যে মারা গেছে ১৩জন। সেপ্টেম্বর মাসে জন্ম নিয়েছে ২ হাজার ৫৬০ জন, এরমধ্যে মারা গেছে ১৭ জন। অক্টোবর মাসে জন্ম নিয়েছে ২ হাজার ৫২০ জন, এরমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে ১৯ জন। নভেম্বর মাসে জন্ম নিয়েছে ২ হাজার ৬৭৫ জন, এরমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে ২১ জন এবং ডিসেম্বর মাসে জন্ম নিয়েছে ২ হাজার ৫৭৬ জন, এর মধ্যে মারা গেছে ১৯ জন।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালে খুলনা জেলায় মোট শিশু জন্মের সংখ্যা ২৬ হাজার ৮৫৬ জন। এসময় নবজাতক শিশু ও বয়স্ক নারী-পুরুষের মৃত্যুর সংখ্যা ৬ হাজার ৭৩ জন। এরমধ্যে মাতৃমৃত্যু হয় ১৮ জনের।

এই সূত্র মতে, মৃত শিশু ও নবজাতকের মধ্যে রয়েছে সাত দিন বয়সি ৯৮ জন, ৮ থেকে ২৮ দিন বয়সের ২০ জনসহ মোট নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে ১১৮ জনের। এছাড়া ২৯ দিন থেকে এক বছর বয়সি ৭৩ জন, এক বছরের বেশি বয়সি ১৯১ জন এবং ১ থেকে ৫ বছর বয়সের ১২ জনসহ মোট ২০৩ জন শিশু ও নবজাতক মারা গেছে।

এদিকে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, খুলনা জেলায় এক মাসে স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে ১৭ জন পুরুষ ও ১৪৪ জন মহিলাসহ এক মাসে ১৬১ জন। এছাড়া আইইউডি পদ্ধতি ২২৭ জন, ইমপ্ল্যান্ট পদ্ধতি ৬৪৮ জন, ইনজেকটেবলস গ্রহণকারী ৬৩ হাজার ৭৩৭ জন, খাবার বড়ি গ্রহণকারী ১ লাখ ৮৬ হাজার ১৫৭ জন, কনডম গ্রহণকারী ৫৬ হাজার ৯৫৩ জন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলায় মোট সক্ষম দম্পতির সংখ্যা ৪৯ লাখ ৮ হাজার ৩২৬ জন। এরমধ্যে পদ্ধতি গ্রহণকারীর সংখ্যা ৪ লাখ ২ হাজার ২০ জন। মোট সিএআর অর্জন ৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

প্রতিবেদনে ২০১৯ সালের পরিবার কল্যাণ সহকারী রেজিস্ট্রার অনুযায়ী আরও উল্লেখ করা হয়, খুলনা জেলার মোট জনসংখ্যা ২৫ লাখ ৫০ হাজার ৯৫২ জন। এরমধ্যে মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৩৯২ জন এবং মহিলা ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৫৬০ জন। মোট জনসংখ্যার আনুপাতিক হার ১০০ : ১০৩।

এছাড়া জেলার জন্মহার প্রতি হাজারে ১০ দশমিক ৫৩,  মৃত্যুহার ২ দশমিক ৩৮। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০ দশমিক ৮১, মাতৃ মৃত্যুর হার ০ দশমিক ৬৭, শিশু মৃত্যুর হার শূন্য থেকে ১২ মাস ৭ দশমিক ১১ এবং টি এফ আর (মোট প্রজনন হার) ১ দশমিক ৬৯।

নবজাতক-শিশু ও মাতৃমৃত্যুর বিষয়ে খুলনা জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের মেডিক‌্যাল অফিসার (সিসি) ডা. মো. আব্দুল মান্নান শেখ রাইজিংডিকে জানান, প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি নিশ্চিত করা, মায়েদের প্রসবপূর্ব সেবা শতভাগ প্রদান, ডেলিভেরির আগে কমপক্ষে চার বার মায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, ঝুঁকির বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি মায়েদের পুষ্টির বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা এবং ব্রেস্টফিডিং নিশ্চিত করতে পারলে মাতৃমৃত্যু এবং নবজাতকের মৃত্যু অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।

পরিবার পরিকল্পনা অফিস খুলনা জেলার উপ-পরিচালক মো. আব্দুল আলিম রাইজিংডিকে জানান, গত বছর মাতৃ ও নবজাতক মৃত্যুর সংখ্যা বেশি থাকলেও চলতি বছরে এ হার প্রায়ই শূন‌্যর কোঠায় নেমে এসেছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে- জেলায় গর্ভবতী মায়েদের যত্নসহকারে পরিচর্যা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। যে কারণে এই মহামারি করোনায় খুলনা জেলায় কোনো মায়ের মৃত্যু হয়নি। এছাড়া সিজারিয়ান অপারেশনও কমে গেছে।

আমরা এখন নরমাল ডেলিভেরির দিকে বেশি জোর দিচ্ছি বলে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, খুলনায় পরিবার পরিকল্পনার সার্বিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক রয়েছে।

খুলনা/নূরুজ্জামান/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়