ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পরিবার পরিকল্পনা: সেবা থেকে বঞ্চিত গ্রাম অঞ্চলের মানুষ

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ৩০ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ০৯:৫৮, ৩০ অক্টোবর ২০২০
পরিবার পরিকল্পনা: সেবা থেকে বঞ্চিত গ্রাম অঞ্চলের মানুষ

পরিবার পরিকল্পনা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কুষ্টিয়াবাসী। কমিউনিটি ক্লিনিক এবং উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও নিয়মিত সেখানে চিকিৎসক থাকে না। এছাড়া নিয়মিত খোলা না থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত হয় ভুক্তভুগীরা। পরিবার পরিকল্পনা সেবা যে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে পাওয়া যায়, এসব তথ্যও জানে না গ্রামের মানুষেরা। পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে গ্রামের মুরব্বিরাই ভরসা।

সরেজমিনে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা অফিস ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা অফিসে বেশ কয়েকজন নারী এসেছেন পরিবার পরিকল্পনা পরামর্শ ও বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করতে।

চুমকি খাতুন (ছদ্দনাম) নামের এক নারী বলেন, দুই বছর আগে বিয়ে হয়েছে। একটা বাচ্চা হয়েছে। আর বাচ্চা নিতে চাচ্ছি না এখনই। তাই এসেছি পরামর্শ নিতে।

পরিবার পরিকল্পনা অফিসের এফডাবলুভি শাহিদা ইয়াসমিন বলেন, আমাদের এখান থেকে পরিবার পরিকল্পনা, মা-শিশু ও গর্ভবতী নারীদের সেবা দিয়ে থাকি। এছাড়া জন্ম বিরতিকরণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করে থাকি। সেই সাথে কনডম, জন্ম বিরতিকরণ বড়ি, ইনজেকশন, স্থায়ী পদ্ধতি ও বন্ধাকরণ ইত্যাদি করে থাকি।

তিনি বলেন, দৌলতপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ১৫জন স্বাস্থ্যকর্মী থাকার কথা থাকলেও এখানে আছে মাত্র ৭ জন। আগামী ২ মাস পরে আবার একজন অবসর নেবেন। লোকবল কম থাকায় গ্রাম পর্যায়ে সেবা দিতে পারছি না। তবুও স্বাধ্যমতো চেষ্টা করি আমরা যাতে সাধারণ মানুষ সেবা পায়।

আয়তনে দেশের বৃহত্তম উপজেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম দৌলতপুর উপজেলা। ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৫২টি কমিউনিটি ক্লিনিক আর ১৪টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে এখানকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও, তা কেবল মৌখিক। নেই কাগজ কলমের সঠিক হিসাবও।

 

সেবা প্রত্যাশীরা বলছেন, এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক বা চিকিৎসা কোনটাই পান না তারা। নিম্ন আয়ের এক বিশাল জনগোষ্ঠী বঞ্চিত সরকারি বরাদ্দের এই বিনামূল্যে সেবা থেকে।

দিনের পর দিন, মাসের পর মাস চিকিৎসকেরা এখানে আসেন না বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী।

দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। এখানে অবকাঠামো, চিকিৎসকদের থাকার জন্য কোয়াটারও রয়েছে। তবে দীর্ঘ আট বছর ধরে নাকি বন্ধ সেখানে চিকিৎসা কার্যক্রম। স্থানীয়দের এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় সরেজমিনে গিয়ে।

হোসেনাবাদ রাস্তার পাশেই একতলা ভবন। এটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। বছরের ১০ মাস ভবনের আশেপাশে পানি জমে থাকে। 

স্থানীয় বাসিন্দা সেলিনা খাতুন বলেন, এই পানি হয়তো এক মাস মতো থাকে না। বাকি সারা বছর এমন থাকে। ডাক্তারদের থাকার কোনো ব্যবস্থা আর নেই। তারা থাকবে কী করে? ঘরের ভেতর পানি। ডাক্তার তো আসেই না, থাকবে কে? কয়েকজন গরীব মানুষ থাকে ওখানে। তাও পানির কারণে এখন আর থাকে না।

মিজানুর রহমান নামের একজন বলেন, কখন যে ডাক্তার আসে, কখন থাকে না এসব বলা দায়।

হাবিব নামের একজন বলেন, বছরের ৮-১০ মাস এরকম পানির কারণে বন্ধ থাকে। খোলা থাকে শুষ্ক মৌসুমে। তাও কবে খোলে তার ঠিক নেই।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৬টি উপজেলায় ৪ জন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ৬০ জন ফ্যামেলি প্ল্যানিং কর্মকর্তা, ৪৩ জন ভিজিটর, ৪৪ জন এসএসসিএমও এবং ২৩৭ জন পরিবার পরিকল্পনা সহকারী দায়িত্ব পালন করছেন।

দৌলতপুর  উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আবু সাঈদ বলেন, ১৪ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫ জনের পরিবার পরিকল্পনা সহকারীর পদ রয়েছে। তবে সেখানে রয়েছে মাত্র ৭ জন। এই ৭ জন দিয়ে আমরা খুব কষ্টে কাজ করে যাচ্ছি। প্রতি সপ্তাহে ২ দিন সেখানে চিকিৎসা বসার কথা। তবে জলাবদ্ধতার কারণে সেখানে বসতে না পারায় অফিসের সামনে বসেন। এছাড়াও হোসেনাবাদ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা শাহিদা ইয়াসমিন চিলমারি ও দৌলতপুর ইউনিয়ন পুরো দেখেন।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, শহর থেকে শুরু করে গ্রাম অঞ্চলে পরিবার পরিকল্পনা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা নিয়মিত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুষ্টিয়া/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়