ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

প্রতিবেশীর অত্যাচারে উচ্ছেদ আতঙ্কে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক

মাগুরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ১ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৩:৩৯, ১ এপ্রিল ২০২১
প্রতিবেশীর অত্যাচারে উচ্ছেদ আতঙ্কে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার রাধারনগর বাজারে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে বাড়ির জমি দখল করে জোরপূর্বক শৌচাগার, গেয়ালঘর তৈরি করে এক প্রধান শিক্ষকের পরিবারকে বাড়িছাড়া করার চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় রাধানগর মাধ্যমিক  বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র কুণ্ডু তার প্রতিবেশী নিহার কুণ্ডু, নিশিত কুমার কুণ্ডু, নিখিল কুণ্ডুর বিরুদ্ধে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সাংবাদিকদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, রাধানগর বাজারের পাশে তাদের পৈত্রিক বাড়ি অবস্থিত। ওই বাজারের ব্যবসায়ী নিহার কুণ্ডু, নিশীত কুণ্ডু কয়েক বছর আগে তাদের বাড়ির পাশে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করে। কিন্তু বাড়ি তৈরির পর থেকেই তারা একটু একটু করে কৌশলে তার বাড়ির দক্ষিণ দিকে ৪ শতক জমি দখল করে ২টি শৌচাগার ও  তৈরি করেছে।

সেইসঙ্গে ওইসকল স্থাপনার ময়লা আবর্জনা, দুষিত ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি তাদের বাড়ির ড্রেন দিয়ে প্রবাহিত করেন। এরফলে ওই শিক্ষক পরিবারটি প্রতিনিয়ত দুর্গন্ধময় পরিবেশে অসহনীয় পরিবেশে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।

এ বিষয়টি প্রতিবেশী পরিবারকে অবহিত করে তাদের জায়গা থেকে স্থাপনা তুলে নিতে বারবার অনুরোধ করলে তারা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র কুণ্ডুসহ তার পরিবাকে হুমকি ধমকি ও নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র কুণ্ডু সাংবাদিকদের জানান, দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর শিক্ষকতা করে সুভাষ চন্দ্র কুণ্ডু এখন অবসর জীবন যাপন করছেন। পাশের গ্রামে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত পরিবারটি তার বাড়ির পাশে জমি কিনে বসবাস করতে শুরু করে প্রায় ১০ বছর আগে। এরপর থেকে তারা বিভিন্ন সময়ে আমাদের বাড়িতে না থাকার সুযোগ নিয়ে জোরপূর্বক বাড়ির দক্ষিণ দিকে ৪ শতক জমি দখল করে নেয়।

জমিজমা মাপের পর তাদের গোয়ালঘর ও বাথরুম তার জমির ওপর থাকাতে সেগুলো সরিয়ে নিতে তাদেরকে  বার বার তাগাদা দেওয়া হয়। ওই প্রতিবেশি সেগুলি না সরিয়ে উপরন্তু অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও অত্যাচার নির্যাতন শুরু করেছে। কিছু বলতে গেলেই অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি ধামকি দেয়। ওই গোয়াল ও বাথরুমের দুর্গন্ধ ও মশা মাছির অত্যাচারে অবস্থা এমন হয়েছে যে, তাকে মান সম্মান ও সুস্বাস্থ্য নিয়ে চলতে গেলে নিজ বাড়ি ছেড়েই চলে যেতে হবে।

সুভাষ চন্দ্র কুণ্ডু আরও জানান, ‘একাধিকবার সরকারি আমিন এসে জমিজমা মাপ দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে গেলেও ওই পরিবারটি গায়ের জোরে আমাদের জায়গাতেই স্থাপনা রাখতে বদ্ধ পরিকর। আমার পরিবারের ৬ ভাইয়ের মধ্যে বেশিরভাগ সদস্যই চাকরি বা ব্যবসার প্রয়োজনে বাড়িতে থাকি না। ফলে আমাকে একা ও অসহায় পেয়ে নিয়মিত নির্যাতন করছে প্রতিবেশী পরিবারটি। এতে আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্থ ও অসুস্থ হয়ে পড়েছি। যে কোনো সময় বড় ধরনের অসুস্থ হয়ে পড়তে পারি।’

তিনি জীবন বাঁচাতে ও এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সকলের সহায়তা আশা করেছেন।

ওই বাড়ির গৃহবধূ শিউলি রানী কুণ্ডু অভিযোগ করে জানান, প্রতিবেশীর শৌচাগার ও গোয়ালঘরের দুর্গন্ধে প্রতি মুহূর্তে অস্বাস্থ‌্যকর পরিবেশে থাকতে হচ্ছে তাদের। ঘরের জানালা খোলা তো দূরের কথা জানালা বন্ধ রেখেও ঘরে বসবাস করা যাচ্ছে না। ময়লা আবর্জনায় প্রচুর মশা সৃষ্টি হচ্ছে।

অভিযুক্ত রাধানগর বাজারের ব্যবসায়ী নিশিত কুণ্ডু দাবি করেন, জমিটি সুকুমার কুণ্ডুদের হলেও আমরা দীর্ঘদিন এটি ভোগদখল করে আসছি। আমাদের ভোগদখল করা অংশটি আমাদের নামে লিখে দেওয়ার কথা থাকলেও তারা সেটি লিখে দিচ্ছেন না। এ বিষয়ে তাদের তেমন কিছু বলার থাকলে তারা আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ইয়াসিন কবির রাইজিংবিডিকে বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষকের সমস্যার বিষয়টি সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কাদিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদকে দায়িত্ব দিয়েছি। চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী গ্রাম আদালতে বিষয়টি সমাধান করে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেবেন।

কাদিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানান, আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা দুপক্ষকেই নোটিশ করেছি। তারা গ্রাম আদালতে হাজির হলে কাগজপত্রের ভিত্তিতে আপোষ মিমাংশার চেষ্টা করা হবে।

শাহীন/বুলাকী

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়