খেয়াঘাট এখন ময়লার ভাগাড়
রফিক সরকার || রাইজিংবিডি.কম
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার শীতলক্ষ্যা নদীর ঐতিহ্যবাহী বরমী বাজারের খেয়াঘাটে নির্বিচারে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। দূর থেকে খেয়াঘাটটিকে দেখলে মনে হয় যেন ময়লার ভাগার। এসব বর্জ্য গড়িয়ে নদীর পানিতে মিশে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি ও পরিবেশ।
বুধবার (১৬ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, বরমী হতে আশপাশের কয়েকটি উপজেলায় যাতায়াতের জন্য নদীপথে লঞ্চ এবং নৌকা এলাকাবাসীর একমাত্র বাহন। আর ব্যবসায়ীদের যাবতীয় মালামাল আনা-নেওয়া করা হয় নৌকায় বা লঞ্চে। খেয়াঘাটে ফেলা ময়লার দুর্গন্ধ এবং নদী দূষণের কারণে নদীপথের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় লোকজন জানান, বরমী বাজারে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গড়ে উঠা বেসরকারি ক্লিনিকের বর্জ্য ও কাঁচা বাজারের ময়লা-আবর্জনা ব্যবসায়ীরা নদীতে ফেলেন। এ কারণে নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। নদীতে বর্জ্য ও ময়লার স্তূপ থাকায় দুর্গন্ধে পানির কাছে যাওয়া যায় না। ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে তারা মনে করেন।
বরমী বাজারে খেয়াঘাটের ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাজারের কিছু লোক তাদের ব্যক্তি স্বার্থের জন্য ক্লিনিক ও বাজারের বর্জ্য এই খেয়াঘাটেই ফেলে। এতে যেমন ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, তেমনি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। এছাড়া, দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। ময়লার দুর্গন্ধের কারণে দোকানে বসে থাকা যায় না। কবে এ থেকে মুক্তি পাবো জানি না।’
খেয়াঘাটের মাঝি লাল মিয়া জানান, শীতলক্ষ্যা আর আগের মতো নেই। ময়লা পচার দুর্গন্ধে নাজেহাল অবস্থায় আছি। এখন যে অবস্থা মাঝিগিরিও ছেঁড়ে দিতে হবে।
এদিকে, উপজেলার বরমী বাজারে কয়েকটি ক্লিনিক মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা শীতলক্ষ্যা নদীর খেয়া ঘাটে বর্জ্য ফেলার কথা অস্বীকার করেন।
নদী পরিব্রাজক দলের শ্রীপুর উপজেলা শাখার সভাপতি সাইদ চৌধুরী জানান, নদী রক্ষায় আইন থাকলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে শীতলক্ষ্যা এখন দূষণের কবলে। প্রশাসনকে বিষয়টি তাড়াতাড়ি আমলে নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশবিদরা যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেন তাহলে শুধু শীতলক্ষ্যা নদীই নয়, বেঁচে যাবে ছোট-বড় সব নদী। তাছাড়া নদী রক্ষায় বিভিন্ন অধিদপ্তরকে এগিয়ে আসতে হবে।
গাজীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুস সালাম সরকার বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। আমরা শিগগিরই পরিদর্শনে যাব।অভিযোগ সত্য হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবো।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান, ক্লিনিকের বর্জ্য নদীতে না ফেলার জন্য ক্লিনিক মালিকদের সঙ্গে কথা বলা হবে। তারপরও কেউ ময়লা ফেললে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাজীপুর/বুলাকী
আরো পড়ুন