ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ভালো নেই শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, সাহিত্যিক আব্দুর রশীদ যশোরী 

মাগুরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪০, ১০ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ২২:৩৬, ১১ অক্টোবর ২০২১

আব্দুর রশীদ যশোরী ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষকের পুরস্কার হিসেবে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি কথা সাহিত্যিক। ৫০টির বেশি প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে তার। এক সময় সাংবাদিকতা করতেন। সাহিত্য ও সংবাদপত্র সম্পাদনার কাজও করেছেন।

মাগুরার মহম্মমদপুর উপজেলা সদরের বাসিন্দা এই গুণী মানুষটি ভালো নেই। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে ৯ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি বাকরুদ্ধ। চলাচলে অক্ষম অনেকটা নিঃসঙ্গ অবস্থায় তার সময় কাটে। স্ত্রী সেলিনা বেগম তার সঙ্গী এবং একমাত্র অবলম্বন। তার খবর এখন আর কেউ রাখে না।

২০১২ সালের ২৭ অক্টোবর স্ট্রোকজনিত কারণে শরীরের ডানপাশ প্যারালাইসড হয়ে যায়। তখন থেকে তিনি চলাচলে অক্ষম এবং বাক হারিয়ে ফেলেন। এরপর থেকে নিজবাড়িতে অবস্থান করছেন। তিনি সব দেখতে পারেন, পড়তে পারেন। কিন্তু লেখার হাত অচল হয়ে যাওয়ায় তিনি লিখতে পারেন না। লিখতে না পারার কষ্ট তাকে প্রতিনিয়ত পীড়া দেয়। শারীরিক অক্ষমতার কারণে বেশিরভাগ সময় তাকে ঘরে অলস সময় কাটাতে হয়। মাঝে মধ্যে স্ত্রী সেলিনা বেগমের কাঁধে ভর করে বাইরে বের হন তিনি।

আব্দুর রশীদ যশোরী ১৯৪৯ সালে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবন থেকে লেখালেখিতে ঝুঁকে পড়েন তিনি। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত মহম্মদপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। মধুমতি নামের একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। ঝামা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি। ২০০১ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক নির্বাচিত হন। তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেন।

প্রথম জীবনে সাংবাদিকতার পাশপাশি শিক্ষকতা পেশা বেছে নেন। সাহিত্য চর্চা করেন ব্যাপকভাবে। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি রয়েছে বেশ কয়েকটি। তার লেখা কবিতা, ছড়া, গল্প, উপন্যাস, রম্য রচনা, ভ্রমণ কাহিনী, কিশোর গল্প, ইতিহাস ও বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনী্ মানুষের মুখে মুখে ফেরে। বিশেষ করে রাজা সীতারাম, আরেক নদের চাঁদ, তুফান সিরিজ, ঘর্ণিঝড়, কাজী বাড়ির গুপ্তধন সবার মন কাড়ে। পরিচিতজন কাউকে কাছে পেলে খুব খুশি হন তিনি। নিজের প্রকাশিত গ্রন্থ দেখান। কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু কথা বলতে পারেন না।

যশোরীর এক সময় অনেক বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন সবাই ছিলো, এখন আর কেউ নেই। তার কথা কেউ মনে রাখেনি। খোঁজ নেয়নি কেউ। খুবই কষ্টে তার দিন কাটে। দীর্ঘ সময় ধরে পেনশনের সামান্য টাকা দিয়ে চিকিৎসা করেছেন। বছরে সরকারের দেওয়া সাহিত্য ভাতার ১৯ হাজার ৫০০ টাকা চার মাসের ওষুধ কিনতে শেষ হেয়ে যায়। মেয়ে-জামাতার সহযোগিতায় কষ্টে দিন চলে তার। তার খবর আর এখন কেউ রাখেন না।

আব্দুর রশীদ যশোরীর স্ত্রী সেলিনা বেগম জানান, তার স্বামী শিক্ষক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক ছিলেন। তার খোঁজ এখন আর কেউ নেন না। তিনি কথা বলেতে পারেন না। খুবই কষ্টে আছেন্। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের সহযোগিতা চান তিনি।

রশীদ যশোরীর ভাই মো. বাদশা মিয়া জানান, তার ভাই খুব কষ্টে আছেন। দেশ সেরা শিক্ষক তিনি। অর্থের অভাবে তার উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না। এ বিষয়ে তিনি সবার সুদৃষ্টি কামনা করেন।

মহম্মদপুরের বিশিষ্ট সমাজসেবক জিয়াউল হক বাচ্চু বলেন, আব্দুর রশীদ যশোরী এই সমাজকে অনেক দিয়েছেন। এবার তার জন্য আমাদের দেওয়ার পালা। তার হাতে গড়া শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে অবদান রাখছেন। তিনি আজ খুবই অসুস্থ, বাকরুদ্ধ। তার উন্নত চিকিৎসা খুবই দরকার। 

মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রামানন্দ পাল জানান, আব্দুর রশীদ যশোরীর এ অবস্থা জেনে তিনি ব্যথিত হয়েছেন। অবশ্যই তার খোঁজ নেবেন এবং সব ধরনের সহায়তা করবেন। 
 

/বকুল/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়