ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সফলতার গল্প শোনালেন প্রান্তিক নারী উদ্যোক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০১, ১ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৩:০৪, ১ ডিসেম্বর ২০২১
সফলতার গল্প শোনালেন প্রান্তিক নারী উদ্যোক্তারা

রিডিং সিলেবাস কার্যক্রমের সদস্যদের মিলনমেলায় বক্তব্য রাখছেন সাঈদ আল নোমান। ছবি: রাইজিংবিডি

চাঁদপুরের বিখ্যাত ইলিশ সুলভে ও সহজে সারা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ফাতেমা তুজ জোহরা বন্যা শুরু করেছিলেন ‘ইলিশতনয়া’ নামের ফেসবুকভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। লক্ষ্য ছিলো স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে বাছাইকৃত মাছ সংগ্রহ করে সরাসরি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া।  আজ এ উদ্যোগ বদলে দিয়েছে বন্যার জীবন। একইসাথে উপকৃত হচ্ছেন জেলে ও গ্রাহকরা।  আত্মবিশ্বাস ও একাগ্রতা বদলে দিতে পারে একজন মানুষকে, তারই দৃষ্টান্ত বন্যার এ সাফল্য।

চট্টগ্রামে তার মতো এমন শতাধিক সফল উদ্যোক্তাকে নিয়ে এক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো সোমবার। নগরীর পাঁচলাইশের একটি রেস্তোরাঁয় দিনব্যাপী এ আয়োজনে উপস্থিত হয়েছিলেন তারা।  চট্টগ্রামের ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির (ইডিইউ) প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমান এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। তিনি শুনেছেন সংগ্রামী নারীদের স্বপ্নপূরণের গল্প।  নিজেও শুনিয়েছেন তার স্বপ্নের কথা, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরের কথা।

‘চট্টগ্রামে বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা দেওয়ার একান্ত ইচ্ছে ও সংগ্রামের নাম ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি। আমার পরিবার সবসময়ই চট্টগ্রামের উন্নয়নে কাজ করেছে। পরিবারের অনুপ্রেরণায় নিজস্ব স্বপ্ন বাস্তবায়নে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম পঁচিশ বছর বয়সেই। নানা চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে ইডিইউকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছি আমরা। চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থেই এ বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তুলেছি। এখানকার মানবসম্পদকে বিশ্বমানে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। তাই ইডিইউতে উন্নত বিশ্বে পড়ালেখার সমস্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে’, বললেন সাঈদ আল নোমান।

স্বপ্নবাজ এ তরুণ আরও বলেন, ‘কিছু করে দেখাতে চাওয়া সংগ্রামী নারীদের বিনা খরচে ইডিইউতে পড়ার সুযোগ দিচ্ছি আমরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে কাজ করছে ইডিইউ। এ পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে দায়িত্বশীল ও আত্মবিশ্বাসী নারীরা। তাই, সংগ্রামী ও সম্ভাবনাময় নারীদের মানসম্মত উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের বিকশিত করার সুযোগ দিতে আমরা উইম্যান এম্পাওয়ারমেন্ট অ‌্যান্ড লিডারশিপ ফান্ড গঠন করেছি। এ তহবিল থেকে প্রতি বছর একাধিক নারীর উচ্চশিক্ষার ব্যয় বহন করা হবে, যাতে তারা ইডিইউর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজে আরো ইতিবাচকতা ছড়িয়ে দিতে পারে।’

কখনো কখনো সামান্য সহযোগিতা, দিক-নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতা হয়ে উঠতে পারে অনেক বড় প্রেরণা। ভাগ্য উন্নয়ন ও নিজেদের দক্ষ করে তুলতে এরচেয়ে বেশি কিছু যে লাগে না, তাই প্রমাণ করে দেখিয়েছেন এ আয়োজনে উপস্থিত নারীরা। এ ধরনের আরও অনেকের জীবন পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে কাজ করছে ইডিইউ।

প্রাতিষ্ঠানিক পরিসরে থেকে ইডিইউ যে কাজ করছে, সে ধরনের লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে একটি প্ল্যাটফর্ম-ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ। অনলাইনভিত্তিক এ প্ল্যাটফর্মের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিভাগের শতাধিক নারী আজ নিজেদের চেষ্টায় হয়ে উঠেছেন আত্মনির্ভর। আশপাশেই থাকা নানা ধরনের পণ্য নিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজেদের ই-কমার্স। আত্মকর্মসংস্থানের পাশাপাশি ভূমিকা রাখছেন অন্যদের জীবিকা অর্জনেও।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি রাজিব আহমেদের প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এ প্ল্যাটফর্ম নারী ও তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা উদ্যোক্তাদের জীবনমুখী শিক্ষায় দীক্ষিত করে দক্ষতা উন্নয়নের একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম। এসব প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের ইংরেজি ভাষায় চৌকস করে তুলতে এ প্ল্যাটফর্মেরই একটি বিশেষ কার্যক্রম ‘রিডিং সিলেবাস’। ই-কমার্স উদ্যোক্তারা যাতে বিদেশি গ্রাহকদের সঙ্গে কথোপকথনে পারদর্শী হয়ে উঠতে পারে, তার দিক-নির্দেশনা ও রিসোর্স সরবরাহ করাই এর কাজ।

এ কার্যক্রমেরই ফসল শামীমা সুলতানা। ইংরেজি সাহিত্যে গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পরও তিনি কথা বলতে পারতেন না আন্তর্জাতিক এ ভাষায়। অথচ, এ মিলনমেলায় নিজের সাফল্যের গল্প তিনি শোনালেন স্বতঃস্ফূর্ত ইংরেজিতে, জানালেন কিভাবে এক বছরের প্রচেষ্টায় নিজেকে গড়ে তুলেছেন তিনি।

ঢাকা থেকে এ আয়োজন সফল করতে ছুটে এসেছিলেন ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ এর অন্যতম সদস্য আরিয়া’স কালেকশনের সত্ত্বাধিকারী নিগার ফাতিমা ও কাকলী’স অ্যাটায়ারের সত্ত্বাধিকারী কাকলী তালুকদার। 

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন ইডিইউর স্কুল অব বিজনেসের অ্যাসোসিয়েট ডিন প্রফেসর ড. রকিবুল কবির ও স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অ্যাসোসিয়েট ডিন প্রফেসর ড. নাজিম উদ্দিন এবং ইডিইউর নেটওয়ার্কিং অ‌্যান্ড প্লেসমেন্ট সেলের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ তানজিদা আফরিন।

রেজাউল/এসবি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়