ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সাতক্ষীরার শতগ্রাম ‘নিরাপদ’ পানিহীন  

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৫, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৩:২৪, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১
সাতক্ষীরার শতগ্রাম ‘নিরাপদ’ পানিহীন  

সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতার কারণে কয়েকটি ইউনিয়নের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর হাজার হাজার মানুষ নিরাপদ পানি, স্বাস্থসম্মত পায়খানাসহ নানা সমস্যায় ভূগছেন। আক্রান্ত হচ্ছেন পুষ্টিহীনতার পাশাপাশি ডায়রিয়া, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, চুলকানি, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগে। 

আলাপকালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের ১৭টি, ঝাউডাঙ্গার ২১টি ও আগরদাঁড়ি ইউনিয়নের ২৩টি গ্রাম মিলে মোট ৩ ইউনিয়নের ৬১ গ্রাম এবং সাতক্ষীরা পৌরসভার ৩৩টি গ্রামের শত শত পরিবার এই সমস্যায় আক্রান্ত। এরমধ্যে রয়েছেন বল্লী ইউনিয়নে ৩ হাজার ৮২৬ পরিবার, আগরদাঁড়ি ইউনিয়নে ৮ হাজার ৮৮৮ পরিবার, ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ৭ হাজার ৯২২ পরিবার, সাতক্ষীরা পৌরসভার ২৬ হাজার ৮৯৬ পরিবার ও কলারোয়া পৌরসভার ৬ হাজার ৫৭০ পরিবার। 

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের মুকুন্দপুর গ্রামের লাইলী বেগম, ভাটপাড়ার পাপিয়া খাতুন, ঝাউডাংগার যোগরাজপুরের ছকিনা খাতুন, বলাডাংগা গ্রামের শরবানু বেগম, আগরদাড়ির বকচরা গ্রামের শহিদুল্লাহ সরদার, রুবিলা খাতুন, সাতক্ষীরা পৌরসভার মুনজিতপুর, মুন্সীপাড়া এলাকার নাছিমা খাতুন, বদ্দিপুর কলোনির হোসনেয়ারা আক্তার ময়না, সুলতানপুর কাজীপাড়া এলাকার নাজমা আক্তারসহ অনেকেই আলাপকালে জানান তাদের এলাকা ৭/৮মাস জলাবদ্ধ থাকে এবং লবণাক্ত থাকায় খাবার পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রায় ২/৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এক কলস খাবার পানি আনতে হয়। আবার এক ড্রাম পানি ৩০ টাকা দিয়ে কিনে খাওয়া লাগে। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে ভিটেবাড়িতে পানি জমে থাকায় ল্যাট্রিন করার মতো জায়গাও থাকেনা। আর লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, চুলকানি-পাচড়া, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তারা।

তারা আরও জানান,স্থানীয় বেতনা নদী ভরাট হওয়ায় এবং এলাকায় শত শত মাছের ঘেরের কারণে পানি সঠিক পথে নিষ্কাশন হতে না পারায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ সময় তারা নিরাপদ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিনসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

উত্তরণের ওয়াশ এসডিজি-ওয়াই বাংলাদেশ সাব প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন ফেজ-২ প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী হাসিনা পারভীন জানান, জলাবদ্ধতার কারণে সাতক্ষীরা সদরের ৩টি ইউনিয়ন ও সাতক্ষীরা পৌরসভা, কলারোয়া পৌরসভার লক্ষ মানুষ নিরাপদ পানি, স্বাস্থসম্মত পায়খানা এবং হাইজিন সংকটে ভূগছেন।  অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন পুষ্টিহীনতার পাশাপাশি ডায়রিয়া, আমাশয়সহ নানান রোগে। তাই নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে এলাকাবাসীকে সচেতন করার জন্য সরকারের পাশাপাশি কাজ করছে উত্তরণ।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজমল হোসেন জানান, এলাকায় খাবার পানির সমস্যা প্রকট। খাবার পানি ও স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করতে সরকারি বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরী।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান জানান, বল্লী, ঝাউডাঙ্গাসহ কয়েকটি এলাকায় লেয়ার না পাওয়ায় ডিপটিউবয়েল বসানো সম্ভব হয়ে উঠছেনা। 

সাতক্ষীরা পৌর সভার মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি বলেন, সুপেয় পানির জন্য যে পাওয়ার ট্রিটমেন্ট প্লান রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় পানি উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে না। 

শাহীন গোলদার/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়