ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

তরুণরা করছেন ফটোগ্রাফি, ভ্রমণকারীরা বলছেন ফাঁদ

অমরেশ দত্ত জয়, চাঁদপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৩, ৫ মে ২০২২   আপডেট: ১৩:৪০, ৫ মে ২০২২
তরুণরা করছেন ফটোগ্রাফি, ভ্রমণকারীরা বলছেন ফাঁদ

চাঁদপুরের পর্যটন কেন্দ্র বড়স্টেশন এলাকার বঙ্গবন্ধু পার্কে ঘুরতে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের ছবি তুলে দিয়ে আয়ের স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় বেশ কয়েকজন তরুণ। তারা শহরের যমুনা রোডের নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান। আয়-রোজগারের স্বপ্নেই নানা উপায়ে ৬০/৭০ হাজার টাকা খরচ করে কাঁধে তুলে নিয়েছেন ডিএসএলআর ক্যামেরা। নিজেদের ফটোগ্রাফার হিসেবে পরিচিত করতে এই স্পটে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় ব্যয় করছেন তারা।

এদিকে ভ্রমণ পিপাসুরা দাবি করছেন, যুবকরা ফটোগ্রাফি করে বেকারত্ব ঘোচানোর টেষ্টা করছেন এটা যেমন আশার সংবাদ, কিন্তু ফটোগ্রাফির নামে ভ্রমণকারীদের হেনস্তা করছে তারা। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবেই এমনটা হচ্ছে।   

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড়স্টেশন ত্রিনদী মোহনা এলাকার বঙ্গবন্ধু পার্কে ভ্রাম্যমাণ ফটোগ্রাফাররা ভ্রমণ পিপাসুদের পিছু পিছু হাঁটছেন আর ছবি তুলতে উৎসাহ দিচ্ছেন। আবার কেউ পার্কের বেঞ্চে বসে আছেন, অপেক্ষা করছেন কখন তার ডাক আসবে। 

তাদের মধ্যে ফটোগ্রাফার কবীর ও আলমগীর নামের দুই তরুণ বলেন, পরিবারে আর্থিক সংকটে খুব একটা পড়ালেখা করতে পারিনি। সমাজের বোঝা না হয়ে সৎ পথে আয় রোজগারের সন্ধানেই ফটোগ্রাফি করছি। ছবিপ্রতি গ্রাহক থেকে নিচ্ছি মাত্র ৫ টাকা। মুহূর্তেই ক্যামেরার ছবি মোবাইলেও ট্রান্সফার করে দেওয়া হচ্ছে। গ্রাহকদের সাথে ভালো ব্যবহার করে সুনাম বয়ে আনতে চাই আমরা।

এদিকে কবীর ও আলমগীরের মতো এপেশায় মনোনিবেশ করার চেষ্টা করছেন নাজির, রাহাত, আনিস, নাজমূল, পারভেজ, মেহেদী, বাবু, এমরানসহ ১৫ থেকে ১৭ জন। তাদের সবার গড় বয়স ১৫ থেকে ২৫ এর ভেতর হবে।

তাদের অনেকে বলছেন, আমরা এখানকার স্থানীয় পাইলট হাউজ ও যমুনা রোডের বাসিন্দা। আর এই স্থানগুলো বেশিরভাগই মাদকাসক্ত ও নানা কুকর্মে চিহ্নিত এলাকা। তাই এগুলো থেকে নিজেদের দূরে রাখতেই আমরা সকাল-সন্ধ্যা এখানে ডিএসএলআর নিয়ে ফটোগ্রাফিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। ঈদ, পূজাসহ বিশেষ দিবসে এই পেশায় আমাদের আয় রোজগার মন্দ হয় না। আমরা নিজেদের ভালো ব্যবহার দিয়ে চাঁদপুরের ফটোগ্রাফারদের সুনাম এখানে আসা পর্যটকদের মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে চাই।

মহন, আরিফ, কামাল নামের বেশ কয়েকজন পর্যটক বলেন, এই ফটোগ্রাফারদের বাজে পোশাকের মতো কয়েকজনের ব্যবহারও খুব বাজে। ১ ক্লিকে ছবি ১টার স্থানে ১০/১২টা কৌশল করে তুলে চাঁদাবাজদের মতো টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে ওরা স্থানীয় হওয়ায় বেশ কয়েকজন একত্রিত হয়ে গালাগালসহ অশোভন আচরণ এমনকি গ্রাহকদের মারধর ও হয়রানি করার চেষ্টা করে। 

তারা আরও বলেন, এই যুবকরা ছিনতাই করারও চেষ্টা করে থাকে। ফটোগ্রাফি মনে হচ্ছে তাদের নতুন ফাঁদ। মেয়ে দেখলে ওরা অশ্লীল আচরণ ও ইভটিজিং করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করে থাকে। তাই এদের দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে সংশ্লিষ্টদের সু-দৃষ্টি গুরুত্বসহকারে প্রয়োজন।

এবিষয়ে চাঁদপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বড়স্টেশনে যারা ফটোগ্রাফি করছে, ওদের কোনো কমিটি নেই। তাই দ্রুতই কমিটি করার উদ্যোগ নেবো। কমিটি হলে ওদের আইডি কার্ড দিয়ে সহজেই চিহ্নিত করা যাবে। এতে বহিরাগতরা এখানে ফটোগ্রাফি করে পরিবেশ নষ্ট করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এরপর পর্যায়ক্রমে ফটোগ্রাফারদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনবো। চাঁদপুরের বঙ্গবন্ধু পার্কের সুনাম যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করবো।

/এইচএম/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়