ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মহ্ই-মেওয়া-বাচ্ছুরি, মূলত এটা ‘বাঁশ কোড়ল’

বান্দরবান প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ২১ মে ২০২২   আপডেট: ২১:৩৮, ২১ মে ২০২২
মহ্ই-মেওয়া-বাচ্ছুরি, মূলত এটা ‘বাঁশ কোড়ল’

ছবি: রাইজিংবিডি

খাগড়াছড়ির অন্যতম জনপ্রিয় সুস্বাদু খাবারের নাম ‘বাঁশ কোড়ল’। মারমারা একে বলে ‘মহ্ই’ আর ত্রিপুরারা ‘মেওয়া’। চাকমারা এর নাম দিয়েছে ‘বাচ্ছুরি’। মূলত বাঁশের গোড়ার কচি নরম অংশকে বলা হয় ‘বাঁশ কোড়ল’। আজকাল বাঙালিরাও ‘বাঁশ কোড়ল’ খেতে বেশ অভ্যস্ত।

খাগড়াছড়ির প্রতিটি উপজেলার হাটবাজারে দেখা মিলে এ সবজির। বিশেষ করে, বছরের মে মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত এ সবজির ভরা মৌসুম থাকে। এসময় মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, মিতিঙ্গ্যা বাঁশ, ফারুয়া বাঁশ, বাজ্জে বাঁশ, কালিছুরি বাঁশসহ বেশ কয়েক প্রজাতির বাঁশ কোড়ল পাওয়া যায়।

বর্ষার শুরুতে বৃষ্টির পানিতে মাটি নরম হলে এটি বাড়তে শুরু করে। মাটি হতে ৪-৫ ইঞ্চি গজিয়ে উঠলে এটি খাওয়ার উপযোগী হয়। বিভিন্ন জাতের বাঁশ কোড়ল স্বাদে ভিন্ন। তবে মুলি বাঁশ কোড়ল সবচেয়ে সুস্বাদু হওয়ায় সবার কাছে এটি জনপ্রিয়। ফলে বাজারে এর চাহিদা ও দাম কিছুটা বেশি। প্রতি কেজি বাঁশ কোড়ল পাওয়া যায় ৭০-১০০ টাকার মধ্যে। তবে চাহিদা অনুযায়ী এর দাম কম-বেশি হয়ে থাকে।  

বর্তমানে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে এ সবজি। খাগড়াছড়ির নানা পর্যটনে ঘুরতে আসা পর্যটকদেরও অন্যতম আকর্ষণ এটি।

দীঘিনালার বাঁশ কোড়ল ব্যবসায়ী সদক চাকমা বলেন, মূলত বছরের জুন-আগস্ট মাসে বর্ষা মৌসুমে বাঁশের বংশ বৃদ্ধি হয়। এসময় পাহাড়ের গায়ে মাটি ভেদ করে উঠতে শুরু করলে পাহাড়িরা তা সংগ্রহ করে বাজারজাত করেন। এখনো পুরোপুরিভাবে বাজারে আসা শুরু হয়নি। আগামী মাস থেকে বাজারে প্রচুর বাঁশ কোড়লের দেখা মিলবে। 

একই এলাকার রতন জ্যোতি চাকমা বলেন, স্যুপ, মুন্ডি, মাংস দিয়ে রান্না ও ভাজি করে খাওয়া যায় বাঁশ কোড়ল। এটা পাহাড়িদের পাশাপাশি বাঙালিদের কাছেও বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার।

দীঘিনালার লারমা স্কয়ারের পাশে বাঁশ কোড়ল বিক্রি করতে আসা সোনাবি চাকমা বলেন, আগামী মাস থেকে পুরোপুরিভাবে বাঁশ কোড়ল বাজারে আসা শুরু করবে। এখন চাহিদা থাকা সত্ত্বেও তেমনভাবে আহরণ করতে পারছি না। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বর্তমানে জেলার বিভিন্ন নামিদামি হোটেল রেস্তোরাঁয়ও বাচ্চুরি বিক্রি করি। 

খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মহব্বত উল্ল্যা বলেন, পাহাড়ে ক্রমশ বন উজাড়ের ফলে পানির স্তর অনেকটা নিচে নেমে গেছে। ফলে পাহাড়ে বাঁশ উৎপাদন তেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তাছাড়া অপরিকল্পিত জুম চাষ, নির্বিচারে মাটি ও পাথর উত্তোলনের ফলে ঝিরি-ঝরনা শুকিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে ধীরে ধীরে বাঁশ উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।

বাসু দাশ/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়