বিরল রোগ, বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত নূরুল আমীন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিরল রোগে ‘রিউম্যাটয়েড আর্থাইটিস ভাসকুলাইটিস’ আক্রান্ত হয়েছেন মো. নূরুল আমীন (৩৯) নামে এক ব্যক্তি। শিগগিরই জটিল এই রোগের চিকিৎসা না করা গেলে তার দুটি চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
নূরুল আমীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই ইউনিয়নের রাজঘর গ্রামের মরহুম আবদুর রহমানের ছেলে। পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
জানা যায়, চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি তার শরীরে এই রোগ ধরা পড়ে। প্রথমে হাতের দুই আঙ্গুলের মাথা স্পর্শ করলে শরীরে ঠাণ্ডা অনুভব করতেন। কিছুদিন পরে আঙ্গুলে একটু একটু ব্যথা অনুভূত করেন। স্থানীয়ভাবে ডাক্তার দেখালে তিনি ব্যথার ওষুধ দেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি, বরং আঙ্গুলের ব্যথা আরো বাড়ে।
কয়েক দিন যাওয়ার পর আঙ্গুলের রং পরিবর্তন হতে থাকে। প্রথমে লাল পরে নীল ও এরপর কালো পাথরের মতো হয়ে যায়। তিন থেকে চার দিনের ব্যবধানে দুই হাতের আট আঙ্গুল (বৃদ্ধ আঙ্গুল বাদে) কালো পাথরে মতো শক্ত হয়ে যায়। পরে আঙ্গুল থেকে রোগটি চোখে ছড়ায়। তার দুটি চোখ পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরসহ ঢাকায় অনেক ডাক্তার দেখান নূরুল আমীন। তবে কোনো কাজ হয়নি। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের রিউম্যাটলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আবু শাহিনকে দেখান। বর্তমানে তার তত্ত্বাবধানেই চিকিৎসা করাচ্ছেন।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রোগটির নাম ‘রিউম্যাটয়েড আর্থাইটিস ভাসকুলাইটিস’। বাংলাদেশে এই রোগে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি তিনি। আঙ্গুল থেকে রোগটি যেন আর ওপরের দিকে উঠতে না পারে সে জন্য দুই হাতের আটটি আঙ্গুলই কেটে ফেলতে হবে।
চিকিৎসক বলেন, দুই হাতের আটটি আঙ্গুল কাটতে প্রায় ৬ লাখ টাকা লাগবে। আর চোখের চিকিৎসার জন্য কতো টাকা লাগবে তা এখনি বলা যাচ্ছে না। তবে প্রচুর টাকা লাগবে। দ্রুত চোখের চিকিৎসা না করাতে পারলে সারা জীবনের জন্য তাকে অন্ধত্ব বরণ করতে হবে।
নুরুল আমিন বলেন, ‘হাতের আটটি আঙ্গুলই পচন ধরছে। বিরল রোগ হওয়ায় কয়েক ধাপে হাতের আঙ্গুল গুলো অপারেশনের মাধ্যমে কেটে ফেলতে হবে। মাসে দুই থেকে তিনবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিজি হাসপাতাল) গিয়ে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।’
‘প্রতিবার অনেক টাকা খরচ হয়। হাতের চিকিৎসা (অপারেশন) করাতে প্রায় ৬ লাখ টাকা প্রয়োজন। এরই মাঝে রোগটি হাত থেকে চোখে গড়িয়েছে। চোখ পাথরের মত শক্ত হয়ে যাচ্ছে। চশমা পড়লে মোটামুটি দেখি, চশমা খুললে কিছুই দেখি না।’
কান্না জড়িত কণ্ঠে নুরুল আমিন বলেন, ‘আমার ছোট ছোট তিনটি সন্তান। বড় মেয়ে ৮ বছর, মেঝো মেয়ের সাড়ে ৩ বছর ও ছোট মেয়ের বয়স সাড়ে ৩ মাস। আমি বাঁচতে চাই, আমার হাত পচে যাওয়ায় মেয়েদের কোলে নিতে পারছি না, কোনো আদর করতে পারছি না। অন্যের সাহায্যে সব কিছু করতে হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আগে ষ্টেশনারীর ব্যবসা করতাম, এখন অনেক দিন ধরে বেকার, কোনো কাজ করতে পারছি না। অন্যের সাহায্যে কোনো মতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেঁচে আছি। জেলা প্রশাসন থেকে চিকিৎসার জন্য ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। সদর উপজেলা প্রশাসনও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। পাশাপাশি মানুষজন ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করছেন। চিকিৎসা যেন চালিয়ে যেতে পারি তাই সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহায়তা কামনা করছি।’
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘নূরুল আমিনের বিষয়ে আমরা অবগত। তার পারিবারিক অবস্থা খুব খারাপ। সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা সহায়তা করা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জেলা প্রশাসক নুরুল আমিনের চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। পাশাপাশি তাকে আর্থিকভাবেও সহায়তা করবেন।’
রুবেল/কেআই
আরো পড়ুন