ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

লোডশেডিংয়ে শিডিউল বিপর্যয়, দুর্ভোগ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৭, ২৪ জুলাই ২০২২  
লোডশেডিংয়ে শিডিউল বিপর্যয়, দুর্ভোগ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে লোডশেডিং শিডিউল বিপর্যয়ে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিং হওয়ার কথা থাকলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে চাহিদার তুলায় বিদ্যুতের বরাদ্দ কম পাওয়ায় শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় লোডশেডিংয়ের কারণে আইটি প্লাটফর্ম গুলো অনলাইনে কাজ করতে পারছেনা। শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বেশি সময় ধরে হওয়ায় আবাদি জমিতে সেচ দিতেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কৃষকদের। এছাড়াও ২৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতলে লোডশেডিংয়ের কারণে চিকিৎসাসেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের ফলে ভোগান্তিতে রয়েছেন রোগীরা। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে পাঠদান  ব্যাহত হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা ফারুক আহমেদ বলেন, 'দিনের মধ্যে ৭ থেকে ৮ বার বিদ্যুৎ যায়। আষাঢ় মাসেও নেই বৃষ্টি। প্রচণ্ড গরমে মানুষের নাজেহাল অবস্থা। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে জীবন দুঃসহ হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ কখনও ৩০ মিনিট আবার কখনও এক-দুই ঘণ্টা পর্যন্ত আসে না। রাতের বেলায় একাধিকবার বিদ্যুৎ যায়।'

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টুটুল নামের এক শিক্ষক বলেন, ‘গরমের কারণে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনযোগ দিতে পারছে না। এতে করে পাঠদান ব্যহত হচ্ছে।'

লোডশেডিংয়ের ভোগান্তির বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ফেরদৌস অনু বলেন, ‘সরকার ঘোষণা করেছে দিনে এক ঘন্টা লোডশেডিং হবে। কিন্তু নেসকোর দেওয়া লোডশেডিংয়ের শিডিউলে লিখা আছে দিনে দুই ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকবে না। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য দিনে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং ব্যাপার না। কিন্তু দুই ঘণ্টার জায়গায় দিনে ৫-৭ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।’

ঘনঘন লোডশেডিং হওয়ার কারণে জেলার বড়বড় আইটিজন গুলোতে অনলাইনের কাজে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। 

সারোয়ার জাহান নামের একজন বলেন, ‘মনযোগ সহকারে অনলাইনে কাজ করছি, হঠাৎ লোডশেডিং। গ্রাহকের কাজ মাঝপথে আটকে যাওয়ায় শ্রমের মজুরি পাচ্ছি না। লোডশেডিংয়ের সময় দীর্ঘ হওয়ায় যে গ্রাহক গুলো অনলাইনে কাজ করতে আসছে, বিরক্তবোধ করছে। বিদ্যুৎ না থাকার ফলে তারাও যথা সময়ে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না।'

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এবার ৫২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষাবাদের লক্ষমাত্রা ধরেছে কৃষিবিভাগ। রোপা আমন চাষাবাদের শুরু দিকে তীব্র ক্ষরার কারণে জমি প্রস্তত করতে দেরি হয়েছে। জেলায় চলতি বছরের জুন মাসে ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। কিন্তু জুলাইয়ে গত জুন মাসের অর্ধেকও বৃষ্টিপাত হয়নি। ধান আবাদের জন্য কৃষকরা মাঠ প্রস্তত করতে গেলে লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ দিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। 

মুনিরুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, ‘ পল্লী বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবনে অস্বস্তি আছে। এখন ধানি জমি প্রস্তত করতে গিয়েও লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে। বিদ্যুত না থাকায় জমিতে সেচ দিতে গিয়েও বিপাকে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। শুধু ধানে না, অন্য মৌসুমে ফসলেও সেচ দিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমাদের।’

লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে জেলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতলেও। এতে করে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। 

আতিকুল্লাহ আরিফ নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘আমার স্বজনকে নিয়ে রাতের বেলায় হাসপাতলে গেছি। হঠাৎ লোডশেডিং। এত বড় হাসপাতলে জেনারেটরও নেই। গরমে সময় পার করতে হয়েছে। হাসপাতলে আসা রোগীসহ রোগীর স্বজনদের নাজেহাল অবস্থা।’

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতলের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘হাসতাপালে জেনারেটর আছে। জেনারেটরের ব্যাটারিতে সমস্যা থাকায় সাময়িক বিদ্যুৎসেবা বন্ধ ছিল।’

নেসকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আলিউল আজিম বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় নেসকোর গ্রাহকদের চাহিদা আছে ৩৬ মেগাওয়াট। কিন্তু চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ বরাদ্দ পাওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সরকারিভাবে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করার কথা থাকলেও আমরা সেই কথা রাখতে পারারছি না। আমরা এ জন্য গ্রাহকদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিত।'

শিবগঞ্জ উপজেলা নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আলী বলেন, ‘শিবগঞ্জ উপজেলায় নেসকোর গ্রাহকের চাহিদা ৬ মেগাওয়াট। কিন্তু আমরা গ্রাহককে দিতে পারছি মাত্র ৩ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ বরাদ্দ পাওয়ায় লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছি।'

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যুতের সরবরাহ কম থাকায় বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।'

মেহেদী/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়