ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

হবিগঞ্জে শিল্পবর্জ্যে হুমকিতে পরিবেশ, মরছে মাছ

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ২৮ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ২০:৫৮, ২৮ আগস্ট ২০২২
হবিগঞ্জে শিল্পবর্জ্যে হুমকিতে পরিবেশ, মরছে মাছ

গ্যাস ও উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে হবিগঞ্জে বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে শিল্পকারখানা। কিন্তু এসব কারখানার অনেকগুলোতে চালু থাকে না ইটিপি। এখানে প্রায় শিল্পকারখানা থেকে বর্জ্য সরাসরি জলাশয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে হবিগঞ্জের হাওর, নদীখাল ও বিল। শিল্প কারখানার বর্জ্য পদার্থের কারণে পানি দূষিত হয়ে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অনেক স্থানে পানির রঙ কুচকুচে কালো হয়ে গেছে। এতে প্রতিনিয়তই অসুস্থ হচ্ছেন নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর হাজার হাজার বাসিন্দা। শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ থেকে শুরু করে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। নদীর বিষাক্ত পানি পান করে মারা যাচ্ছে মাছ, গরু, ছাগল, হাঁস ও মুরগি।

শিল্প বর্জ্য ও কেমিক্যাল হাওরের পানিতে মিশে অনেক স্থানে মাছ মরে ভেসে উঠতে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে জেলার মাধবপুরের সোনাই ও খাস্টি নদী, মাহমুদপুরের প্লাবন ভূমিতে এ শিল্পবর্জ্য ও কেমিক্যাল মিশছে বলে জানিয়েছে মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদফতর।

মাধবপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু আসাদ ফরিদুল হক জানান, বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার বুল্লা ব্রিজ থেকে মাহমুদপুরের প্লাবন ভূমি পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার জায়গাজুড়ে পানিতে মরা মাছ ভেসে উঠে। এটি শুধু রাস্তার পাশের দৃশ্য। তবে হাওরে মাছ মরে যাওয়ার পরিমাণ আরও বেশি হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্টও করেন তিনি। 

এ কর্মকর্তা বলেন, নিয়মানুযায়ী বিষাক্ত বর্জ্য একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাইরে নির্গত করতে হয়। কিন্তু অনেক শিল্প কারখানা সেই নিয়ম অনুসরণ না করে বর্জ্য ও বিষাক্ত কেমিক্যাল সরাসরি জলাভূমিতে ছেড়ে দিচ্ছে। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদফতরের জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন। 

অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে সুতাং নদীর উৎপত্তি। জেলার চুনারুঘাট উপজেলার ওপর দিয়ে বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করেছে নদীটি। পরে শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে লাখাই উপজেলার ওপর দিয়ে মেঘনা নদীতে গিয়ে মিশেছে সেটি। 

অলিপুর শিল্প এলাকা থেকে বয়ে গেছে শৈলজুড়া ভাটি খাল। অলিপুর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার অতিক্রম করে এ খালের সংযোগ হয়েছে গোড়াবই গ্রামে সুতাং নদীতে। ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন শিল্প কারখানার বিষাক্ত কালো পানি এ খাল দিয়ে সুতাং নদীতে প্রবেশ করছে। এ নদী থেকে দূষিত পানি প্রবেশ করছে হাওড়সহ প্রাকৃতিক জলাশয়ে। 

এক সময় সুতাং নদীতে বর্ষা মৌসুমে স্থানীয় লোকজন নৌকা নিয়ে দলবেঁধে মাছ ধরেছে। সেই সময়ে শুকনো মৌসুমেও প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এখন এ ধারা পাল্টে গেছে। 

সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুরসহ নানা এলাকার শিল্পের বিষাক্ত কালো পানি শৈলজুড়া ভাটি খাল দিয়ে সুতাং নদীতে প্রবেশ করছে। এ কারণে নানা প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্ত। বর্তমানে শীতকাল আসার আগেই নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। নদীতে মাছ ধরা দূরের কথা, অনেক স্থানে জেগে উঠছে চর। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। শুকিয়ে যাওয়া নদীর চরে লোকজন বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করছে।

অনেকে আবার নদীর পাড় ভরাট করে ঘরবাড়ি তৈরি করছেন। এতে করে নদীর রূপরেখা দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। নদীতে যেটুকু পানি রয়েছে তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাই নদীপাড়ের লোকজন মাটির নিচ থেকে পাম্পের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে বোরো আবাদসহ নানা ফসল চাষাবাদ করছেন।

যোগাযোগ করা হলে হবিগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, আমাদের জনবল কম থাকার কারণে এখনও হবিগঞ্জের সবগুলো শিল্প কারখানা পরিদর্শন করা সম্ভব হয়নি। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।   

হবিগঞ্জ জেলা মৎস্য বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় মোট উৎপাদনের বছরে ৫ টন মাছ উদ্বৃত্ত থাকে। শিল্পবর্জ্যে এমন প্রভাব মৎস্য সম্পদের জন্য অশনি সংকেত। এ বিষয়ে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মতপ্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল। 

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, নদী ও হাওড় রক্ষায় কার্যক্রম চলছে। দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। সরেজমিনে দেখার পর খনন ও দখল, দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়