হিট স্ট্রোকে মরছে মুরগি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারি
মাহমুদুল হাসান মিলন, ময়মনসিংহ || রাইজিংবিডি.কম
![হিট স্ট্রোকে মরছে মুরগি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারি হিট স্ট্রোকে মরছে মুরগি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারি](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2022August/5858-2208281649.jpg)
একদিকে প্রকৃতির বিরূপ আচরণে অতিরিক্ত গরম অন্যদিকে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ময়মনসিংহের অধিকাংশ খামারে প্রায় প্রতিদিন হিটস্ট্রোকে শত শত মুরগী মারা যাচ্ছে। তাপমাত্রা বেশি থাকায় লেয়ার মুরগীর খামারে ডিমের উৎপাদনও কমেছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন খামারিরা।
মুরগীর প্রাথমিক চিকিৎসা ও খামারে পানি ছিটানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও কাজ হচ্ছে না। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত গরমে মুরগীর হিটস্ট্রোক হচ্ছে। খামারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কোন কার্যকরি ফল পাওয়া যাবে না।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী জেলায় ব্রয়লার মুরগীর নিবন্ধনকৃত বাণিজ্যিক খামারের সংখ্যা ৪৩৮টি, অনিবন্ধকৃত ৫ হাজার ২২৭টি, নিবন্ধনকৃত লেয়ার মুরগীর খামার ৩১৫টি, অনিবন্ধনকৃত ৪ হাজার ৭৮৩টি, নিবন্ধনকৃত কক মুরগীর খামার ৩৭টি, অনিবন্ধনকৃত ১ হাজার ২১৩টি, নিবন্ধনকৃত হাঁসের খামার ৬১টি এবং অনিবন্ধকৃত ১ হাজার ৬৫টি রয়েছে।
সম্প্রতি এসব খামারে মুরগীর মড়ক দেখা দিয়েছে। খামারিরা জানিয়েছেন, ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসেও নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে আবহাওয়া খুবই উত্তপ্ত হয়ে গেছে। আবার নিয়মিত বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্যান চালানো যাচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন মুরগী মারা যাচ্ছে। এ অবস্থায় তারা প্রতিদিনই লোকসানের ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার মোহাব্বতপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন। চারবছর যাবৎ লেয়ার মুরগীর খামার করে আসছেন। বর্তমানে তার খামারে এক হাজার মুরগী রয়েছে। গত বছর থেকে খাবারের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধির কারণে অনেকটা চাপের মধ্যে আছেন তিনি। সম্প্রতি অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে গরমের কারণে প্রতিদিন তার খামারে ১০ থেকে ১৫টি মুরগী মারা যাচ্ছে। কোনো উপায় না পেয়ে দিশেহারা এই খামারী।
আলমগীর হোসেন বলেন, গরমের কারণে নানা রোগে মুরগী আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পাশাপাশি ডিম উৎপাদনও অনেক কমে গেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদেরও সঠিক পরামর্শ পাওয়া যায় না।
একই এলাকার খামারী শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আগে যে দামে সয়াবিন কিনতাম এখন দাম দ্বিগুণ হয়েছে। প্রোটিন এবং ভুট্টার দামও বেড়েছে। মেডিসিনের দাম বেড়ে হয়েছে তিনগুণ। কিন্তু মুরগীর দাম খুব একটা বাড়েনি। এক কেজি ওজনের মুরগী করতে খরচ হয় ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। আমাদের বিক্রিও করতে হয় একই দামে। এখনতো গরমে স্ট্রোক করে প্রতিদিন মুরগী মারা যাচ্ছে।’
অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও লোডশেডিংয়ের কারনে মুরগী মৃত্যুতে খামারীদের ক্ষতির কথা স্বীকার করে ময়মনসিংহ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ওয়াহেদুল আলম বলেন, পোল্টি খামারে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্ট তাপমাত্রা। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে পোল্টি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। খামারে এক ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকলে বিশেষ করে পোল্টি মুরগীর হিটস্ট্রোক করে। সম্প্রতি গরমে অনেক খামারে মুরগী মারা যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ডা.মোহাম্মদ ওয়াহেদুল আলম আরও বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক খামারী রয়েছে যাদের জেনারেটর কিনার সামর্থ্য নেই। তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে টিনসেডের চালায় পানি ব্যবহার করা যেতে পারে।
/বকুল/
আরো পড়ুন