ঢাকা     সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

পঞ্চগড়ে গুজব ছড়িয়ে ভাঙচুর, যুবদল কর্মীসহ আটক ১৮

পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫১, ৫ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ১৭:৫৫, ৫ মার্চ ২০২৩
পঞ্চগড়ে গুজব ছড়িয়ে ভাঙচুর, যুবদল কর্মীসহ আটক ১৮

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও ‘আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা দুজনকে গলাকেটে হত্যা করেছে’ এমন গুজবে আবারও উত্তপ্ত হয় পঞ্চগড়। বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। ভাঙচুর হয় কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

শনিবার (৪ মার্চ) রাতে এ গুজব কেন্দ্র করে ভাঙচুর করা হয়। তবে রোববার (৫ মার্চ) সকাল থেকে শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। দুই দিন ছুটির পর আজ সরকারি-বেসরকারি দপ্তর খোলা থাকায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। তবে শহরে মানুষজনের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে অন্যান্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম।

গুজব রটিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার অভিযোগে ১৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার দিবাগত রাতে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আটকদের মধ্যে পৌর যুবদলের কর্মী ফজলে রাব্বী (২৬) রয়েছেন। 

পুলিশ ও শহরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার রাত ৯টার তিনটি মোটরসাইকেলে ছয় জন আরোহী দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে শহরের বিভিন্ন মোড়ে অবস্থানরত মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেন। তারা বলছিলেন, শহরের তুলারডাঙ্গা এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা দুজনের গলাকেটে হত্যা করেছে। এরপর মুহূর্তে শহরের রাস্তায় মানুষ নেমে আসে। হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে ‘নারায়ে তাকবির’ ধ্বনি তুলে তাঁরা দুই ভাগ হয়ে আহমদনগর ও তুলারডাঙ্গা এলাকার দিকে ছুটতে থাকে। এ সময় পঞ্চগড় বাজারের কদমতলা এলাকার ওয়াকার শোরুম নামে জুতার দোকানের সাটার ভেঙে মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় একদল মানুষ। কিছু সময় পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে বিভিন্ন মসজিদের মাইকের মাধ্যমে ও জেলা প্রশাসন থেকে সড়কে মাইকে প্রচার করা হয়, শহরের কোথাও হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে। মানুষকে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করার আহ্বান জানান হয়। রাত ১০টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে টিয়ারশেলের শব্দ শোনা গেছে। 

এর মধ্যে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পঞ্চগড় পৌরসভার ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় একটি মাইক্রোবাস পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।

পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ মিঞা বলেন, গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের বিষয়ে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

শুক্রবার (৩ মার্চ) আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) বার্ষিক সালানা জলসা কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয় পঞ্চগড়। এ দিন দুপুরের পর থেকে রাত অবধি গুলির শব্দে উত্তপ্ত ছিল পুরোশহর। মহাসড়কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল ইটপাথর। বন্ধ ছিল যান চলাচল। ঘটেছিল দোকানপাটসহ বিভিন্নস্থানে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও। চতুর্দিকে বিরাজ করছিল আতঙ্ক। রাত ৯টার দিকে জলসা স্থগিত ঘোষণা করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। 
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসা বন্ধসহ তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ করে মুসল্লিরা। পরে পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের একজন এবং মুসল্লিদের মধ্যে একজন নিহত হয়।

দীর্ঘ দিন ধরে আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদসহ বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন। এবার পঞ্চগড়ের আহমদনগর এলাকায় ৩ মার্চ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত তিন দিন ব্যাপী বার্ষিক সালানা জলসার আয়োজন করে। এই জলসা বন্ধ করার জন্য বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দুপুর থেকে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধসহ ভাঙচুর ও আহমদিয়াদের বাড়িতে হামলা করে বিক্ষুব্ধরা। শুক্রবারও বিক্ষোভ করে তারা। এরপর সংঘর্ষ বাধে। 

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার জুমআর নামাজের পর আহমদিয়াদের তিন দিন ব্যাপী বার্ষিক সালানা জলসা বন্ধসহ তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে জেলা শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদের ডাকে এ বিক্ষোভ মিছিল কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বড় পরিসরে চৌরঙ্গী মোড়ের দিকে আসতে থাকে। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশের উপর হামলা করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে মুসল্লিরা। পুলিশও শত শত টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এর মধ্যে বিক্ষোভকারীদের কয়েকটি অংশ জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর, ট্রাফিক পুলিশের অফিসে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া আরেকটি অংশ পঞ্চগড় বাজারে আহমদিয়াদের চারটি দোকানের মালামাল বের করে আগুনে পুড়ে দেয়। তাদের অন্তত ২০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে আহমদিয়া সম্প্রদায়।

বিক্ষোভের খবর পেয়ে আগে থেকে পঞ্চগড় শহরের চৌড়ঙ্গী মোড়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে পুলিশ অবস্থান নিয়েছিল। পুলিশের সঙ্গে বিজিবি এবং র‌্যাবও অবস্থান নেয়। তবে বিক্ষুব্ধ জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে জলসা স্থগিতে ঘোষণা দেয় প্রশাসন।
 

নাঈম/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়