কুমিল্লার বাটিকের পোশাক যাচ্ছে বিদেশেও
রুবেল মজুমদার, কুমিল্লা || রাইজিংবিডি.কম
কুমিল্লার বেশ কয়েকটি গ্রামে যুগের পর যুগ ধরে তৈরি হচ্ছে বাটিক কাপড়। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা আর ক্রেতাদের চাহিদার কথা ভেবে নিত্যনতুন ডিজাইন ফুটিয়ে তুলছেন স্থানীয় কারিগররা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহের পাশাপাশি রপ্তানি হচ্ছে এসব কাপড়। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে গ্রামটি। তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।
জেলার অন্যতম বাটিকের গ্রাম কমলপুর। কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী ছোট্ট গ্রাম। রঙে ও মানে টেকসই হওয়ায় এ গ্রামের বাটিকের শুনাম দেশজুড়ে। যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঐতিহ্যের এ বাটিক পোশাকে এসেছে নজরকাড়া সব নান্দনিক ডিজাইন। ক্রেতাদের কাছেও বাটিকের শাড়ি, থ্রি-পিস, শার্ট ও বেডশিটের চাহিদা রয়েছে। তৈরি হয়েছে সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান। জেলার চাহিদা মিটিয়ে বছরে প্রায় ৪০-৪৫ কোটি টাকার পোশাক যাচ্ছে দেশি-বিদেশে।
সিল্কের ওপর বাটিক প্রিন্টের শাড়ি আপনাকে যতটা স্বস্তি দেবে, ততটাই করবে আকর্ষণীয়। সালোয়ার-কামিজ-ওড়নায় বাটিকের অনবদ্য কাজ পোশাকে আনে দারুণ মাধুর্য। সঙ্গে ব্যবহারে রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্যের পরশ। বাটিকের ফতুয়া বা শার্ট গরমে স্বস্তিদায়ক। নতুন নতুন নকশা আর স্বল্পমূল্যের জন্য কুমিল্লার বাটিক ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় বরাবরই স্থান করে নিয়েছে। তবে এখানেও ঢুকে পড়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাই পোশাক কেনার আগে কুমিল্লার বাটিক কি-না, যাচাইয়ের পরামর্শ প্রকৃত ব্যবসায়ীদের।
কমলপুরে লাল মিয়া নামের এক ব্যক্তির হাত ধরে বাটিকের যাত্রা। ভারতের কলকাতা ও ত্রিপুরা রাজ্যে কাপড়ে মোম ও রঙ দিয়ে ব্লক তৈরির কাজ শেখেন তিনি। গ্রামে এসে ১৯৭৫ সালে লাল মিয়া তার ভাই মহন মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে বাটিক তৈরি শুরু করেন ছোট্ট পরিসরে।
লাল মিয়ার ভাই মহন মিয়া জানান, বর্তমানে শুধু কমলপুরেই রয়েছে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, শার্ট ও বেডশিট তৈরির ১৫টির মতো কারখানা। কমলপুরের বাটিক এখন কমলপুরে সীমাবদ্ধ নেই। পাশের আনন্দপুর, গলিয়ারা, বিবির বাজার ও গোমতীর ওপারে ইটাল্লা গ্রামেও কারখানা গড়ে উঠেছে।
মো. রাশেদুল ইসলাম ও ইব্রাহিম খলিলসহ বেশ কয়েকজন কারখানার মালিক জানান, বাটিকের পোশাকের মধ্যে বর্তমানে নান্দনিক ডিজাইনের সুতি ও সিল্কের শাড়ি, থ্রি-পিস নারীদের কাছে জনপ্রিয়। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করে পারা যাচ্ছে না।
তারা আরও জানান, কমলপুর ও আশপাশের গ্রামে অন্তত ২৫টি বাটিকের কারখানা রয়েছে। এ সকল কারখানা থেকে বছরে অন্তত ৪৫ কোটি টাকার বাটিকের কাপড় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশ ও বিদেশে যাচ্ছে। এছাড়া প্রত্যেক কারখানায় ৪০ জন করে গড়ে হাজারের অধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। স্থানীয় এ শ্রমিকরা বাটিকের কারখানায় কাজ করে স্বাবলম্বী।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন কুমিল্লার উপমহাব্যবস্থাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, বাটিক কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী পোশাক শিল্প। এ শিল্পের প্রসার ও বিপণনে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও সহজ ঋণের ব্যবস্থার কথা জানালেন এ কর্মকর্তা।
বাটিক প্রেমিকরা বলছেন, আরামদায়ক ও রুচিশীল রংয়ে বাটিকের কাপড় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। বেড়েছে চাহিদা ও উৎপাদনও। বাজার তৈরি হয়েছে দেশ ও দেশের বাইরে। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে নান্দনিক এ কাপড়ের বিপণনে আসবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি তেমনি সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান।
/বকুল/