ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

গ্রেপ্তারকৃত সেই নেতাকে আগেই বহিষ্কার করেছিল যুবলীগ

ফেনী সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ৮ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৬:০৮, ৮ নভেম্বর ২০২৩
গ্রেপ্তারকৃত সেই নেতাকে আগেই বহিষ্কার করেছিল যুবলীগ

নুর উদ্দিন টিপু

বিএনপির ডাকা অবরোধ চলাকালে ফেনীর লালপোলে ট্রাকে আগুন দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি নুর উদ্দিন টিপুকে সংগঠন থেকে আগেই বহিষ্কার করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে যুবলীগ। গত ২৭ অক্টোবর এই নেতাকে বহিষ্কার করা হয় বলে গতকাল মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) ফেনী জেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক নিজাম উদ্দিন পাটোয়ারীর সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার (৫ নভেম্বর) রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফেনী মডেল থানায় টিপুকে ডেকে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে উক্ত মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরের দিন সোমবার (৬ নভেম্বর) আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। 

আরও পড়ুন: অবরোধে ট্রাক পোড়ানোর মামলায় যুবলীগ নেতা কারাগারে

ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, নাশকতার ঘটনায় টিপুর গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তার জড়িত থাকার বিষয়ে পুলিশের তদন্ত চলছে।

ফেনী সদর উপজেলা যুবলীগ সভাপতি নুরুল আবছার আপন দাবি করেন, টিপুর বিরুদ্ধে বিরোধী দলের সঙ্গে আঁতাতের তথ্য পাওয়া গেছে। যেকারণে টিপুকে গত ২৭ অক্টোবর সদর উপজেলা যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

টিপুকে ২৭ অক্টোবর দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও তাকে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য কোথাও প্রকাশিত হয়নি কেন এমন  প্রশ্নের উত্তরে নুরুল আবছার আপন বলেন, ‌এটি গোপনীয়তার বিষয় নয়। কেউ জানতে চাইলে আমরা জানিয়েছি। এ বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল। হয়তো ওইভাবে প্রচার হয়নি।

একই প্রসঙ্গে ফেনী জেলা যুবলীগ সভাপতি দিদারুল কবীর রতন বলেন, টিপুকে আরও আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে তা প্রচার করা হলে বিতর্ক তৈরি হত না।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) রাতে জেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক নিজাম উদ্দিন পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বল হয়, গত ২৭ অক্টোবর নুর উদ্দিন টিপুকে যুবলীগের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। 

দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের পরীক্ষিত কর্মী হিসেবে টিপুর নাম শোনা গেলেও হঠাৎ করে বিরোধীদের সঙ্গে আঁতাতের বিষয়টি অস্বাভাবিক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সদর উপজেলা যুবলীগ সভাপতি নুরুল আবছার আপন বলেন, সে ভেবেছে আওয়ামী লীগ হয়তো ফের ক্ষমতায় আসবে না।

টিপুকে গ্রেপ্তারের ঘটনার পেছনে নানা ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। স্থানীয় একাধিক সূত্র দাবি করছে, টিপুর সঙ্গে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আহমেদ মুন্সীর ব্যক্তিগত বিরোধ থাকায় তাকে ষড়যন্ত্র করে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। অন্য একটি সূত্র বলছে, টিপুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনার পর ইউপি চেয়ারম্যান মুন্সীকে ফেনী মডেল থানায় দেখা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, গত ১ অক্টোবর ধলিয়া ইউনিয়নের সোমবারিয়া বাজারে টিপুর হাতে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত হন মুন্সী চেয়ারম্যান। একই সূত্র দাবি করছে, এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে নাটক সাজিয়ে মুন্সী চেয়ারম্যান টিপুকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক সময় টিপু ও মুন্সী- দুজনের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল।গত কয়েক মাস ধরে মুন্সীর সঙ্গে টিপুর মতানৈক্য শুরু হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার আহমেদ মুন্সী বলেন, টিপু আমার নিজের লোক। তার সঙ্গে আমার কখনো দূরত্ব ছিল না। তবে, শুনেছি টিপু সরকার বিরোধীদের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। 

প্রসঙ্গত, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লালপোলে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের শেষ দিনে বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দিবাগত রাত ৪টার দিকে নাম না জানা ১৫-২০ জন রাস্তায় গাছ ফেলে যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়। পরে তারা যানবাহন ভাঙচুর ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় দুর্বৃত্তরা ভাই ভাই ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির চিনি বোঝাই ট্রাকে আগুন দেয়। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ওইদিন ট্রাক মালিক ও ভাই ভাই ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মালিক উজ্জল বৈদ্য বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় ১৫-২০ জনকে নাম না জানা আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

সাহাব/মাসুদ

ঘটনাপ্রবাহ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়