ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

বাঁধের মাটি অবৈধ ইটভাটায়, ঝুঁকিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ

বরগুনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ০৯:৪৭, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
বাঁধের মাটি অবৈধ ইটভাটায়, ঝুঁকিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ

বরগুনার আমতলীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে একটি ইটভাটায়। এর ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাঁধটি। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী গ্রামের এনবিএম ইটভাটার মালিক নুর উদ্দিন ও তার লোকজন মাটি কেটে ইটভাটায় নিচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তারা জানান, জলোচ্ছ্বাসের কারণে যদি বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে তাহলে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ বিপাকে পড়বেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুলিশাখালী গ্রামে ২০১৩ সালে এনবিএম নামের একটি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়। ওই ইটভাটা সংলগ্ন পশ্চিম পাশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ওই বাঁধের মাটি কেটে নুর উদ্দিন ও তার লোকজন ভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও, ইটভাটা সংলগ্ন তিন পাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ইটভাটার ধোঁয়ায় গ্রামের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ জুড়েই ওই ইটভাটার কর্মযজ্ঞ। বাঁধের ওপরে কয়লা, পাকা ইট ও কাঁচা ইট রাখা হয়েছে। আরেক পাশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। এতে বাঁধটি অত্যান্ত নড়বড়ে ও ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রাকৃতিক জ্বলোচ্ছাসে বাঁধ ভেঙ্গে পানি লোকালয়ে প্রবেশের আশঙ্কা এলাকাবাসীর।

ইটভাটার পাশেই থাকেন ঝড়না বেগম ও আসমাসহ কয়েকজন। তারা বলেন, বাঁধের মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রতিদিন। বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত। বন্যা হলে বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করবে। আমদের বিপদ হবে। 

স্থানীয় বাসিন্দা জাফর শরীফ বলেন, ওই ইটভাটার কারণে আমরা অত্যান্ত ঝুঁকিতে বসবাস করছি। ধোঁয়ায় শিশুরা শ্বাসকষ্ট ও হাপানিতে ভুগছে। গাছপালা ও বাড়ি ইটভাটার ধুলোয় একাকার হয়ে গেছে। এই ভাটা বন্ধে করে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, বাঁধ কাটতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু ভাটার মালিক নুর উদ্দিন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন। 

গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, ইটভাটা প্রস্তুত আইন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সব বিধি লঙ্ঘন করে এনবিএম ভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। ওই ইঠভাটা সংলগ্ন ৫০ গজ দূরে তিনদিকে গ্রাম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এক পাশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে । ইটভাটার কর্তৃপক্ষ ওই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে গেছে। এতে বাঁধটি ঝুঁকিতে রয়েছে। আমি ভাটা মালিককে বাঁধের মাটি কাটতে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু তিনি নিষেধ মানছেন না।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আজিজুর রহমান সুজন বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাটি কাটা হচ্ছে বলে এলাকার লোকজন পানি উন্নয়ন বোর্ডে জানিয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশালের উপ-পরিচালক এইচএম রাশেদ বলেন, লোকালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন ইটভাটা নির্মাণ করায় গত বছর এনবিএম নামের ওই ইটভাটার ছাড়পত্র বাতিল করা হয়েছে। এরপরে ওই ভাটা চালু আছে বলে আমার জানা নেই। স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে আমরা তদন্ত করবো। 

ইমরান/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়