ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ফেনীতে গরম ও লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন

মো. সাহাব উদ্দিন, ফেনী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১৭, ২২ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৯:৩১, ২২ এপ্রিল ২০২৪
ফেনীতে গরম ও লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন

ফেনীতে তীব্র গরমের সঙ্গে জনজীবনে ভোগান্তি বাড়াচ্ছে লোডশেডিং। জেলা শহরে তুলনামূলক কম হলেও উপজেলাগুলোতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা তীব্র। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭-৮ ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ থাকছে না গ্রামে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

ফেনী শহরের রামপুর এলাকার বাসিন্দা ও অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে রাত, এমন কোনো সময় নেই যে লোডশেডিং হয় না।  গরমের সঙ্গে ঘন ঘন বিদ্যুৎ না থাকায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে শেষ মুহূর্তে পরীক্ষা প্রস্তুতি ভালোভানে নিতে পারিনি। 

আরো পড়ুন:

ছাগলনাইয়া উপজেলা গতিয়া এলাকার বাসিন্দা একরামুল হক বলেন, জ্বর, কাশ ও নিউমোনিয়া উপসর্গ নিয়ে ৬ মাস বয়সী মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ওয়ার্ডে ৪ গুণ বেশি রোগী থাকছে। রাত-দিন মিলিয়ে ৬/৭ বার লোডশেডিং হয়। গরমে শিশু রোগীরা খুব কষ্ট পাচ্ছে।

দাগনভূঞার আমুভূঞা হাট এলাকার বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, বিদ্যুৎ চলে গেলে হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো অগ্নি কুন্ডলীতে রূপ নেয়। জেনারেটরের সাহায্যে বাতি চললেও ফ্যান চলে না। অতিরিক্ত গরমের কারণে রোগীদের সঙ্গে হাসপাতালে থাকা সুস্থরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। 

মিজান রোডস্থ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে সিডিউল নির্ধারণ করে লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলে আমরা অনেকটা ক্ষতির মুখ থেকে বাঁচতে পারব। গত কয়েকদিন লোডশেডিংয়ের কারণে ভালো সমস্যায় পড়েছি।

একইভাবে লোডশেডিংয়ের কারণে জেলার বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ বন্ধ থাকায় জমিতে সেচ দিতে দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষক।

পরশুরামের বীরচন্দ্র নগর এলাকার শাহআলম নামের এক কৃষক বলেন, ফিডার (একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের আওতাধীন এলাকা) ধরে লোডশেডিংয়ের রুটিন করা হলে দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমতো। এখন মাঠে ফসল আসার সময়। এই মুহূর্তে সেচের প্রয়োজন হলেও লোডশেডিংয়ের কারণে সময়মতো জমিতে পানি দিতে পারছি না।

আবুল কালাম নামে সোনাগাজীর চরচান্দিয়া এলাকার অপর কৃষক বলেন, মোটর দিয়ে জমিতে সেচ দিতে হয়। বারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটে একটানা পুরো জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টি না থাকায় জমি শুষ্ক হয়ে আছে। যার জন্য দুর্ভোগ আরও বাড়ছে।

ফেনী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, রাত্রিকালীন চাহিদার ৪৪ মেগাওয়াটের বিপরীতে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া, দিনের মধ্যে দুপুর বেলায় ৪২ মেগাওয়াটের বিপরীতে ২৭ মেগাওয়াট পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০ শতাংশ লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।

ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার মো. ফজলুর রহমান  বলেন, গড়ে ৭৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে ৫৭ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হচ্ছে। ঘাটতির বাকি বিদ্যুৎ লোডশেডিং দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে।

পল্লী বিদ্যুৎ পরশুরাম জোনাল অফিসের ডিজিএম প্রকৌশলী সনৎ কুমার ঘোষ বলেন, গত একসপ্তাহ ধরে গড়ে ৭৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বাকি বিদ্যুৎ লোডশেডিং দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে।

এদিকে, গতকাল রোববার (২১ এপ্রিল) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় অপ্রয়োজনীয় আলোকসজ্জা পরিহার করে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা।

সভায় ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম বলেন, বিদ্যুৎ অপচয়রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। অপ্রয়োজনীয় আলোকসজ্জা পরিহার করার পাশাপাশি বিভিন্ন বাসা-বাড়ির এসি সারাক্ষণ চালিয়ে না রেখে এক ঘণ্টা চালিয়ে রুম ঠান্ডা করে এসি বন্ধ করে বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করতে হবে। ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাড়তি রাখা হয়েছে।

সভায় ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের সংকট চলছে। জেলায় সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় আলোকসজ্জা বর্জন ও অতিরিক্ত বিদ্যুত ব্যবহার হয় এমন যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখতে হবে। তাহলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমবে।

মাসুদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়