ঢাকা     বুধবার   ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

চর মেঘা দখল করে ফসল লুট, গৃহহীন দেড় শতাধিক কৃষক

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫১, ১৩ মে ২০২৪   আপডেট: ১৬:৫৭, ১৩ মে ২০২৪
চর মেঘা দখল করে ফসল লুট, গৃহহীন দেড় শতাধিক কৃষক

রাসেল খাঁর নেতৃত্বে লোকজনকে চর মেঘা পাহারা দিতে দেখা যায়

লক্ষ্মীপুর-ভোলা জেলার সীমান্তবর্তী চর রমনী মোহন ইউনিয়নের মেঘনা নদীতে জেগে ওঠা দ্বীপ চর মেঘা দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাসেল খাঁর নেতৃত্বে এক দল দস্যুর বিরুদ্ধে। এ সময় ক্ষেতের সয়াবিন লুট করে নিয়ে যায় তারা। কয়েক দিন থেকে দস্যুরা ওই চরে অবস্থান নিয়ে কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। জমির সয়াবিন ও চরের বাড়িঘর হারিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন দেড় শতাধিক কৃষক। 

এর প্রতিকার চেয়ে সোমবার (৬ মে) লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে রুহুল আমিন মাতাব্বর। এতে রাসেল খাঁকে প্রধান করে ২০ জনের নাম উল্লেখসহ ৪০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রুহুল আমিন মাতাব্বর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমনী মোহন ইউনিয়নের সিরাজুল মাতাব্বরের ছেলে।

আরো পড়ুন:

লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর পূর্বে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমনী মোহন ইউনিয়নের চর মেঘা গ্রামের মেঘনা নদীতে চর জেগে ওঠে। যা ওই ইউনিয়নের ২ ও ৩ নং ওয়ার্ড এলাকা বলে জানা যায়। দীর্ঘ সময় ধরে জেগে ওঠা ওই চরে ৫ শতাধিক একর জমিতে ধান ও সয়াবিনসহ বিভিন্ন কৃষি ফসল আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক অসহায় কৃষক। তবে গত ৪/৫ বছর ধরে চরটি দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করছে ভোলা থেকে আসা রাসেল খাঁ, হালিম খা ও মিন্টু খার লোকজন। এ চর দখলকে কেন্দ্র করে শিশুসহ একাধিক হত্যা, গুম, ফসল লুট, চাঁদাবাজি ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় আদালতে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। 

এদিকে, প্রতিবারের ন্যায় চলতি মৌসুমেও সয়াবিনের আবাদ করেন চর মেঘার কৃষকরা। কিন্তু পাকা সয়াবিন তুলতে গেলে বাধে বিপত্তি। গত ৬ মে রাত থেকে দস্যুরা মহড়া দিচ্ছে। পরের দিন ফসল তুলে আনতে গেলে গুলি করে কৃষকদের ধাওয়া দেয়। সয়াবিন কাটতে হলে প্রত্যেক কৃষককে ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হবে। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় চর দখলে নেয় দস্যু বাহিনী। লুট করে নিয়ে যায় কৃষকের ফসল। 

৭ মে চর রমনী ইউনিয়নের মজুচৌধুরীরহাট এলাকা থেকে ট্রলার নিয়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার অদূরে চর মেঘা এলাকার গিয়ে দেখা যায়, বিরোধকৃত ওই চরের প্রবেশ পথে রাসেল খাঁর নেতৃত্বে লোকজন পাহারা দিচ্ছে। রাসেল খার ভাই মিন্টু খার নেতৃত্বে লোকজন মেঘনা নদীতে নৌকায় মহড়া দিচ্ছে। কোনো ট্রলার ওই চরে ভিড়তে চাইলে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এতে নিরীহ কৃষক প্রাণের ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এ সময় তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে গণমাধ্যম কর্মীদের নৌকাও ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

চর মেঘার কৃষক হারিছ সর্দার বলেন, ‘নতুন জেগে উঠা এ চরে চাষাবাদ করতে গেলে রাসেল খার দস্যুরা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেয়ায় আমার হাত-পা ভেঙে পঙ্গু করে দিয়েছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করায় দস্যুরা আমার ছেলে রাকিবকে গলা কেটে হত্যা করে লাশ গুম করে রেখেছে। তাদের ভয়ে শত শত নিরীহ পরিবার বাড়িঘর ছাড়া।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দস্যু বাহিনীর প্রধান রাসেল খা বলেন, ‘চাঁদা দাবি, সয়াবিন লুট ও অস্ত্র প্রদর্শন করে চর দখলের বিষয়টি মিথ্যা। বিরোধীয় ওই চর আমাদের ভোলা জেলার অন্তর্গত। ওখানে আমাদের ৩০০ একর জমি রয়েছে। সেখানে দীর্ঘ দিন ধরে আমরা চাষাবাদ করছি। লক্ষ্মীপুরের কিছু সন্ত্রাসী চরে আমাদের আবাদকৃত সয়াবিন লুট করতে না পেরে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে হয়রানি করছে।’ 

লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহেল রানা বলেন, ‘চর দখল, সয়াবিন লুট ও মারধরের ঘটনার অভিযোগ পেয়েছি। খুব শীঘ্রই ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো দস্যু বাহিনীকে চর দখল কিংবা কৃষকদের ফসল লুট ও ঘর-বাড়ি দখল করতে দেওয়া হবে না।’ 
 

লিটন/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়