ঢাকা     মঙ্গলবার   ২২ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ৬ ১৪৩১

প্রশ্নপত্র ফাঁস

এক বছর আগেই গ্রামের সব সম্পত্তি বিক্রি করেন জাহাঙ্গীর 

গাইবান্ধা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২২, ১০ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ২১:৫৩, ১০ জুলাই ২০২৪
এক বছর আগেই গ্রামের সব সম্পত্তি বিক্রি করেন জাহাঙ্গীর 

প্রশ্নফাঁস কাণ্ডে গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর আলমের গ্রামের বাড়ি

প্রশ্নপত্র ফাঁস কাণ্ডে গ্রেপ্তার হয়েছেন সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব চন্দিয়া গ্রামে। সেখানে বাবার ভাগের যে সম্পত্তি তিনি পেয়েছিলেন, এক বছর আগেই তা বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানান এলাকাবাসী।

আরও পড়ুন: স্ত্রীর কথায় অপকর্ম করতেন নোমান: বড় ভাই 

বুধবার (১০ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের গ্রামের বাড়িতে সুনসান নিরবতা। জাহাঙ্গীরের পৈত্রিক বাড়িটি জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। বাবা ছবির উদ্দিন মন্ডল বেসরকারি চাকরি করতেন খুলনায়। সেখানে থেকেই তিনি অবসরে যান। কয়েক বছর আগে জাহাঙ্গীর আলমের বাবা-মা মারা যান। জাহাঙ্গীর আলমরা চার ভাই ও দুই বোন। বাড়িতে এখন তেমন কেউ থাকেন না।

আরো পড়ুন:

গ্রামবাসী জানান, জাহাঙ্গীর আলমের ডাক নাম ফুয়াদ। স্থানীয়রা তাকে ফুয়াদ নামেই বেশি চেনেন। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট জাহাঙ্গীর। বড় ভাই ফারুক মন্ডল সরকারি চাকরি করতেন। তিনি মারা গেছেন। অপর ভাই সাইফুল ইসলাম শিবলি সোনালী ব্যাংকে চাকরি করতেন। অবসরের পর তিনি এখন গাইবান্ধা শহরে জায়গা কিনে সেখানেই বাড়ি করে থাকছেন। অপর ভাই মোহাম্মদ পটু মন্ডলও মারা গেছেন। জীবিতকালে তিনি গ্রামে থাকতেন। জাহাঙ্গীর আলমের দুই বোন মালা এবং মুক্তা স্বামীর বাড়িতে থাকেন।

আরও পড়ুন: গ্রামে অসমাপ্ত ডুপ্লেক্স বাড়ি ছাড়া কিছুই নেই আবু জাফরের

ছোট বেলা থেকে মেধাবী ছাত্র ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। কঞ্চিপাড়া এম এ ইউ একাডেমি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ভালো রেজাল্ট করে গাইবান্ধা সরকারি কলেজে ভর্তি হন তিনি। সেখানে থেকে এইচএসসি, অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করেন তিনি। এরপর ঢাকায় চলে যান। গ্রামে এলেই তিনি সবাইকে ডাকতেন। হালাল উপার্জনের পাশাপাশি নামাজ পড়তে বলতেন। সেই মানুষটাই যে এত বড় অপরাধের সঙ্গে জড়িত সেটা আমরা কল্পনাও করতে পারছি না।

আরও পড়ুন: ‘‌দানবীর’ হলেও ভাইদের জন্য কিছু করেননি আবেদ আলী

জাহাঙ্গীর আলমের গ্রামের বাড়িতে কাজ করেন লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, ‘গ্রামের বাড়িতে বাবার কাছ থেকে ভিটেমাটির যা ভাগ পেয়েছিলেন, এক বছর আগেই তা দুই কোটি টাকায় বিক্রি করে গেছেন জাহাঙ্গীর আলম। শুনেছি ঢাকায় তিনি ফ্ল্যাট কিনেছেন। সেখানেই ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকেন। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় তার গ্রেপ্তার হওয়ার খবর শুনে আমরা লজ্জায় পড়েছি।’ 

জাহাঙ্গীর আলমের প্রতিবেশি ফরিদা বেগম বলেন, ‘গ্রামের ছেলে-মেয়েদের চাকরির জন্য কিছুই করেননি জাহাঙ্গীর আলম। অথচ অন্য জেলার ছেলে-মেয়েদের তিনি চাকরি নিয়ে দিয়েছেন। গ্রামের সব জমি-জমা বিক্রি করে এত টাকা দিয়ে তিনি কী করেছেন আল্লাহ ভালো জানেন।’ 

আরও পড়ুন: আবেদ আলীর ছেলেকে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামের কারোও বিয়ে হলে কিংবা গ্রামের কারও কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে জাহাঙ্গীর আলম পাশে দাঁড়াতেন। শীতকালে তিনি কম্বল দিয়েছেন। এই দিক দিয়ে তিনি খুব ভালো ছিলেন। তার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। ছেলে এবার এইচএসসিতে পড়ছে। মেয়ের এক বছর আগে ময়মনসিংহের এক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে।’ 

প্রশ্নফাঁস কাণ্ডে জাহাঙ্গীর আলম গ্রেপ্তার হয়েছেন এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কীভাবে তিনি এসব কাজ করেছেন জানি না। তার মনের রহস্য তো আমরা বলতে পারবো না।’

আরও পড়ুন: হোটেল-গাড়ির মালিক ড্রাইভার আবেদ আলী, চেয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান হতে

কঞ্চিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোহেল রানা সালু বলেন, ‘লোক হিসেবে তিনি (জাহাঙ্গীর আলম) খুবই ভদ্র প্রকৃতির ছিলেন। তিনি গ্রামের বাড়িতে কিছুই করেননি। তিনি গ্রামে নিজের ভাগের সবকিছু বিক্রি করেছেন। তিনি উত্তরাঞ্চলের মানুষ হলেও গ্রামের মানুষের জন্য কিছুই করেননি। একটা চাকরির সুপারিশ পর্যন্ত করেননি। শুনেছি, অন্য এলাকার অনেককে তিনি চাকরি নিয়ে দিয়েছেন।’ 

আরও পড়ুন: আবেদ আলী আমার গাড়িচালক ছিলেন না: ড. সাদিক

কারাগারে যাওয়ার আগে আবেদ বললেন ‘শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি বিয়ে করতে’

আবেদ আলীসহ ৬ জনের স্বীকারোক্তি, একজনের অস্বীকৃতি

প্রশ্নপত্র ফাঁস: ১০ আসামি কারাগারে

আবেদ আলীসহ ৭ আসামির জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন

পিএসসির তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৭ আসামি আদালতে

পিএসসির ৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ গ্রেপ্তার ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

প্রশ্নফাঁস: গাড়িচালক আবেদ আলীসহ গ্রেপ্তার ১৭

মাসুম/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়