ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মানুষ এখনো পানিবন্দি

পাঠদান শুরু করা যায়নি বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৬:৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
পাঠদান শুরু করা যায়নি বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

প্রায় দেড় মাসেও বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি লক্ষ্মীপুর জেলার পূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ বাসিন্দা। জেলায় এখনো ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষ (সাড়ে ৫ লাখের বেশি) বন্যার পানিতে বন্দী। এসব এলাকার ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে থাকায় আশ্রয় কেন্দ্র থেকে নিজ বাড়িতে ফিরতে পারছেন না অনেকেই। এছাড়াও শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গত রোববার থেকে পুরোপুরি চালু করার উদ্যোগ নিলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় গ্রহণকারী মানুষগুলো বাড়িতে ফিরতে না পারায় এবং অধিকাংশ রাস্তাঘাট, বিদ্যালয়ের মাঠ পানির নিচে তলিয়ে থাকায় বিদ্যালয় চালু ও পাঠদান করা সম্ভব হচ্ছে না। 

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে ৭৩২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনো পানির নিছে ডুবে আছে। ৮৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনো বন্যা কবলিত মানুষ বসবাস করছে। বিদ্যালয়ের মাঠ এবং শ্রেণীকক্ষ, পার্শ্ববর্তী রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে থাকায় এখনো জেলার অর্ধেকেরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু করা যায়নি। কবে নাগাদ জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি চালু করা যাবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ মজুমদার।

এদিকে জেলার কতটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজে পাঠদান শুরু করা হয়েছে সে তথ্য জানাতে পারেনি জেলা শিক্ষা অফিস। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলা শহরসহ জেলার অর্ধেকের বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গত রোববার থেকে পাঠদান শুরু করার লক্ষ্যে খোলা হলেও ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি সন্তোষজনক নয়। 

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার জামিরতলী আলিম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল নাসির উদ্দিন আল কামাল জানান, তার প্রতিষ্ঠানে অর্ধেকের বেশি ছাত্র-ছাত্রী অনুপস্থিত রয়েছে। এলাকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানির নিচে থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা মাদ্রাসায় আসতে পারছে না।

সদর উপজেলার হাজিরপাড়া হামিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ে এখনো বন্যার্ত মানুষ বসবাস করায় খুলা সম্ভব হচ্ছে না। 

লক্ষ্মীপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ইউনুস মিয়া জানান, বন্যার পানি কমলেও পরবর্তী বৃষ্টিপাতের কারণে পানি আবার বেড়েছে। বর্তমানে ৩০ শতাংশের বেশী মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। এখনো ৫ হাজার ৩০০ মানুষ অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাস করছে। আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাসকারী মানুষদেরকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, জেলার সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন এবং কমলনগর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। পানি ধীরে নামার কারণে বন্যা পরিস্থিতির কাঙ্খিত উন্নতি হচ্ছে না। 

রামগতি কমলনগর নদী ভাঙন প্রতিরোধ আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পলোয়ান জানান, জেলার ভুলুয়া নদীসহ অধিকাংশ খাল এবং নালা দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার ও দখলমুক্ত না করায় বর্তমানে বন্যার পানি নামতে পারছে না। ফলে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। ভুলুয়া নদীসহ জেলার খালগুলো দখলমুক্ত করার জন্য ইতিমধ্যে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনকে নদী এবং খালগুলো দখলমুক্ত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও বর্তমানে জেলার ভুলুয়া নদী ও খালগুলো দখলমুক্ত করার জন্য কমলনগর ও রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তার নেতৃত্বে শত শত স্বেচ্ছাসেবক দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। 

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মনোহরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাসকারী মোহাম্মদ আলী আকবর জানান, তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে গেলেও গত শুক্রবার ও শনিবারের বৃষ্টিতে তার বসত ঘর আবার পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় আবারো আশ্রয় কেন্দ্রে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তার মতো আরো কয়েকজন আশ্রয় কেন্দ্রে ফিরে এসেছেন।

বর্তমানে জেলার অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ কোন কাজ না থাকায় এবং আয় রোজগারের অভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবতা জীবন যাপন করছেন। 

লক্ষ্মীপুরের নবাগত জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বৃহস্পতিবার রাইজিংবিডিকে জানান, জেলায় এখনো ৩০ শতাংশ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে ক্ষতির প্রতিবেদন চেয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। পানিবন্দিদের ত্রাণসহ বিভিন্ন সহায়তায় প্রশাসন মাঠ পর্যায়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

জাহাঙ্গীর/ইমন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়